একটিমাত্র ট্রলি ও হুইল চেয়ার দিয়ে চলছে চাঁদপুর সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা

চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগ হতে শুরু করে বিভিন্ন ওয়ার্ডে রোগী বহন এবং মৃতদেহ নামানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজে ভরসা বলতে একটিমাত্র ট্রলি ও একটি হুইল চেয়ার।  যার কারণে প্রতিদিনই রোগী ও স্বজনদের পড়তে হচ্ছে দীর্ঘ অপেক্ষা ও চরম ভোগান্তিতে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে কিছু নার্সের অমনোযোগী আচরণ ও সহযোগিতার অভাব, যা রোগী ও স্বজনদের হতাশা আরও বাড়িয়ে তুলছে।

জানা যায়,  দীর্ঘদিন ধরে চাঁদপুর সরকারি হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ওয়ার্ডে রোগী বহন, লাশ নামানো বা দ্রুত সেবা দেওয়ার মতো জরুরি কাজে ব্যবহৃত ট্রলিগুলো অনেকটাই ভাঙা ও অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। দেখভাল ও রক্ষণাবেক্ষণের কোনো তদারকি নেই বললেই চলে। ফলে হাসপাতালে নামে মাত্র একটি কার্যকর ট্রলির ওপরই পুরো চিকিৎসাসেবা ও জরুরি পরিবহন ব্যবস্থা নির্ভর করছে। চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে ওয়ার্ড বয় ও কর্মচারীরাও পড়ছেন চরম বেকায়দায়, আরো বেশি কষ্ট পেতে হচ্ছে রোগী ও তাদের স্বজনদের, যাদেরকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। কারন একটি টলি দিয়ে ৪ তলা কিংবা তিন তলা থেকে রোগী নামিয়ে বা উঠানোর পর। আবার পুনরায় অন্যরোগীকে বহন করতে হয়। শুধুমাত্র একটি ট্রলির জন্য রোগীদের এমন ভোগান্তি। সরকারি হাসপাতালের মতো এমন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় এমন অবস্থায় রোগী সেবার মান প্রশ্নের মুখে পড়ছে, বাড়ছে ক্ষোভ ও হতাশা।

সরজমিনে দেখা গেছে, গত ২৮ জুলাই সোমবার রাতে মতলব দক্ষিণ উপজেলার ঘোড়াধারি গ্রামের আশরাফ খান নামের এক রোগীর মৃত্যু হলে, তার লাশ নামানোর জন্য স্বজনদের প্রায় ৪০ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। ওয়ার্ড বয়দেরকে ট্রলির কথা জিজ্ঞেস করলে তারা জানান, অন্যান্য ওয়ার্ডের ট্রলির চাকা ভাঙ্গা বা অন্য সমস্যা থাকায় একটিমাত্র ট্রলিতেই বহন করতে হচ্ছে রোগী কিংবা মৃতদেহ। যার কারনে টলির জন্য এই দীর্ঘ অপেক্ষা করতে গিয়ে ভোক্তভোগীদের শোকের মধ্যে নতুন করে কষ্টের কারণ হয়।

মৃত রোগীর ছেলে আল-আমিন খান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দুপুরে বাবাকে অনেক ভালো অবস্থায় হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ডে ভর্তি দেই। আমি দুপুরে বাড়িতে গিয়ে সন্ধ্যায় এসে দেখি আমার বাবাকে নার্সরা তেমর সেবা দিচ্ছেনা। একটি কথা তাদের বার বার বললেও তারা তেমন গুরুত্ব দেয়নি। আমি ডাক্তারের কাছে ফাইল নিয়ে যেতে যেতে রাতে বাবার মৃত্যু হলে লাশ নামাতে গিয়ে অনেকক্ষণ টলির জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে।

ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা এক নারী রোগীর স্বামী শাহাদাত হোসেন জানান, রোগীর সমস্যা বেড়ে গেলে ওয়ার্ডবয়দের ডাকি, কিন্তু তারাও বলে টলি ব্যস্ত আছে। নার্সদেরও বলি, তারা তখনও বলেন, অপেক্ষা করেন। এমন সময় দেরি হলে তো বড় ক্ষতি হতে পারে।

আরেকজন বৃদ্ধ রোগী জমির উদ্দিন ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, আমার কোমরে প্রচণ্ড ব্যথা। এক ওয়ার্ড থেকে আরেক ওয়ার্ডে যেতে প্রায় আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করেছি ট্রলির জন্য। এত বড় হাসপাতালে একটা টলি, এটা কীভাবে চলে?

এখানেই শেষ নয় রোগী ও স্বজনরা অভিযোগ করেছেন, রোগীর অবস্থার অবনতি হলে নার্সদের জানানো হলেও অনেকে তৎক্ষণাৎ ছুটে আসেন না বা আগ্রহ দেখান না। এমন আচরণে রোগীদের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্বজনরা।

এক রোগীর স্বজন বলেন, আমার বোনের শ্বাসকষ্ট বেড়ে গিয়েছিল, নার্সদের বলার পরও তারা আসতে অনেক দেরি করে। এমন অমনোযোগী আচরণে আমরা খুবই অসহায় বোধ করি। হাসপাতালের কয়েকজন ওয়ার্ডবয়ও স্বীকার করেছেন, রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি, কিন্তু সরঞ্জাম খুবই সীমিত। একটি ট্রলি আর একটি হুইল চেয়ারে প্রতিদিনের সব রোগী বহন, লাশ নামানো, সব সম্ভব হয় না, বলেন এক ওয়ার্ডবয়।

এ বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে কথা হলে, তারা জানান, আমাদের সবক’টি ওয়ার্ডে আমাদের আলাদা আলাদা ট্রলি রয়েছে। কিন্তু বাস্তব চিত্র দেখা গেলো ভিন্ন। খবর নিয়ে দেখা যায়, দোতলা বা অন্য ওয়ার্ডে থাকা একটিমাত্র ট্রলিতেই চলছে হাসপাতালে রোগী বহনের চিকিৎসাসেবা। এর সাথে একটিমাত্র হুইল চেয়ার যা স্বীকার করেছেন, টলিতে করে রোগী বহনকারী ওয়ার্ডবয়রাও।

স্থানীয় সচেতন নাগরিকরা বলেন, জেলার প্রধান এই হাসপাতালটিতে প্রতিদিন কয়েক শতাধিক রোগী ভর্তি ও সেবা নিতে আসেন। সেই তুলনায় যন্ত্রপাতি ও মানবসম্পদ অপ্রতুল। এ অবস্থায় নতুন কয়েকটি ট্রলি, হুইল চেয়ার এবং নার্সদের আচরণে দায়িত্বশীলতা ও মানবিকতা বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন তারা।

রোগী ও স্বজনদের প্রত্যাশা, খুব শিগগিরই এই সমস্যাগুলোর সমাধান হবে এবং সরকারি হাসপাতালে সেবা নেওয়া মানুষের ভোগান্তি কমবে।

প্রতিবেদক: কবির হোসেন মিজি, ৩০ জুলাই ২০২৫