কৃষি ও গবাদি

ছাদে বাগান করে জাতীয় পুরস্কার বিজয়ী ফারহানার নতুন উদ্যোগ

ছাদ বাগান করে জাতীয় পুরস্কার বিজয়ের পর নতুন উদ্যোগ নিয়েছেন যশোরের গৃহবধূ ফারহানা ইয়াসমিন। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে তিনি বাড়ির ছাদ ও ফাঁকা আঙিনা বিষমুক্ত সবজি ও ফল চাষের আওতায় আনতে উদ্যোক্তা সৃষ্টি করেছেন। তার ডাকে সাড়া দিয়ে ইতিমধ্যে ২০ জন নারী এগিয়ে এসেছেন।

ফারহানা ইয়াসমিন যশোর শহরের বকচরের বাসিন্দা। তিনি বাড়ির ছাদে দেশি বিদেশী ফল, ফুল, ঔষধি ও দর্শনীয় গাছ লাগিয়ে চলতি বছরের মার্চ মাসের বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার পান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে তারা হাতে পুরস্কার তুলে দেন। এই পুরস্কার পাওয়ার পর ফারহানা ইয়াসমিন শহরের যান্ত্রিক জীবনে কিছুটা স্বস্তি দিতে বাড়ির ছাদ ও ফাঁকা আঙিনায় বিষমুক্ত সবজি ও দেশী বিদেশী নানা প্রজাতির গাছ লাগাবার উদ্যোগ নেন।

উদ্যোগটি একাকি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয় ভেবে তিনি সংসারের শত ব্যস্ততার মধ্যেও নারী উদ্যোক্তার খোঁজে বের হন। অত্যন্ত উদ্যোমী ও দৃঢ় মনোবলের অধিকারী ফারহানা ইয়াসমিন তাকে সফলও হন। ২০ জন নারী উদ্যোক্তা ও ১০ জন সহযোগী নিয়ে তিনি কাজ শুরু করেন। ফারহানা ছোটটো এই টিমের নাম দিয়েছেন। বকচর মহিলা সিআইজি (কমন ইন্টারেস্ট) গ্রুপ। পুঁজি সংগ্রহের জন্যে এই গ্রুপের সদস্যরা প্রতিমাসে ২শ’ থেকে ৫শ’ টাকা করে জমা করছেন। তাদের বার্ষিক টার্গেট ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা। এই টাকা দিয়ে তারা বিষমুক্ত ফল ও সবজি উৎপাদন করতে চান।

লাকী উদ্যোক্তাদের এই ছোটটো গ্রুপের একটাই বক্তব্য কারো বাড়ির ছাদ ও আঙিনা খালি পড়ে থাকবে না। ফারহানা ইয়াসমিনের পথ অনুসরণ করে টবেও বাড়ির পরিত্যক্ত জমিতে গাছ লাগিয়ে তারা সফলতা আনতে চান।

ইতিমধ্যে অনেকে কাজটি শুরু করেছেন। বকচরের গৃহবধূ জাকিয়া সুলতানা লিপি, লায়লা ইসলাম, আকলিমা মিলি তাদের বাড়ির ছাদে দেশি বিদেশি নানা প্রজাতির ফলের গাছ ও সবজি লাগিয়েছেন। ফারহানা ইয়াসমিন ছাদ বাগানের অভিজ্ঞতা ও সফলতা সর্বত্র ছড়িয়ে নবীন নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে নিয়মিত সভা করেন। প্রতিমাসের শেষ শুক্রবার তার বাড়িতে এই সভা বসে। সেখানে নিজেদের সমস্যা ও সম্ভবনা নিয়ে আলোচনা এবং কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।

ফারহানা ইয়াসমিন জানান, এ মহৎ কাজে তাকে সবচেয়ে বেশি উৎসাহিত করেছেন চ্যানেল আই এর শাঈখ সিরাজসহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকার সাংবাদিকরা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক চন্ডিদাস কুন্ডু, হট্রিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক বিনয় কুমার সাহা ও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা খালিদ সাইফুল্লাহ তাদের কাজে নিয়মিত পরামর্শ দেন।

এসএসসি পাস ফারহানা ইয়াসমিনের বড় মেয়ে আফসানা ইয়াসমিন বৃষ্টি যশোর সরকারি এম এম কলেজের ছাত্রী এবং ছোট মেয়ে ফারজানা ইয়াসমিন বন্যা যশোর পলিটেকনিক কলেজের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ছাত্রী। স্বামী আকরাম হোসেন একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। তাদের সকলের সহযোগিতায় মাত্র সাড়ে ৯শ’ বর্গফুট ছাদে কমলা, বেদানা, মাল্টা, বেল, কাঁঠালসহ দেশি বিদেশি নানা প্রকার ফল, ফুল, ঔষধি ও সৌন্দর্যবর্ধক প্রায় চারশ’ গাছ লাগিয়েছেন।

ঘর-গৃহস্থলির শত ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি এ কাজ করে সফলতা অর্জন ও জাতীয় পুরস্কার লাভ করেছেন। নতুন উদ্যোগেও ফারহানা সকলের সহায়তা চান। নবগঠিত বকচর মহিলা সিআইজি গ্রুপের সভাপতি তিনি নিজেই। সাধারণ সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষ হচ্ছেন নাসরিন আক্তার ও ফারজানা ইয়াসমিন।
(সংগ্রম)

বার্তা কক্ষ
অক্টোবর ০৩,২০১৮

Share