কামরুন্নাহার মনি। তার অনাগত সন্তানের বয়স পাঁচ মাস। নুসরাত হত্যা মামলায় কিলিং মিশনে সরাসরি অংশ নেয়া মনি সব অপরাধ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে তিনি তার গর্ভে সন্তানের বয়স পাঁচ মাস বলে জানিয়েছেন। ২০ এপ্রিল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি শেষে তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
গর্ভে সন্তান ধারণ করে এরকম একটি নৃশংস হত্যাকাণ্ডে জড়ানোয় ফেনীতে সকল মানুষের মধ্যে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
ফেনীর ফরিদা ইয়াছমিন নামে এক নারীকর্মী বলেন, কামরুন নাহার মনির পেটে যে সন্তান সে সন্তান নিজ থেকে দুনিয়াতে আসতে চায়নি। যে মা তাকে দুনিয়াতে আনতে চেয়েছেন; সে মা কীভাবে এমন কাজ করতে পারে? এ সন্তানের কী অপরাধ ছিল? তাকে কেন জন্মের আগে জেল খাটতে হচ্ছে।
বিথী রানী নামে এক শিক্ষিকা বলেন, কামরুন নাহার মা হবে। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শব্দ মা। প্রত্যেক নারী একসময় মা শব্দ শোনার প্রতীক্ষায় থাকে। গর্ভে সন্তান আসলে প্রত্যেক মা সব সময় ভালো কাজে লিপ্ত থাকে। কামরুন নাহার মনি মা-তো দূরের কথা মানুষের মধ্যে পড়ে না। গর্ভে সন্তান নিয়ে নৃশংসভাবে আরেকজন মেয়েকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। সে নারী নামে কলংক।
২০ এপ্রিল বিকাল সাড়ে ৪ টার দিকে কড়া নিরাত্তার মধ্য দিয়ে ফেনীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শরাফ উদ্দিন আহম্মদের আদালতে মনিকে হাজির করে করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। প্রায় ছয় ঘন্টাব্যাপী জবানবন্দি রেকর্ডের পর রাত ১০টার দিকে তাদের জবানবন্দির ব্যাপারে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পুলিশ ব্যু রো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর চট্টগ্রাম বিভাগের স্পেশাল পুলিশ সুপার মো. ইকবাল।
তিনি বলেন, নুসরাত জাহান রাফি হত্যার কিলিং মিশিনে সরাসরি জড়িত ছিলো কামরুন নাহার। নুসরাতের বুকসহ শরীর চেপে ধরেন। বোরকা ব্যবস্থাও করে দেন তিনি। উম্মে সুলতানা নুসরাতের পায়ে বেঁধে চলে যাওয়ার সময় মনি তাকে শম্পা বলে ডাকে। এই শম্পা দেয়া নামটি পপি ও মনির দেয়া নাম। এই কিলিং মিশনে আর কোনো ছদ্মনাম ব্যবহার হয়নি। মনি আরও জানিয়েছে বর্তমানে তিনি ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা।
তিনি আরো বলেন, কয়েক ঘন্টাব্যা পী এ স্বীকারোক্তিমূলক জবাবনন্দিতে মনি হত্যাঃকাণ্ডের ব্যা পারে আরও চাঞ্চল্যকর অনেক তথ্যয় দিয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে তা উল্লেখ করেনি এই কর্মকর্তা।
কামরুন নাহার মনিকে ১৫ এপ্রিল সোনাগাজী থেকে গ্রেফতার করা হয়। ১৭ এপ্রিল একই আদালতে তাকে ৫ দিনের রিমান্ড দেয়া হয়। শুক্রবার মনিকে নিয়ে ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে যায় পিবিআই। সে সময় মনি কিভাবে নুসরাতকে হত্যা করা হয়েছে তার বর্ণনা দেন। তার দেয়া তথ্য মতে পিবিআই বোরকা দোকান পরিদর্শন করেন।
গত ৬ এপ্রিল নুসরাতকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা চেষ্টার দিন সরাসরি কিলিং মিশনে অংশ নেয় পাঁচজন। তারা হচ্ছে মাদ্রাসার ছাত্রলীগ নেতা শাহাদাত হোসেন শামীম, জোবায়ের হোসেন, জাবেদ হোসেন, কামরুন নাহার মনি ও উম্মে সুলতানা পপি।
এ পর্যন্ত ৮জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন তারা হলেন শাহাদাত হোসেন শামীম, নুর উদ্দিন, আবদুর রহীম শরিফ, হাফেজ আবদুল কাদের, উম্মে সুলতানা পপি, সাফুর রহমান জোবায়ের, জাবেদ হোসেন ও কামরুন নাহার মনি ।
উল্লেখ্য, গত ৬ এপ্রিল (শনিবার) সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় যায় নুসরাত জাহান রাফি। মাদ্রাসার এক ছাত্রী সহপাঠী নিশাতকে ছাদের উপর কেউ মারধর করেছে, এমন সংবাদ দিলে সে (নুসরাত) ওই ভবনের তৃতীয় তলায় যায়। সেখানে মুখোশপরা ৫ জন ছাত্রী নুসরাতকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। নুসরাত অস্বীকৃতি জানালে তারা নুসরাতের গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়।
এ ঘটনায় ৮ এপ্রিল (সোমবার) রাতে অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা ও পৌর কাউন্সিলর মুকছুদ আলমসহ ৮ জনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন অগ্নিদগ্ধ রাফির বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান।ওই ঘটনায় এখন পর্যন্ত এজহারের ৮ জন মোট ২০ জনকে গ্রেফতার হয়েছে। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন ৭ জন। ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড দেওয়া হয়েছে।
সর্বশেষ সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মাদ্রাসা কমিটির সহ-সভাপতি রুহুল আমিনকেও গ্রেফতার করেছে পিবিআই। রুহুল আমিন নুসরাতের প্রতিষ্ঠান সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি। এই কমিটি শুক্রবারই বাতিল হয়ে গেছে। সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিন বর্তমানে রিমান্ডে রয়েছেন।(যুগান্তর)
বার্তা কক্ষ
২২ এপ্রিল,২০১৯