এইচএমপিভি আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর কারণ জানাল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়

দেশে হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি) আক্রান্ত নারী সানজিদা আক্তার (৩০) মাল্টি অর্গান ফেইলর বা একাধিক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের অকার্যকারিতার কারণে মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক সায়েদুর রহমান। এইচএমপিভি নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সাধারণ স্বাস্থ্যবিধির পাশাপাশি কিছু নিয়ম মেনে চললে এ ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে এইচএমপিভি ভাইরাসে একজন নারীর মৃত্যু নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে জরুরি এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

অধ্যাপক সায়েদুর রহমান বলেন, সানজিদা নামের যে রোগী মারা গেছেন, তিনি এক মাসের বেশি সময় ধরে আক্রান্ত হয়েছিলেন। ওই সময় তিনি বাসার কাছে স্বীকৃত চিকিৎসক নন, তাদের কাছে চিকিৎসা নিয়েছিলেন। পরে তার অবস্থার অবনতি হলে তিনি ঢাকার একটি হাসপাতালে আসেন। সেখানে ওই নারীকে অ্যান্টিবায়োটিক ও অক্সিজেন দেওয়া হয়। এর চার দিন পর অবস্থার আরও অবনতি হলে তাকে ঢাকার আরেকটি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। তখন পরীক্ষায় তার এইচএমপিভি পজিটিভ পাওয়া যায়।

সায়েদুর রহমান বলেন, আসলে এই রোগী হাসপাতালে এসেছিলেন মূলত সেপসিস নিয়ে। তখন তার কালচারে এইচএমপিভির পাশাপাশি সেখানে ক্লেভসিয়েলাজনিত সেপসিসে ভর্তি হয়েছিলেন। চিকিৎসার পরীক্ষা-নিরীক্ষার অংশ হিসেবে তার এইচএমপিভি পজিটিভ ডিটেকটেড হয়। এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানে যেটুকু বলা হচ্ছে, এইচএমপিভির কারণে মৃত্যু হওয়ার ঘটনাটি বিরল। কিন্তু এইচএমপিভি আক্রান্ত ব্যক্তি যদি অন্যান্য রোগে আক্রান্ত থাকেন, নিউমোনিয়া থাকে, ওই সব কেসে অল্প বা অনেক বেশি বয়সী মারা যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

সায়েদুর রহমান আরও বলেন, ওই রোগীর থাইরয়েড ডিজফাংশন (অকার্যকর) ছিল। সেপসিসে মাল্টি অরগান ফেইলর হয়ে তিনি মারা গেছেন। এই সেপসিস ও মাল্টি অরগান ফেইলরের রোগীদের যখন ভেন্টিলেটশনে নেওয়া হয়, তখন স্বাভাবিকভাবে এদের পরিস্থিতি পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতেও যথেষ্ট খারাপ হয়। এই মৃত্যু মূলত ক্লেবসিয়েলার কারণে সেপসিস (ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে ব্যাপক সংক্রমণ) এবং সেই কারণে নিউমোনিয়া এবং মাল্টি অরগান ফেইলরের কারণে মৃত্যু হয়েছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ওই নারী এইচএমপিভি আক্রান্ত ছিলেন। দেশে রুটিন স্ক্রিনিং হলে একটাসংখ্যক মানুষের মধ্যে এইচএমপিভি পাওয়া যাবে। স্বাভাবিকভাবে এই এইচএমপিভি কখনোই মৃত্যুর কারণ হয় না।

ওই নারীর মৃত্যুর ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে সায়েদুর রহমান বলেন, ‘এটা অত্যন্ত দুঃখজনক, একজন এইচএমপিভি আক্রান্ত মানুষ, তিনি হাসপাতালে ভর্তি থাকা অবস্থায়, ভেন্টিলেটরে থাকা অবস্থায় মারা গেছেন। তাকে ভেন্টিলেশন থেকে বেরও করা হয়েছিল উন্নতির কারণে। আবার আধা ঘণ্টার পর অবস্থার অবনতি হয় এবং তিনি মারা যান। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করছি। আসলে বিজ্ঞানে এখন পর্যন্ত এইচএমপিভির কারণে সরাসরি মৃত্যুর কথা বলা হচ্ছে না। এটি মৃত্যুর হারও খুবই নগণ্য। কোথাও কোথাও হাজারে একজন বলা হয়। কিন্তু আসলে সুস্থ মানুষের ক্ষেত্রে তা–ও না।’

এই ভাইরাসের বিস্তার রোধে কিছু পরামর্শ দিয়ে সায়েদুর রহমান বলেন, ‘যেহেতু ভাইরাসের বিস্তার ঘটছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী, সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিই। এখন কেউ অসুস্থ থাকলে তিনি যেন বেশি মানুষের মধ্যে না আসেন। অনেক মানুষের মধ্যে গেলে যেন মাস্ক পরেন। অসুস্থ বোধ করলে যেন ঘরে থাকেন। এটা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এইচএমপিভির লক্ষণগুলো সর্দি, কাশি, গা ব্যথা এবং নাক দিয়ে পানি পড়া—সাধারণ ফ্লুর মতোই এর লক্ষণ বলেও জানান তিনি।

চাঁদপুর টাইমস ডেস্ক/ ১৬ জানুয়ারি ২০২৪

Share