গ্রামীণ ব্যাংকের মালিকানা ৯০% ঋণগ্রহীতা বা গ্রাহক সদস্যদের এবং ১০% সরকারের হাতে রয়েছে। গ্রামীণ ব্যাংক একটি বিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ এবং এর মালিকানা মূলত: এর ঋণগ্রহীতা সদস্যদের হাতেই থাকে। সুতরাং ৯০% শেয়ার গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণগ্রহীতা সদস্যদের মালিকানাধীন। ১০% শেয়ার সরকারের হাতে রয়েছে।
সম্প্রতি দেশে একটি দু:খজনক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে কিছু মানুষ ভুল ধারণার কারণে গ্রামীণ ব্যাংক অফিসে অগ্নিসংযোগ বা হামলার চেষ্টা করছে। তারা মনে করছেন,গ্রামীণ ব্যাংক সম্পূর্ণরূপে ড.মুহাম্মদ ইউনুসের ব্যক্তিগত মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো-গ্রামীণ ব্যাংক ড.মুহাম্মদ ইউনুসের ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয় । এটি একটি বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদিত ও নিয়ন্ত্রিত আর্থিক প্রতিষ্ঠান, যার অধিকাংশ শেয়ার মালিক সাধারণ জনগণ বিশেষ করে নারী ঋণগ্রহীতা সদস্যরা।
গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস: গ্রামীণ ব্যাংকের যাত্রা শুরু ১৯৭৬ সালে, ড. মুহাম্মদ ইউনুসের উদ্যোগে। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল গ্রামের দরিদ্র জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করা। ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ সরকার গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ (Grameen Bank Ordinance,1983) জারি করে এটিকে একটি স্বতন্ত্র ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠা দেয়। তখন থেকেই এটি দেশের আইন অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে রয়েছে।
গ্রামীণ ব্যাংক কার মালিকানা : ব্যাংকের ৯০% শেয়ারধারী হলেন ঋণগ্রহীতা সদস্যরা, অর্থাৎ যারা ব্যাংক থেকে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। বাকি ১০% শেয়ার মালিকানা রয়েছে বাংলাদেশ সরকারের হাতে। অর্থাৎ, গ্রামীণ ব্যাংকের মালিকানা জনগণের, বিশেষ করে গ্রামের হাজারো নারীর হাতে। তাই বলা যায়, এটি “গরিব মানুষের ব্যাংক”, কোনো ব্যক্তির নয়।
ড.মুহাম্মদ ইউনুসের ভূমিকা : ড.মুহাম্মদ ইউনুস ছিলেন এ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ও দীর্ঘ সময়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (গধহধমরহম উরৎবপঃড়ৎ)। তিনি ব্যাংকটির ধারণা, কাঠামো ও পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তবে বর্তমানে তিনি ব্যাংকের কোনো পদে নেই এবং ব্যাংকের কার্যক্রম এখন একটি বোর্ড অব ডিরেক্টর (যা বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদিত) দ্বারা পরিচালিত হয়। যেখানে সদস্যরাই মূল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
বাংলাদেশ সরকার এবং ব্যাংক আইন অনুযায়ী এ প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ স্বতন্ত্রভাবে কাজ করে। তাই গ্রামীণ ব্যাংককে ড. ইউনুসের ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান বলা সম্পূর্ণ ভুল।
গ্রামীণ ব্যাংকের কাজের ধরন : গ্রামীণ ব্যাংক মূলত ক্ষুদ্র ঋণ (গরপৎড়-পৎবফরঃ) প্রদান করে। এর মাধ্যমে গ্রামের মানুষ, বিশেষ করে নারীরা, ছোট ব্যবসা শুরু করতে পারে । যেমন- গরু পালন, হাঁস-মুরগি খামার, বুটিক, হস্তশিল্প, ছোট দোকান ইত্যাদি।
গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান কার্যক্রম
ক্ষুদ্রঋণ প্রদান: সদস্যদের বিনা জামানতে ক্ষুদ্র ঋণ দেয়া হয়।
সঞ্চয় সংগ্রহ: সদস্যরা নিয়মিত সঞ্চয় জমা রাখেন।
অসদস্য আমানত: শুধুমাত্র সদস্য নয়, অসদস্য আমানতকারীরাও ব্যাংকে টাকা জমা রাখতে পারেন।
নারী ক্ষমতায়ন : ৯৭% এরও বেশি ঋণগ্রহীতা নারী, যা গ্রামীণ নারীদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বৃদ্ধি করেছে।
দারিদ্র্য বিমোচন: ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা তৈরির মাধ্যমে দেশের গ্রামীণ অর্থনীতি শক্তিশালী করছে।
ভুল ধারণা ও গুজবের জন্ম: কিছু মানুষ বা গোষ্ঠী মনে করেন, যেহেতু ব্যাংকটি ড. ইউনুস প্রতিষ্ঠা করেছেন, তাই এটি তার ব্যক্তিগত মালিকানাধীন। আবার কেউ কেউ রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। এ গুজব থেকেই কিছু স্থানে গ্রামীণ ব্যাংকের অফিসে নাশকতার চেষ্টা বা আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটছে। যা দুঃখজনক ও বেআইনি।
মনে রাখা জরুরি : গ্রামীণ ব্যাংক বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান। এর মালিকানা জনগণের, এবং এটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও নারী ক্ষমতায়নের প্রতীক।
গ্রামীণ ব্যাংকের অবদান: দেশে ১ কোটির বেশি সদস্য রয়েছে। ৯৭% সদস্য নারী। ৮০,০০০+ গ্রামে সেবা পৌঁছে গেছে। বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিশাল ভূমিকা রাখছে। গ্রামীণ ব্যাংকের কাজের মডেল এখন বিশ্বজুড়ে “এৎধসববহ গড়ফবষ” নামে পরিচিত এবং অনেক দেশ এটি অনুসরণ করছে।
বাংলাদেশের সরকারের ভূমিকা: বাংলাদেশ সরকার গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রমের ওপর তদারকি করে। সরকারের প্রতিনিধি ব্যাংকের বোর্ডে থাকে এবং প্রয়োজনীয় নীতিনির্ধারণে অংশ নেয়।তাছাড়া, গ্রামীণ ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মাবলীর আওতায় পরিচালিত হয়। এটি একটি বৈধ, সরকারি অনুমোদিত, জনগণের ব্যাংক।
জনগণের করণীয় : কোনো ধরনের গুজব বা উস্কানিতে কান দেবেন না। আগুন বা হামলার মতো কর্মকাণ্ডে জড়ানো সম্পূর্ণ বেআইনি। ব্যাংকের অফিস, কর্মচারী বা গ্রাহকদের ক্ষতি করা মানে জনগণের সম্পদ ধ্বংস করা। সঠিক তথ্য যাচাই করে অন্যদের জানানো আমাদের দায়িত্ব। গ্রামীণ ব্যাংক বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক প্রতিষ্ঠান,যা দেশের লাখো দরিদ্র নারী-পুরুষকে আর্থিকভাবে শক্তিশালী করেছে। এই ব্যাংক ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নয়, বাংলাদেশের জনগণের।
আমাদের সবার উচিত : ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে সচেতন থাকা,গুজব প্রতিহত করা এবং শান্তিপূর্ণভাবে সমাজে সত্য প্রচার করা। সংগৃহীত প্রতিবেদন

সম্পাদনা :আবদুল গনি
২৩ নভেম্বর ২০২৫
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur