গত কয়েকদিন ধরে শরীরটা ভালো যাচ্ছিল না। গতকাল সকালে রক্ত পরীক্ষা করতে হাসপাতালে যাব ভেবে বের হলাম। দখিণ হাওয়ার দারোয়ান কিছুতেই আমাকে বের হতে দিতে চাইছিল না!
ওহ আচ্ছা- বলে রাখা ভালো আমি ধানমন্ডি ৩/এ তে থাকি। গত শুক্রবার থেকে আওয়ামী লীগ এর নমিনেশন ফর্ম সংগ্রহ করার যে উৎসব- আমি তার প্যাঁচে পড়ে গেছি। আমার বাসস্থান আওয়ামী লীগ অফিসের উল্টোদিকে হওয়ায় নমিনেশন উৎসবের আঁচ খুব প্রবলভাবেই টের পাচ্ছি।
পরশু যেমন একটা অনুষ্ঠানে যাবার জন্য শাড়ি পরে তৈরী হয়েছি। আমাদের গলিতে গাড়ি নিয়ে তো আর চলা যাচ্ছিল না! তাই মেইন রোড পর্যন্ত হেঁটে রওনা দিতেই আশেপাশে গুঞ্জন শুনতে পেলাম- “ঐ দেখ দেখ! হুমায়ূন আহমেদ এর বউ নমিনেশন পেপার নিতে আসছে!”
ভাগ্যিস ধারে কাছে কোনো ‘ডট কম’ জাতীয় অনলাইন সংবাদপত্র ছিল না! তাহলে চিপায় একখান সংবাদের শিরোনাম হয়ে যেতাম!
‘আওয়ামী লীগ অফিসে গিয়ে এ কি করলেন শাওন! (দেখুন ভিডিও সহ)’
যাই হোক বকর বকর না করে মূল গল্পে ফিরে যাই।
আজ দখিণ হাওয়ার দারোয়ান চাচা আমাকে হেঁটে বের হতে দিবেনই না পণ করেছেন! নানা ফাঁক ফোকর গলে একখানা রিক্সা যোগাড় করে আনলেন। গলা নামিয়ে রিকশাচালককে বললেন- “কোনো চ্যাংড়া পুলা রাস্তা আটকাইলে বলবা ম্যাডাম আম্মা নৌকার লোক।”
তরতরিয়ে রিকশা নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। কেউ আটকালো না। সকাল ৮ টা বেজে ৪৫ মিনিট। পার্টি অফিসের সামনে ছোট ছোট জটলা। ভিড় এখনো বাড়েনি। একজন চা বিক্রেতাকে দেখে চেনা চেনা লাগল! পাশ দিয়ে আমার রিকশা যেতেই লম্বা এক সালাম ঠুকে বসল। ‘স্লামালিকুম শাওন ম্যাডাম।’ অবাক বিস্ময়ে আমি চাওয়ালাকে চিনে ফেললাম! অন্যপ্রকাশের স্বত্বাধিকারী, আমার প্রতিবেশী মাজহার ভাইয়ের ড্রাইভার! গতকালই স্বর্ণা ভাবীর কাছে শুনেছিলাম ২ দিনের ছুটি নিয়েছে তাদের ড্রাইভার। ‘শইল্যে বেদনা’ এই কারণ দেখিয়ে! এখন দেখি সে চা এর ব্যবসা ধরে ফেলেছে!
আমি চলন্ত রিকশা থেকে তাকে জিজ্ঞেস করলাম- “আপনার না শইল্যে বেদনা! এখানে কি করেন!”
সে মুচকি হেসে জবাব দিল- “চা বানাইয়া বেচতে তো ম্যাডাম সারা শইল লাগে না, ডাইন হাতই যথেস্ট। একটু সিজনাল ব্যবসার টেরাই নিয়া দেখলাম।”
তার এই উদ্যমে তাকে ‘ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা’ বলা যায় কিনা ভাবতে ভাবতে স্কয়ার হাসপাতাল পৌঁছে গেলাম।
অনেক হুলুস্থুল করে, খালিপেটে একবার রক্ত নিলেন তারা। তারপর গ্লুকোজ গুলানো পানি গিলিয়ে দিলেন জোর করে! ২ ঘণ্টা পর ঝিমঝিম করা মাথা আর পেট ভরা ক্ষুধা নিয়ে নানান সাইজের ১০/১২ টিউব রক্ত দিয়ে রিকশা করে বাসায় ফিরছি। ৩/এ রোড়ের মুখে এসে আটকে পড়লাম! কিছুতেই ভেতরে যাওয়ার উপায় নেই। রিকশা, গাড়ি তো নয়ই- হেঁটে যাওয়াও অসম্ভব! কিন্তু আমারে তো চেন না চান্দু!!! আমি রিকশা থেকে নেমে হাঁটা শুরু করলাম। কি কপাল আমার ২০/২৫ জনের একটা দলের ভিতরে পড়ে গেলাম। তারা আমাকে ঘিরে সজোরে বাদ্য বাজনা বাজাচ্ছে আর এফ শার্পে গলা চড়িয়ে স্লোগান দিচ্ছে-
“শাওন ভাইয়ের সালাম নিন
নৌকা মার্কায় ভোট দিন।”
“মোদের আসনে কাকে চাই?
শাওন ভাই শাওন ভাই…”
আমি বাকরুদ্ধ!!! চুলগুলো না হয় একটু ছোট করেই কেটে ফেলেছি! তাই বলে একেবারে ভাই!!! শাওন ভাই!!! এর মধ্যে ২ জন এসে আমার গায়ে একটি ব্যাজ পরিয়ে দিল! একজন গলায় একটা লাল-সবুজ উত্তরীয়র মতো কিছু একটা ঝুলিয়ে দিল! কোথা থেকে যেন আমার হাতে একটা প্ল্যাকার্ডও চলে আসলো! আমি নিজেও দলের সবার সাথে তাল মিলিয়ে স্লোগান দিতে শুরু করলাম…
“শাওন ভাইয়ের সালাম নিন
নৌকা মার্কায় ভোট দিন।”
প্রবল উত্তেজনায় ১০/১২ বার স্লোগান দেয়ার পর হাতের প্ল্যাকার্ডে চোখ পড়ল। দেখি সৌম্য চেহারার কাঁচুমাচু এক ভদ্রলোক- ‘সোহান ভাই’! আর আমি কিনা ক্ষুধা পেটে, চোখ-কানের মাথা খেয়ে বানিয়ে ফেললাম ‘শাওন ভাই’! দলের সাথে আরো কিছুক্ষণ সোহান ভাইয়ের জন্য স্লোগান দিতে দিতে জনস্রোতের ধাক্কায় এগোতে থাকলাম। মনের মধ্যে ক্ষীণ আশা এই ধাক্কায় আমি হয়তো বাসায় পৌঁছে যাব। কিন্তু হায়! জনস্রোত আমাকে দখিণ হাওয়ার পাশের বিল্ডিংএ ঢুকিয়ে দিলো।
এরপর কি হলো তা নিয়ে আরেকদিন বলবো। কারণ উপরের গল্পটার ৯৯ ভাগই বানানো ঘটনা… আমার কল্পনাপ্রসূত! (ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
বার্তা কক্ষ
১৬ নভেম্বর, ২০১৮