করোনাভাইরাসের সাথে ঋতুর পালা বদলে দিনে গরম রাতে ঠান্ডা আবহাওয়া দুর্যোগে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে আড়াই’শ শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে আবরো শিশু রোগীর চাপ দেখা দিয়েছে।
গত ৩ দিনে হাসপাতালে প্রায় দেড় শতাধিক শিশু রোগী ভর্তি হয়েছে। শহর এবং জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আসা রোগীরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এসব রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে ডাক্তার ও নার্সরা।
গত ৯ মার্চ থেকে ১১ মার্চ বুধবর দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে প্রায় দেড়,শ শিশু রোগী ভর্তি হয়েছে।
অপরদিকে বিদেশের পাশিপাশি সারদেশের ন্যায় ‘করোনা ভাইরাস’ ছড়িয়ে পড়া ও ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আতংকে রয়েছে চাঁদপুরবাসী। যতই দিন গড়াচ্ছে, করোনা ভাইরাসের হানায় সন্ত্রস্থ হচ্ছে গোটা দুনিয়া। এরই মধ্যে চীন থেকে ‘করোনা ভাইরাস’ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় বিশ্বব্যাপী জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। তবে এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে উচ্চ ঝুঁকি ঘোষন করেছেন বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাটি।
আর এমন ঘোষনার ক’দিন পরই গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে তিন জন নারী-পুরুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের খবর পওয়া যায়, একই সাথে চাঁদপুর মতলব উপজেলায় ইতালি ফেরত এক ব্যাক্তিকে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহে মতলব উপজেলা স্বাস্ব্য কমপ্লেক্সের আলাদা ভবনে রেখে চিকিৎসসেবা প্রদান করার খবর পাওয়া যায়। এরপরই চাঁদপুরে ছড়িয়ে পড়ে করোনা ভাইরাস আতংক।
এদিকে মতলব উত্তরে ইতালি ফেরত হাসপাতালে ভর্তি দুদু মিয়া (৬৫) রোগীর শরীরে করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব মেলেনি বলে জানিয়েছেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। পরীক্ষার মাধ্যমে নেগেটিভ এসেছে। তার অবস্থা খুবই ভালো বলে জানিয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.নুসরাত জাহান মিথেন।
ঋতুর পালা বদলে দিনে গরম রাতে ঠান্ডা পড়ার কারনে আবহওয়া দুর্যোগে বিভিন্ন বয়সী শিশুরা জ্বর, সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া, বমি, পাতলা পায়খানাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ্য হওয়ার কারন বলে জানা গেছে। তবে এদের মধ্যে এক মাস বয়স থেকে শুরু করে চার, পাঁচ মাস বয়সী শিশু রোগীর সংখ্যা বেশি বলে হাসপাতালের ডিউটিরত নার্সরা জানান। গত এক দেড় মাস যাবৎ দিনে গরম এবং রাতে ঠান্ডা আবহাওয়ার কারনে শিশুরা হঠাৎ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
বুধবার ১১ মার্চ দুপুরে চাঁদপুর সরকারি হাসপাতালের তৃতীয় তলার শিশু বিভাগে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় ওই বিভাগের নার্সদের রুমের সামনে ভিড় জমিয়ে চিকিৎসা সেবার জন্য অপেক্ষা করছে অভিবাবকরা। বেডে থাকা শিশু রোগীদেরকেও ঘুরে ফিরে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে নার্সরা। এবং হাসপাতালের শিশু বিভাগের সবক’টি বিছানা পূর্ন হয়ে মেঝেতে এবং কড়িডোরে ও রোগীদের জন্য বিছানা পাতা হয়েছে। এসব শিশু রোগীরা জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট, পাতলা পায়খানা, নিউমিনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এছাড়াও অনেক শিশু রোগীকে অভিভাবকরা হাসপাতালে নিয়ে এসে ডাক্তার দেখিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা নিয়ে চলে যান।
হাসপাতালের ৩য় তলায় শিশু বিভাগে নার্সদের সাথে কথা বলে জানাযায়, গত ৮ মার্চ সারদিনে মোট ৪০ জন শিশুরোগী ভর্তি হয়েছে। ৯ মার্চর সারাদিনে ৪০ জন শিশু রোগী ভর্তি হয়েছে। ১০ মার্চ মঙ্গলবার সারদিনে ভর্তি হয়েছে ৫২ জন এবং ১১ মার্চ বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ভর্তি হয়েছে ৩০ জন শিশু রোগী। এছাড়াও অনেক শিশু রোগীকে ডাক্তার দেখিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা নিয়ে অভিবাবকরা বাড়িতে চলে যান। খবর নিয়ে জানা গেছে গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে হাসপাতলে বিভিন্ন রোগে আক্রন্ত এমন শিশু রোগীর চাপ দেখা দেয়। এছাড়া হাসপাতালের আউটডোরে প্রতিদিনই শিশু রোগীসহ বিভিন্ন বয়সী রেগীদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আর এম ও) ডাঃ মোঃ আসিবুল আহসান চৌধুরীর সাথে আলাপকালে তিনি বলেন আবহাওয়া পরিবর্তনের কারনে শিশুরা হঠাৎ নিউমেনিয়া, জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট, বমি, পাতলা পায়খানাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। গত প্রায় এক দেড় মাস আগে শীত আবহাওয়া ছিলো। এখন কিন্তু বর্তমান সময়ে দিনে গরম পড়ছে রাতে ঠান্ডা । এজন্য গরম ঠান্ডা আবহাওয়া মিলিয়ে শিশু এবং বৃদ্ধরা বেশি অসুস্থ্য হয়ে পড়ছে।
কবির হোসেন মিজি,১২ মার্চ ২০২০