প্রথমবারের মতো এক অর্থবছরে চার কোটি টনের বেশি চাল উৎপাদন করেছে বাংলাদেশ। কৃষকরা ধীরে ধীরে দেশীয় জাত থেকে সরে এসে উচ্চ ফলনশীল ও হাইব্রিড জাতের ধান চাষ বাড়ানোর কারণে এটি সম্ভব হয়েছে বলে সরকারি তথ্যে জানা গেছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাব অনুসারে,২০২৩-২৪ অর্থবছরে কৃষকরা চার কোটি ছয় লাখ টন চাল পেয়েছেন। আগের অর্থবছরের তুলনায় চার দশমিক এক শতাংশ বেশি। শুষ্ক মৌসুমে বোরোর ফলন বেশি হওয়ায় গত মে থেকে জুনে বোরো আবাদ থেকে কৃষকরা পেয়েছেন প্রায় ২ কোটি ১০ লাখ টন ধান।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের সাবেক নির্বাহী চেয়ারম্যান ওয়ায়েস কবিরের মতে,এর অন্যতম প্রধান কারণ কৃষকরা আধুনিক জাতের ধান চাষে ঝুঁকছেন। তারা উচ্চ ফলনশীল ও হাইব্রিড জাতের ধান চাষ করছেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আবাদি জমিও বেড়েছে। কৃষি অর্থনীতিবিদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন,‘ উৎপাদন বাড়ায় চাল আমদানির দরকার পড়েনি। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে পর্যাপ্ত মজুদ থাকায় চালের দাম তেমন বাড়েনি। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে,৭ অক্টোবর পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানি হয়নি। ’
২০২২-২৩ অর্থবছরে ১০ লাখ ৫৬ হাজার টন চাল আমদানি হয়েছিল। গমের আমদানি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭১ % বেড়ে ৬৬ লাখ টন হয়।
চালের উৎপাদন প্রাক্কলন নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ফেলো এম আসাদুজ্জামান। তার প্রশ্ন সরবরাহ যদি সত্যিই পর্যাপ্ত থাকে তাহলে চালের দাম বাড়ছে কেন? তিনি আরও বলেন,যতটা উৎপাদন বেড়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে আসলে ততটা বাড়েনি। উচ্চ মূল্যস্ফীতির অর্থ সরবরাহে ঘাটতি। গত অর্থবছরে খাদ্য মূল্যস্ফীতির বড় অংশ ছিল চাল। বিবিএস বলছে, গত অর্থবছরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ১০ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
আগের বছর ছিল আট দশমিক ৭১ % । এম আসাদুজ্জামান বলেন,‘এ বছর বারবার বন্যার কারণে আমান চাষ নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমন উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হলে চাল আমদানি করতে হবে। নভেম্বরের শুরুতেই তা বোঝা যাবে। তাই সরকারকে আগামি মাসে আমদানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যার কারণে আউশ ও আমন আবাদ ও উৎপাদন কমে যেতে পারে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুসারে, চলতি মৌসুমে আমন চাষের জমির পরিমাণ কমে ৫৭ দশমিক ৩৫ লাখ হেক্টর হয়েছে। তা আগে ছিল ৫৭ দশমিক ৫০ লাখ হেক্টর।
কৃষি অর্থনীতিবিদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন,‘এ বছর সামগ্রিকভাবে আমন চাল উৎপাদন হতে পারে এক কোটি ৫৫ লাখ টন থেকে এক কোটি ৬০ লাখ টন। বন্যার কারণে কৃষকদের দেরিতে চারা রোপণ করতে হয়েছে। তিনি বলেন,‘আগামি বোরো ধান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কৃষকের হাতে উৎপাদন উপকরণ, বিশেষ করে সার নিশ্চিত করতে পারলে খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হতে হবে না। ’
চাঁদপুর টাইমস রিপোর্ট
১৪ অক্টোবর ২০২৪