চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয়। দীর্ঘ দিন ধরে অবাধে উৎকোচ আর ঘুষ বাণিজ্য চললেও রহস্যজনক কারণে কর্তৃপক্ষের কোনো ভূমিকা নেই। প্রমাণ পেলেও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছেন না সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্তা ব্যক্তিরা।
এই অফিসে অবসরপ্রাপ্ত চাকুরীজিবীদের ভাতার বই অনলাইনের নামে ৫’শ থেকে ২ হাজার টাকা প্রদান করেও কাংক্ষিত সেবা পান না গ্রাহকরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফরিদগঞ্জ উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয়ে লাগামহীন উৎকোচ ও আর অনিয়ম দুর্নতির ফলে অবসরপ্রাপ্ত চাকুরীজিবী (ভাতা ভোগী) ও উপজেলার সরকারি কর্মকর্তা- কর্মচারীরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। প্রতিটি কাজেই নির্দিষ্ট হারে মোটা অংকের কমিশন না দিলে নানা ভাবে হয়রানীর শিকার হতে হয় এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের । শুধু তাই নয়, অবসরপ্রাপ্ত চাকুরীজিবীদের ভাতার বই অনলাইনের নামে প্রত্যেক ভাতার বইয়ের বিপরীতে ৫’শ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায়ের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। উৎকোচ নিয়েই ক্ষান্ত নয় কর্মকর্তা- কর্মচারীরা, প্রতিনিয়তই তাদের খারাপ আচরণের স্বীকার হতে হয় ভুক্তভোগীদের।
এদিকে উক্ত অফিসে গিয়ে দেখাযায়, অফিসে কর্মকর্তার টেবিলে বসেই দালাল ননী গোপালসহ কয়েকজন অফিসের খবরধারি করছে।
উপজেলার রুপসা এলাকার ফজলুলর রহমানের মেয়ে রেহানা জানান, আমার নিকট কাজ করার কথা বলে দালাল ননী গোপাল সরকার ১ হাজার টাকা চুক্তি করে ৫শ টাকা নিয়েছে। আমি বারবার অফিসে এসে কাজ করাতে পারিনি এমনকি আমার পেনশন বহিটিও দিচ্ছে না। এমন সময় অফিসে সাংবাদিকরা আসলে অভিযোগ করলে , ওনারা আমার বহি ও টাকা ফেরৎ দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছে।
দালাল ননী গোপাল পরিবার পরিকল্পনা অফিসের অবসর প্রাপ্ত একজন কর্মচারী , হিসাব রক্ষণ অফিসের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ অফিসে কি করে সরকারী চেয়ারে বসে কাজ করছেন এ প্রশ্ন অনেকেরই। তবে সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্মকর্তার যোগসাজসেই কাজ ও দালালি করার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এ বিষয়ে দালাল ননী গোপাল সরকারে কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাকে অফিসের কর্মকর্তা লোকবল সংকটে কাজ করার সুযোগ দিয়েছে। আমি কাজের বিনিময় নিচ্ছি না। স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে মানুষজনকে সেবা দিচ্ছি। বা
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী আব্দুল মতিনসহ কয়েকজন জানায়, ভাতার বই অনলাইনের নামে উক্ত অফিস ৫’শ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করছে এবং সঠিক সময়ে কাজ না করেও মানুষের সাথে খারাপ আচরন করে। শুধু ভাতার বই নয়, এ অফিসে সকল কাজেই টাকা দিতে হয় বলে ভুক্তভোগীরা জানায়।
ফরিদগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন কর্মকর্তা- কর্মচারীদের সাথে কথা বলে জানাযায়, অফিস ভ্রমণ বিলে ২০%, এরিয়া বিলে ৩০% – ৪০% উৎকোচ দিতে হয় অফিস সংশ্লিষ্টদের।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত অফিস পিয়ন ফিরোজ আলম বলেন, এ কাজ করার জন্য স্যার আমাকে অনুমতি দিয়েছে, টাকা আদায়ের বিষয়ে তার অফিসারের সাথে কথা বলতে বলেন।
এ বিষয়ে উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা ওয়াহেদ পারভেজের সাথে কথা হলে তিনি সংবাদ পরিবেশন না করার জন্য অনুরোধ করেন এবং সন্ধায় দেখা করবেন বলে জানান।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিউলি হরি বলেন, সত্যতা পেলে সংশ্লিষ্ট বিভাগের উর্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে জেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা অনিল চন্দ্র সরকারের মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, ভাতার বই অন লাইন করার জন্য নির্দেশনা রয়েছে। তবে কোন ধরণের টাকা নেওয়ার বিধান নেই। অফিস পিওন অন লাইন করার কাজ করতে পারে না। এ সব বিষয়ে প্রমাণ পেলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রতিবেদক : শিমুল হাছান, ২ নভেম্বর ২০২০