সাগরের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে ২৪ জুলাই। নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগরে নেমে ভালোই ইলিশ পাচ্ছেন জেলেরা।
দক্ষিণাঞ্চল থেকে একদিনেই তিন হাজার মণের বেশি ইলিশ আমদানি হয়েছে চাঁদপুরের মাছঘাটে। যে কারণে মাছঘাটের ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের ব্যস্ততাও বেড়েছে। তবে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীর ইলিশের চাহিদা থাকলেও আমদানি তুলনামূলক কম। বেশি দাম দিয়ে ইলিশের স্বাদ নিতে হচ্ছে ক্রেতাদের। সাগরের ইলিশের আমদানি আরও কয়েক মাস থাকবে বলে জানালেন ব্যবসায়ীরা।
২৫ জুলাই সোমবার দুপুরে শহরের বড়স্টেশন মাছঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, সাগর থেকে বড় বড় ট্রলার মাছঘাটে এসে ভিড়েছে। ট্রলার থেকে ইলিশগুলো তোলা হচ্ছে আড়তে। অর্ধশতাধিক আড়তের সামনে স্তূপ করা হচ্ছে। বড় এবং ছোট সাইজের ইলিশ আলাদা করে হাঁকডাক দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
জেলার ভেতরে এবং বিভিন্ন জেলা থেকে আসা পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা এসব ইলিশ কিনছেন। এছাড়া মাছঘাটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ইলিশ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। বিক্রি হওয়া ইলিশ প্যাকেট ও বক্স করে ট্রাকে করে পাঠানোর জন্য বরফ দিয়ে প্রস্তুত করছেন শ্রমিকরা। ইলিশের সঙ্গে জড়িত সব শ্রমিকই এখন খুবই ব্যস্ত সময় পার করছেন।
মাছঘাট ঘুরে দেখা গেছে, পাইকারির পাশাপাশি খুচরা ইলিশও বিক্রি করছেন কিছু ব্যবসায়ী। এর মধ্যে স্থানীয় ইলিশই বেশি। কারণ চাঁদপুর মাছঘাটে ইলিশের জন্যই বেশি আসেন ক্রেতারা।
ঢাকা থেকে সোমবার সকালে লঞ্চ করে চাঁদপুর মাছঘাটে ইলিশ কিনতে নামেন পাঁচ যুবক। তাদের মধ্যে শিপন ও আরিফুর রহমান মামুন বাংলানিউজকে বলেন, ইলিশ পেয়েছি এবং বরফ ছাড়া। তবে দাম বেশি। এক কেজি ওজনের ইলিশ কিনেছি ১৭শ’ টাকা করে এবং দুই কেজি ওজনের ইলিশের দাম নিয়েছে ২২শ’ টাকা করে।
চাঁদপুর শহরের আরেক ক্রেতা মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, মাছঘাটে অনেক ইলিশ। তবে দাম অনেক চড়া। এক কেজি ওজনের ইলিশ সাগরের ১৪শ’ টাকা কেজি এবং নদীর হলে ১৭শ’ টাকা কেজি। আর দুই কেজি ওজনের ইলিশ ২৭শ’ টাকা থেকে শুরু করে ৩২শ’ টাকা পর্যন্ত চাওয়া হচ্ছে।
ঘাটের বেশ কয়েকজন খুচরা ইলিশ বিক্রেতা বলেন, লোকাল ইলিশ বিক্রি করি। আমাদের কাছে দেড় কেজি থেকে শুরু করে দুই কেজি ওজনের ইলিশ আছে। দেড় কেজির ওপরের ইলিশ প্রতি কেজি ১৮শ’ ৫০ টাকা। ৭শ’ থেকে ৮শ’ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১৪শ’ টাকা কেজি। তবে ঘাটে ইলিশের যে বড় বড় স্তুপ আছে, অধিকাংশ সাগরের। লোকাল ইলিশ কম ধরা পড়ছে।
মাছঘাটের শ্রমিক নিজাম বন্দুকশী বলেন, গত কয়েকদিন মাছের আমদানি কম ছিল। তখন দৈনিক আয় ছিল ২শ’ থেকে ৩শ’ টাকা। আজ দু’দিন আয় হচ্ছে কমপক্ষে হাজার টাকা করে।
চাঁদপুর মৎস্য ও বণিক সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান ভুঁইয়া কালু বলেন, আমরা এখন সাগরের ইলিশের ওপর নির্ভরশীল। গত তিনদিন আগেও মাছঘাট ফাঁকা ছিল। নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার কারণে ইলিশের আমদানি বেড়েছে। আমার জানা মতে আজ প্রায় তিন হাজার মণের বেশি ইলিশ আমদানি হয়েছে।
তিনি বলেন, এখন ইলিশের মৌসুম। আগে এ সময়ে চাঁদপুরের ইলিশের আমদানি ছিল অনেক বেশি। নদীর নাব্য সংকট, ড্রেজার দিয়ে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন এবং নদীতে দূষণের কারণে এখন খুব কম ইলিশ পান জেলেরা। তারপরও প্রতিদিন চাঁদপুর নৌ-সীমানায় কমপক্ষে হাজার মণ ইলিশ ২ শতাধিক আড়তে পাইকারি ও খুচরা বিক্রি হয়।
সমিতির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শবে বরাত বলেন, ২৩ জুলাই নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে। রোববার থেকেই সাগরের ইলিশের ভালো আমদানি আছে। গতকাল প্রায় ২ হাজার মণের ওপরে ইলিশ চাঁদপুর মাছঘাটে বিক্রি হয়েছে। গভীর সমুদ্রের মাছ হওয়ার কারণে অধিকাংশ ইলিশের সাইজ ছোট। ৪শ’, ৫শ’ ও ৬শ’ গ্রাম ওজনের ইলিশই বাজারে বেশি। এগুলো প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ২২ হাজার থেকে ২৪ হাজার টাকায়। মৌসুম হওয়ায় আশা করছি, আরও দুই মাস বেশ ভালোই ইলিশ পাওয়া যাবে।
চাঁদপুর করেসপন্ডেট, ২৫ জুলাই ২০২২