জলবায়ু পরিবর্তনে ছয় ঋতুর ছন্দ হারিয়ে গেছে। তাই এই ছন্দ ফিরিয়ে আনতে পরিবেশ রক্ষায় অন্তত একটি গাছ লাগানোর অনুরোধ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। শিক্ষার্থীদের পছন্দ অনুযায়ী, যেখানে খুশি সেখানে বছরে অন্তত একটি করে গাছ লাগানোরও আহ্বান জানান তিনি।
শুক্রবার (৭ অক্টোবর) রাজধানীর ধানমন্ডির ডাব্লিউভিএ মিলনায়তনে রেডিয়েন্ট বনসাই সোসাইটি আয়োজিত ‘১২তম বার্ষিক বনসাই প্রদর্শনী’ উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন তিনি।
অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘সারা দেশে এখন গাছ লাগানোর একটা চর্চা হচ্ছে। আমার নিজেরও বাগানের ভীষণ শখ, অসম্ভব রকমের শখ আছে। আমার একটি যৌথ উদ্যোগ আছে, আমার এক আত্মীয়ের সঙ্গে। তিনি তার (গাছের) যত্ন নেন। আর ওটার প্রশংসা করি, আপতত এই অবস্থায় আছে। যদি অবসরে যাওয়ার সুযোগ হয় এবং তখনও বেঁচে থাকি— তাহলে হয়তো তখন নিজে যত্ন নিতে পারবো। গাছের পরিচর্যাও ভালো অভ্যাস, শরীর ও মনের জন্য ভালো। আমরা সবুজকে ভালো বাসবো, সারা দেশে সবুজের বিস্তৃতি ঘটাবো। গাছ স্বাস্থ্যের জন্য দরকার, পরিবেশের জন্য দরকার।’
দীপু মনি বলেন, ‘পুরো বিশ্বটাতে এই যে জলবায়ু পরিবর্তন— শীতটা ছোট হয়েছে গেছে, বর্ষাটা এলোমেলো। আর গ্রীষ্মটা ভীষণ রকমভাবে চেপে বসেছে আমাদের ওপরে। এই জলবায়ু পরিবর্তন কারও জন্যই ভালো না। সারা পৃথিবীতে খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হবে, নানান ধরনের রোগ-বালাই হবে। আগে ঋতুর সঙ্গে যে ছন্দটা ছিল, সেই ছন্দের পতন ঘটছে। আমরা যেন আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারি। আর যেন ব্যাঘাত না ঘটে, খারাপ দিকে না যাই, গাছের যত্ন নিতে হবে, সবুজের বিস্তৃতি ঘটাতে হবে। যারা বড় আকারে প্রকৃতিকে ঘরের মধ্যে নিয়ে আসবার নান্দনিকতার চর্চা করেন, তাদের প্রতি অনেক অনেক শুভ কামনা। এটি (বনসাই) হয়তো বাংলাদেশে শিল্প হিসেবে শক্ত-পোক্ত হিসেবে দাঁড়িয়ে যাবে।’
পরিবেশ রক্ষা ও শিক্ষার্থীর দায়িত্ববোধ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আগামী বছর থেকে নতুন যে শিক্ষাক্রম চালু হবে— ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে এবং প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে, সেই শিক্ষাক্রমে আমরা সব কিছু করে শেখার জায়গাটায় নিয়ে যাচ্ছি। এটির একটি প্রস্তুতি হিসেবে ২০১৯ সাল থেকে প্রকল্পভিত্তিক শিক্ষার বেশ কিছু কাজ শুরু করেছিলাম। এর একটি প্রকল্প ছিল গাছ লাগানো। তার বাইরেও আমরা বলেছিলাম— প্রত্যেক শিক্ষার্থী একটি করে গাছ লাগাবে। সেই গাছ শিক্ষার্থী পছন্দ করবে— সে কোন গাছ, কোথায় লাগাবে। ওই গাছের জন্য কেমন মাটি লাগবে, কেমন করে যত্ন নেবে তা শিখবে। যত্ন নেওয়া এবং দায়িত্ববোধ তৈরি করার জন্য অন্য একটি জীবনের প্রতি দায়িত্ব বোধ নিয়ে কাজ করা শেখানোর জন্য সেই প্রকল্পটা শুরু করা হয়েছিল।’
শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমাকে সম্মান জানানোর জন্য কোনও উপহার দেওয়ার দরকার নেই। যদি আমাকে কিছু দিতেই হয়— তাহলে আমাকে একটি বই দেবেন না হয় একটি ছোট গাছ দেবেন। ছোট বলে বিপদে পড়ে গেছি। যেখানে যাই বনসাই দিয়ে দেয়। এখন বনসাই দিলে তো অনেক দাম। পরে বলেছি— গাছ দিলে ৫০/১০০ টাকার যেকোনও একটি গাছ দেবেন। কিছু দিন আমি যত্ন নেবো, তারপর বড় হয়ে গেলে কোথাও লাগিয়ে দেবো। আপনাদের কাছে আমার অনুরাধ— বনসাই গাছ পরিচর্যায় কী করতে হয়, সেটি মানুষকে জানিয়ে দেবেন। তাহলে অনেকে যারা যত্ন নিতে জানেন না, সে কারণে তারা হয়তো করেনও না। সে কারণেই জানিয়ে দেওয়া ভালো। ’
অনুষ্ঠানে আয়োজকরা জানান, ছোট মাটির পাত্রে পূর্ণ গাছের আদলে বট, ফাইকাস, জেড, চাইনিজ এলম, পডোকার্পাস, জেলকোভা— এমন যে গাছগুলো সহজে বেঁচে থাকতে পারে, তাদের ছোট আকারে সুন্দর করে বাঁচিয়ে রেখে যে শিল্প গড়ে উঠেছে, তার নাম বনসাই। দ্রুত নগরায়ণের এই সময়ে গাছের সৌন্দর্য আর অক্সিজেনের ঘাটতি মেটাতে আরও বহু প্রাচীন এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে বাড়িতে বাড়িতে বনসাইয়ের চর্চা করা জরুরি বলে মনে করেন বনসাই বোদ্ধারা।
এবারের প্রদর্শনীর মূল লক্ষ্য সজীব-সতেজ বনসাই শহরের মানুষের কাছে তুলে ধরা। তিন দিনব্যাপী এই প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রোটারি ইন্টারন্যাশনালের ৩২৮১ ডিস্ট্রিক্ট গভর্নর ইঞ্জিনিয়ার এম এ ওয়াহাব এবং ডিবিসি নিউজের সম্পাদক প্রণব সাহা।
উল্লেখ্য, প্রদর্শনীতে বিভিন্ন প্রজাতির বনসাই প্রদর্শন করা হচ্ছে। দর্শনার্থীরা চাইলে বনসাই কিনতেও পারবেন। একহাজার থেকে শুরু করে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত মূল্যের বনসাই পাওয়া যাচ্ছে প্রদর্শনীতে। ধানমন্ডি ২৭ নম্বর সড়কের ২০ নম্বর বাড়িতে প্রদর্শনীটি চলবে আগামী ৯ অক্টোবর পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এটি সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
বার্তা কক্ষ, ৭ অক্টোবর ২০২২