হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি-কচুয়ায় এবার ব্যাপক রবিফসলের উৎপাদন ও চাষাবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ

হাজীগঞ্জ-শাহারাস্তি-কচুয়ায় এবার ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে আসন্ন শতিকালীন মৌসুমে ব্যাপক রবিফসলের উৎপাদন ও চাষাবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ এলাকার অধিবাসীগণের অধিকাংশই সরাসরি কৃষিকাজের সাথে সম্পৃক্ত। ধান, গম, আলু, পাট, আখ, ভূূট্টা, পেঁয়াজ, রসুন, তিল, মুগ-মুসারি, মিষ্টি আলু,সোয়াবিন ও বিভিন্ন প্রকার শাক-সবজি এ দু’ উপজেলার প্রধান ফসল। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্তৃক বার্ষিক প্রতিবেদন সূত্রে গেলো সপ্তাহে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

চাঁদপুর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-১ এর আওতায় ২টি উপজেলায় নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেচের মাধ্যমে ইরিবোরোর চাষাবাদ বিদ্যমান থাকায় এ বছর হাজীগঞ্জ,শাহারাস্তি ও কচুয়ার বোরোর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৪০ হাজার ৪শ মে.টন এবং আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৩২ হাজার ৩৫ হেক্টর জমি।

প্রাপ্ত তথ্যে মতে- হাজীগঞ্জে সরিষা চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা হলো-৬শ ৭৫ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রা ৯শ ৫৯ মে.টন, গম চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা হলো ১২ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৩৩ মে.টন, ভূ’ট্টা চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা হলো ২শ ৩২ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২ হাজার ৪শ ৫৯ মে.টন, মসুর,খেসারী, মাসকলাই,মুগ চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা হলো ৭ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৭ শ ৫০ মে.টন, আলু চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা হলো ৫ শ ২৫ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৩ হাজার ৬শ ৫০ মে.টন, মিষ্টি আলু চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা হলো ১৫ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৩শ ৭৫ মে.টন, পেঁয়াজ ও রসুন চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা হলো ১ শ ১০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৯ শ ৫০ মে.টন, শাক-সবজি চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা হলো ৭শ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১৫ হাজার ৪শ মে.টন।

শাহরাস্তিতে সরিষা চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা হলো-২শ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রা ২শ ৮৪ মে.টন, গম চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা হলো ২ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে ৫ মে.টন, ভূ’ট্টা চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা হলো ৩৭ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৩শ ৯২ মে.টন, মসুর,খেসারী, মাসকলাই,মুগ চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা হলো ১৬ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১১ মে.টন, আলু চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা হলো ৪০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১ হাজার ৪ শ মে.টন,মিষ্টি আলু চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা হলো ১০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২শ ২৫ মে.টন, পেঁয়াজ ও রসুন চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা হলো ২৫ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২ শ ৫০ মে.টন, শাক-সবজি চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা হলো ৩শ ৯০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৮ হাজার ৫শ ৮০ মে.টন, ধনিয়া চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা হলো-৬০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রা ১শ ৫০ মে.টন এবং মরিচ চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা হলো-৫০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রা সাড়ে ৯২ মে.টন এবং ক্ষীরা চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা হলো-৬০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রা ১ হাজার ৩শ ২০ মে.টন।

কচুয়ায় সরিষা চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা হলো-৫শ ১০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রা ৭শ ২৪ মে.টন, গম চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা হলো ৬ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে ৬ মে.টন, ভূ’ট্টা চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা হলো ১ হাজার ২শ ৩৭ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১৩ হাজার ৯১ মে.টন, মসুর,খেসারী,মাসকলাই,মুগ চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা হলো ১৬ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১১ মে.টন, আলু চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা হলো ৪০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১ হাজার ৪ শ মে.টন,মিষ্টি আলু চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা হলো ১০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২শ ২৫ মে.টন, পেঁয়াজ ও রসুন চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা হলো ১৬ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২ হাজার ১ মে.টন, শাক-সবজি চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা হলো ৪শ ২৫ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৯ হাজার ৩শ ৫০ মে.টন, ধনিয়া চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা হলো-১৯০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রা ৪শ৭৫ মে.টন এবং মরিচ চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা হলো- ৭৫ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রা ১৩৮ মে.টন এবং ক্ষীরা চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা হলো-২০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রা ৪শ ৪০ মে.টন।

ইতোমধ্যে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে- হাজীগঞ্জ,শাহারাস্তি ও কচুয়ার ৩টি উপজেলায় নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেচের সংখ্যা রয়েছে ২ হাজার ৪’শ”র মত। রাত ১১ টা-ভোর ৬ টা পর্যন্ত পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-১ এ ৩ উপজেলার সেচ গুলোতে জেলায় নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। এতে প্রতিদিন বিদ্যুৎতের চাহিদা রয়েছে প্রায় ১০ মেঘাওয়াট। সেচগুলোতে শতভাগই সরবরাহ করা হচ্ছে। এ ছাড়াও সরকারি নির্দেশে সেচের জন্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আবেদন করার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই সংযোগ দেয়ার নির্দেশ রয়েছে। এদিকে সরকার সেচে উৎপাদন বাড়াতে চাষাবাদকারীদেও ২০% বিদ্যুৎ বিল মওকুপ করা হয়ে থাকে।

জানা যায়-‘রবি মৌসুমে সেচ গুলোতে কোনো প্রকার লোডসেডিং নেই। কোনো সেচ গ্রাহকের ট্রান্সফরমায় কোনো প্রকার ত্রুটি দেখা দিলে অভিযোগ প্রাপ্তির সাথে সাথেই সমিতির নিজ দায়িত্বে তা সচল করার উদ্যো গ্রহণ করে থাকে। উৎপাদন বৃদ্ধির স্বার্থে পিবিএস ১ র কর্মবাহিনীকে ২৪ ঘন্টায়ই প্রস্তুত থাকতে রুটিন করা হয়েছে ।

২০২৪-২০২৫ বছরের জেলা কৃষিবিভাগের বার্ষিক প্রতিবেদন সূত্র মতে,উপজেলাওয়ারী হাজীগঞ্জে আবাদ ৯ হাজার ৪শ ৫০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৪১ হাজার ৮শ ৪৬ মে.টন্। শাহারাস্তিতে আবাদ ৯ হাজার ৩শ ৮৫ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৪২ হাজার ৭শ ৬৩ মে.টন। কচুয়ায় আবাদ ১৩ হাজার ২শ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৫৬ হাজার ৬শ ৬৫ মে.টন।

প্রসঙ্গত, দেশের খাদ্য বিভাগের গবেষণালদ্ধ জ্ঞান ও কৃষকদের প্রশিক্ষণ,সরকারের প্রদত্ত কৃষির উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার, সেচ সুবিধা, সার ও বিদ্যুৎ ভর্তূকি, উন্নতমানের বীজ সরবরাহ,আধুনিক কৃষি সাজ-সরঞ্জামাদি সরবরাহ ও নগদ প্রণোদনার মাধ্যমে দিন দিন খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় চাঁদপুর বর্তমানে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ।

বর্তমানে চাঁদপুরের কৃষক ও কৃষক পরিবারও নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে খুবই আগ্রহ্ী। জলবায়ূ পরিবর্তনে ফলে তাদের যথাসময়ে ও সঠিকভাবে প্রদর্শিত পথ দেখাতে পারলে খাদ্য ঝুঁকি এড়াতে সক্ষম হতে পারবে। প্রতি বছর গড়ে উৎপন্ন হয়ে থাকে ৪ লাখ ২৮ হাজার ৩শ মে.টন। এক সময় খাদ্য ঘাটতি ছিল প্রকট। চাঁদপুর জেলাকে ২৭৪ টি কৃষিব্লকে ভাগ করে সকল প্রকার প্রযুক্তি উপজেলাভিক্তিক প্রদান করা হয়ে থাকে।

ফলে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমেই বর্তমানে খাদ্য উৎপাদন হচ্ছে ৪ লাখ ২৮ হাজার ৩শ ২২ মে.টন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চাঁদপুর জেলার সকল উপজেলার কৃষি উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে বলে আমরা আশাবাদী ।

কৃষকরা বর্তমানে লাঙ্গলের পরিবর্তে ট্রাক্টর,হোচার পরিবর্তে বিদ্যুৎ চালিত স্যালো বা ডিপ নলকূপা দিয়ে পানি সেচ,গোবরের সারের পরিবর্তে বিভিন্ন প্রকার উন্নত রাসায়নিক সার ব্যবহার,বোনার পরিবর্তে সারিবদ্ধ ভাবে ধান রোপণ,উন্নত বীজ,পরিমিত কীটনাশকের ব্যবহার,নতুন নতুন জাতের উদ্ভাবন ও প্রযুক্তির ব্যবহার ইত্যাদি কারণে ইরি-বোরোর বাম্পর ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে কৃষিবিদরা জানান। এবার কৃষকদের বিভিন্ন প্রকার বীজ ও সার প্রণোদনা সরকার কর্তৃক প্রদান করা হয়েছে । চাঁদপুর জেলা একটি নদীবিধৌত কৃষি ভিক্তিক অঞ্চল বিধায় কৃষকরা সময়মত চাষাবাদ, বীজ রোপণ বা বীজবপন করে সঠিক পরিচর্যায় পারদর্শী।

চাঁদপুর দেশের অন্যত্তম কৃষিভিত্তিক অঞ্চল। চাঁদপুরের জরবায়ূ কৃষি উৎপাদনে সহায়ক। মেঘনা,ডাকাতিয়া,মেঘনা-ধনাগোদা ও পদ্মা নদী বিধৌত এ চাঁদপুর। চাঁদপুর জেলার অধিকাংশ মানুষ কৃষিজীবী। জেলার ৪টি উপজেলার ২০টি ইউনিয়ন নদীভাঙ্গনগ্রস্থ,নদীবিধৌত ও নদীসিকস্তি। চাঁদপুর সেচ প্রকল্প ও মেঘনা ধনাগোদা নামে দু’টি সেচ প্রকল্প রয়েছে।

চাঁদপুর জেলার চারটি উপজেলা যথা- চাঁদপুর সদর, হাইমচর,ফরিদগঞ্জ,মতলব উত্তর ও দক্ষিণে প্রায় ২৩ হাজার ৩ শ’৯০ হেক্টর জমি রয়েছে এ দুটোতে। জেলার খাদ্যের প্রয়োজন ৪ লাখ ২২ হাজার ৯শ ৫৫ মে.টন। হাইব্রিড,স্থানীয় ও উন্নত ফলনশীল এ ৩ জাতের ইরি-বোরোর চাষাবাদ করে থাকে চাঁদপুরের কৃষকরা। কম-বেশি সব উপজেলাই ইরি-বোরোর চাষাবাদ হয়ে থাকে। চাঁদপুর সেচ ও মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্প,মতলব দক্ষিণ ও হাজীগঞ্জে ব্যাপক ইরি-বোরোর চাষাবাদ হয়।

আবদুল গনি
৬ নভেম্বর ২০২৪
এজি

Share