আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে পশুর হাটে একটি পশু কিনতে দুজনের বেশি প্রবেশ করা যাবে না। এজন্য হাট কমিটির প্রতি নির্দেশনা ও পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাব থেকে কোরবানির পশুর হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাসহ কোরবানিকালীন সংশ্লিষ্ট সকলকে নিরাপদ রাখতে মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে এ বিষয়ে একটি নির্দেশিকা বা গাইডলাইন প্রস্তুত করা হয়েছে।
গাইডলাইনে হাট কমিটির প্রতি ১৬ দফা, ক্রেতা-বিক্রেতাদের জন্য ছয় দফা এবং পশু কোরবানিকালীন সময়ের জন্য দুই দফা নির্দেশনা জারি করা হয়।
সোমবার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের (জনস্বাস্থ্য শাখা) উপসচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এ নির্দেশিকা বা গাইডলাইন জারি করা হয়।
হাট কমিটির জন্য নির্দেশনা
হাট বসানোর জন্য পর্যাপ্ত খোলা জায়গা নির্বাচন করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই বন্ধ জায়গায় হাট বসানো যাবে না। হাট ইজারাদার কর্তৃক হাট বসানোর আগে মহামারি প্রতিরোধসামগ্রী (যেমন-মাস্ক, সাবান, জীবাণুমুক্তকরণ সামগ্রী ইত্যাদি) সংগ্রহ করতে হবে। পরিষ্কার পানি সরবরাহ ও হাত ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ তরল সাবান বা সাধারণ সাবানের ব্যবস্থা রাখতে হবে। নিরাপদ বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
পশুর হাটের সঙ্গে জড়িত সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী ও হাট কমিটির সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। হাট কমিটির সবার ব্যক্তিগত সুরক্ষা জোরদার করা এবং মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। জনস্বাস্থ্যের বিষয়গুলো যেমন-মাস্কের সঠিক ব্যবহার, হাঁচি-কাশি শিষ্টাচার, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, হাত ধোয়া এবং জীবাণুমুক্তকরণ বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি সমূহে সার্বক্ষণিক মাইকে প্রচার করতে হবে।
মাস্ক ছাড়া কোনো ক্রেতা-বিক্রেতা হাটের ভেতরে প্রবেশ করতে পারবেন না। হাট কর্তৃপক্ষ চাইলে বিনামূল্যে মাস্ক সরবারহ করতে পারবেন বা এর মূল্য নির্ধারণ করে দিতে পারবেন। প্রতিটি হাতে সিটি করপোরেশন কর্তৃক ডিজিটাল পর্দায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি প্রচার করতে হবে। পশুর হাটে প্রবেশের গেট (প্রবেশপথ ও বের হওয়ার পথ) নির্দিষ্ট করতে হবে।
পর্যাপ্ত পানি ও ব্লিচিং পাউডার দিয়ে পশুর বর্জ্য পরিষ্কার করতে হবে। কোথাও জলাবদ্ধতা তৈরি করা যাবে না। প্রতিটি হাটে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক এক বা একাধিক ভ্রাম্যমাণ স্বেচ্ছাসেবী মেডিকেল টিম গঠন করে সেবা প্রদানের ব্যবস্থা করা যাবে। মেডিকেল টিমের কাছে তাপমাত্রা মাপার জন্য ডিজিটাল থার্মোমিটার রাখা যেতে পারে যাতে প্রয়োজনে হাটে আসা সন্দেহজনক কোনো আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত চিহ্নিত করা যায়। এছাড়া তাৎক্ষণিকভাবে রোগীকে আলাদা রাখার জন্য প্রতিটি হাটে একটি আইসোলেশন ইউনিট (একটি আলাদা কক্ষ) রাখা যেতে পারে।
একটি পশু থেকে আরেকটি পশু এমনভাবে রাখতে হবে যেন ক্রেতারা কমপক্ষে দুই হাত দূরত্ব বজায় রেখে পশু ক্রয় করতে পারেন। ভিড় এড়াতে মূল্য পরিশোধ ও হাসিল নেয়া কাউন্টারের সংখ্যা বাড়াতে হবে। মূল্য পরিশোধের সময় সারিবদ্ধভাবে লাইনে দাঁড়ানোর সময় দুই হাত দূরত্বে রেখে দাঁড়াতে হবে। প্রয়োজনে রেখা টেনে বা গোল চিহ্ন দিয়ে দিতে হবে।
সকল পশু একত্রে হাটে প্রবেশ না করিয়ে হাটের ধারণক্ষমতা অনুযায়ী পশু প্রবেশ করাতে হবে। নির্দিষ্ট সংখ্যক ক্রেতাকে প্রবেশের সুযোগ দিতে হবে। অবশিষ্ট ক্রেতারা হাটের বাইরে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে অপেক্ষা করবেন। একটি পশু ক্রয়ের জন্য এক বা দুইজনের বেশি ক্রেতা হাটে প্রবেশ করবেন না।
অনলাইনে পশু কেনাবেচার জন্য জনগণকে উৎসাহিত করা যেতে পারে। স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে সকল কাজ নিশ্চিত করতে হবে।
ক্রেতা ও বিক্রেতাদের জন্য নির্দেশনা
ক্রেতা-বিক্রেতা সবাইকে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। সর্দি, কাশি, জ্বর বা শ্বাসকষ্ট নিয়ে কেউ হাটে প্রবেশ করবেন না। শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থরা হাটে আসতে পারবেন না। পশুর হাটে প্রবেশের পূর্বে ও বের হওয়ার সময় তরল সাবান বা সাধারণ সাবান এবং পানি দিয়ে হাত ধৌত করতে হবে। মূল্য প্রদান এবং হাটে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় কমপক্ষে দুই হাত দুরত্ব বজায় রেখে লাইনে দাঁড়াতে হবে। হাট কমিটি, স্থানীয় প্রশাসন, সিটি করপোরেশন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং স্বাস্থ্য বিভাগের সকল নির্দেশনা যথাযথভাবে পালন করতে হবে।
পশু কোরবানিকালীন নির্দেশনা
পশু কোরবানির সময় প্রয়োজনের অধিক লোকজন একত্রিত হবেন না এবং কোরবানির মাংস সংগ্রহের জন্য একত্রে অধিক লোক চলাফেরা করতে পারবেন না। পশুর চামড়া দ্রুত অপসারণ করতে হবে। কোরবানির নির্দিষ্ট স্থানটি বেকিং পাউডার দিয়ে ভালোভাবে জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে।
বার্তা কক্ষ, ১৬ জুলাই ২০২০