Home / চাঁদপুর / জেলায় আসন্ন শীতকালীন শাক-সবজির উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ২১ হাজার মে.টন
vegatbles --

জেলায় আসন্ন শীতকালীন শাক-সবজির উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ২১ হাজার মে.টন

চাঁদপুর দেশের অন্যতম নদীবিধৌত কৃষি প্রধান অঞ্চল। মেঘনা, পদ্মা, মেঘনা ধনাগোদা ও ডাকাতিয়া নদী এ জেলা ওপর দিয়ে বয়ে যাওযায় রবি,আউস, আমন ও বোরোর মত কৃষি উৎপাদনে নদী অববাহিকায় ব্যাপক গ্রীষ্মকালীন শাক-শবজি উৎপন্ন হয়ে থাকে।

চাঁদপুরে এবারের শীতকালীন শাক-সবজির উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ২১ হাজার মে.টন। জেলার কোনো কোনো উপজেলায় এর চাষাবাদ চলমান রয়েছে। বর্তমানে স্থানীয়রা বাণিজ্যিকভাবে শীতকালীন লাউ,সীম,বরবটি ,লালশাক, মুলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, লালশাক,পালংশাক, শালগম, শিম, টমেটো,পেঁয়াজ পাতা, ব্রোকলি, মটরশুঁটি, গাজর, ধনিয়াপাতা নানা শাক-সবজি উৎপাদন করে থাকে। পুষ্টিবিদদের মতে,শীতকালীন সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, বিটা-ক্যারোটিন, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ফলিক এসিড, এন্টিঅক্সিডেন্ট, আঁশ ও ভিটামিন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামার বাড়ি চাঁদপুরের ২০২৪-২৫ চলমান মৌসুমে রবি ফসলের আবাদ ও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার বার্ষিক প্রতিবেদনে ২১ অক্টোবর এ তথ্য জানা গেছে ।

প্রাপ্ত দেয়া তথ্য মতে, এ বছর ২০২৪-২০২৫ শাক-সবজির চাঁদপুর সদর মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদী বিধৌত বিধায় হাজীগঞ্জ ও শাহরাস্তি এবং মতলব মেঘনাদনাগোধা নদীির অববাহিকায় বিপুল পরিমাণ শাক-সবজি উৎপাদন হযে থাকে। এদিকে হাজীগঞ্জের ১০ কি.মি. লম্বা বোয়ালজুরি খালটিও কচুয়া ও হাজীগঞ্জবাসীর জন্যে আর্শিবাদ হিসেবে কাজ করছে।

নারী-পুরুষ একন সমান তালে এসব শাক-সবজি উৎপাদনে প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকে। গরু, ছাগল , হাঁস , মুরগি ইত্যাদি গবাদি পশু প্রতিপালনে এর অববাহিকায় পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও অগ্রণীভূমিকা পালন করে আসছে। কেননা সারা বচরই ডাকাতিয়া ও বোয়ালজুরি খালে পানিসেচের সুবিধা থাকে।

চাঁদপুর সদরে চাষাবাদ লক্ষ্যমাত্রা ১ হাজার হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২২ হাজার মে.টন। মতলব উত্তরে চাষাবাদ ১ হাজার ২শ’ ৫০ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২৭ হাজার ৫শ মে.টন, মতলব দক্ষিণে চাষাবাদ ২শ’ ৭৫ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৬ হাজার ৫০ মে.টন,হাজীগঞ্জে চাষাবাদ ৭শ’ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১৫ হাজার ৪ শ মে.টন । শাহরাস্তির চাষাবাদ ৩ শ’ ৯০ হক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৮ হাজার ৫শ ৮০ মে.টন।

কচুয়ায় চাষাবাদ ৪শ’ ২৫ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৯ হাজার ৩ শ ৫০ মে.টন, ফরিদগঞ্জের চাষাবাদ ৮ শ’ ৩৫ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১৮ হাজার ৩ শ ৭০ মে.টন, হাইমচরের চাষাবাদ ৬ শ’ ২৫ হেক্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১৩ হাজার ৭শ ৫০ মে.টন ।

বিশেষ করে চাঁদপুরের ১১ টি বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলে এ শাক-সবজি ব্যাপকভাবে চরবাসীরা চাষাবাদ করে থাকে। নারীরাই এসব শাক-সবজি উৎপাদনে প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকে। গরু, ছাগল , হাঁস , মুরগি ইত্যাদি গবাদি পশু প্রতিপালনে মেঘনা অববাহিকায় ও চরাঞ্চলে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও অগ্রণীভূমিকা পালন করে আসছে। দিন রাত পরিশ্রম করেই তারা এ শাক-সবজি উৎপাদনে ব্যস্ত থাকে ।

কোনো কোনো এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে তারা ব্যাপক হারে শাক-সবজির চাষাবাদ করে আসছে। তাদের জীবিকার প্রধান বাহন কৃষি, সবজি চাষাবাদ ও হাঁস , মুরগি ইত্যাদি গবাদি পশু প্রতিপালন । চাঁদপুরে ধান, পাট, আলু, সয়াবিন, পেঁয়াজ, রসুন সরিষা, মরিচের পরেই শাক-সবজির স্থান। এটি এখন বেশ লাভজনক। চাঁদপুরের উৎপন্ন শাক-সবজি নৌ-পথে দেশের বিভিন্ন শহরে বন্দরে চলে যায় ।

আবহাওয়ার অনুকূল পরিবেশ,পরিবহনে সুবিধা,কৃষকদের শাক-সবজি চাষে আগ্রহ, কৃষি বিভাগের উৎপাদনের প্রযুক্তি প্রদান, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নত, কৃষিউপকরণ পেতে সহজলভ্যতা, বীজ ,সার ও কীটনাশক ব্যবহারে কৃষিবিদদের পরামর্শ, ব্যাংক থেকে কৃষিঋণ প্রদান ইত্যাদি কারণে চাঁদপুরের চাষীরা ব্যাপক হারে শাক-সবজির চাষ করছে। বিশেষ করে চাঁদপুরের চরাঞ্চলগুলোতে ব্যাপক শাক-সবজির উৎপাদন করে থাকে চাষীরা। অতীব দু:খের বিষয়-নদী তীরবর্তী হওয়ায় চরাঞ্চলের চাষীদের কৃষিঋণ দিচ্ছে না ব্যাংকগুলো।

চাষীরা ঋণসহায়তা পেলে শাক-সবজি চাষাবাদে আরোও উৎসাহী হতো। চরাঞ্চলগুলি হলো-মতলবের চরইলিয়ট, চর কাসিম, সবজি কান্দি, ষষ্ট খন্ড বোরোচর,চাঁদপুর সদরের রাজরাজেস্বর, জাহাজমারা,লগ্নিমারা,বাঁশগাড়ি, চিড়ারচর, ফতেজংগপুর, হাইমচরের ঈশানবালা, চরগাজীপুর, মনিপুর, মধ্যচর, মাঝিরবাজার, সাহেব বাজার ও চরভৈরবির বাবুরচর ইত্যাদি।

শাক-সবজির মধ্যে রয়েছে-চিচিঙ্গা, করলা, ডেঁড়স, বরবটি,পটর ,কাকরল, ধুন্দুল, ডাটা,ঝিংগা ,বেগুন প্রভৃতি। চাঁদপুরের কুমারডুগি, মহামায়া,দেবপুর,মাস্টার বাজার,সফরমালী সুন্দরদিয়া এলাকায় ব্যাপকহারে ও বাণিজ্যিকভাবে চাষিরা এসব শাক-সবজির চাষাবাদ করে থাকে ।

চাঁদপুরের একজন কৃষিবিদ বলেন, ‘চরাঞ্চলের উৎপন্ন শাক-সবজি খুবই সতেজ ও তরতাজা। এসব শাক-সবজিতে কোনো রকম ফরমালিন মেশানোর প্রয়োজনীয়তা নেই। কেননা তারা বিক্রির জন্যে দিনের উঠানো গুলো দিনেই বাজারে বসে বিক্রি করে থাকেন।’

আবদুল গনি,
২২ অক্টোবর ২০২৪