উপজেলা নির্বাচন: চাঁদপুর সদরে সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রচারণা শুরু

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এবার ধাপে ধাপে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আয়োজনের দিকে যাচ্ছে সংস্থাটি। আগামী এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ থেকে মে মাসের শেষ সপ্তাহের মধ্যে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন শেষ করার ইঙ্গিত দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। স্থানীয় সরকারের এ ভোটে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পদ্ধতি ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে কমিশনের। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রেশ কাটতে না কাটতেই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার ইঙ্গিতে সারা দেশেআ সম্ভব্য প্রার্থীদের মাঝে শুরু হয়েছে নির্বাচনি তোড়জোড়। এতে পিছিয়ে নেই ইলিশের বাড়ি খ্যাত চাঁদপুর জেলাও। তফসিল ঘোষণা না হলেও আগাম প্রচার-প্রচারণায় মাঠে নেমেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। ইতিমধ্যে নির্বাচনি এলাকায় শুভেচ্ছা পোস্টার লাগিয়ে এবং গণসংযোগের মাধ্যমে নিজ নিজ পরিচয় তুলে ধরছেন তারা। তবে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা এখনো চোখে পড়েনি। তফসিল ঘোষণা হলে তারা হয়তো নির্বাচনি মাঠে আসবে, এমনটি মনে করছেন অনেকে।

চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এবার সম্ভাব্য চেয়ারম্যান পদের জন্য যাদের নাম বেশি শোনা যাচ্ছে তারা হলেন, সদর উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান, বর্তমান পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান এবং সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আইয়ুব আলী বেপারী, জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান টুটুল, সদর উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক অ্যাড. হুমায়ুন কবির সুমন, তরুণ ছাত্রনেতা মো. রাকিব মাঝিসহ আরো অনেকে। এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নতুন অনেকের নাম শোনা যাচ্ছে।

২০১৯ সালের মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত ৫ম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চাঁদপুরের ৭টি উপজেলায় আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৪জন ভোট যুদ্ধের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এবং ৩ জন নির্বাচনের পূর্বে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। ভোটের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত চেয়ারম্যানরা হলেন, চাঁদপুর সদর উপজেলায় মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান, ফরিদগঞ্জ উপজেলায় অ্যাড. জাহিদুল ইসলাম রোমান, শাহরাস্তি উপজেলায় মো. ফরিদ উল্যাহ চৌধুরী, কচুয়া উপজেলায় শাহজাহান শিশির। অপরদিকে নির্বাচনের পূর্বে কোন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় মতলব উত্তর উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা এম.এ. কুদ্দুছ, দক্ষিণ উপজেলায় এইচ.এম. গিয়াস উদ্দিন ও হাজীগঞ্জ উপজেলায় গাজী মো. মাইনুদ্দিন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ওই সময়ে ৭টি উপজেলায় ৬২ প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ১৩জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে (পুরুষ) ২৪ জন, ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৫জন। চাঁদপুর সদরে
নৌকা প্রতীক নিয়ে মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম দেওয়ান ১লাখ ১৩ হাজার ৮৭৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। বই প্রতীক নিয়ে ১লাখ ১৬ হাজার ৪৫ ভোটে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন মো. আইয়ুব আলী বেপারী এবং প্রজাপতি প্রতীক নিয়ে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আবিদা সুলতানা।

গত ২৩ জানুয়ারি রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর সাংবাদিকদের জানান, উপজেলা নির্বাচন করার সময় যেটা, সে সময়টা চলে এসেছে। সামনে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয়ে যাচ্ছে; এরপর রোজা। রোজার মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব না। ঈদের পরপরই যাতে নির্বাচন হয় সেভাবে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু করে মে মাসের শেষ সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচন শেষ করব। তিনি বলেন, নির্বাচন ব্যালটেও হতে পারে আবার ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) হতে পারে। আবার ব্যালট-ইভিএম দুটোর সমন্বয় থাকতে পারে। এ ব্যাপারে চূড়ান্ত কিছু বলা যাচ্ছে না।

জানা যায়, ২০১৯ সালের পঞ্চম উপজেলা পরিষদ পাঁচ ধাপে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সে সময় ৪৮৮টি উপজেলা পরিষদের তফসিল ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে ৪৫৫টির নির্বাচন যথাযথ সময়ে এবং বাকিগুলো পরবর্তীতে অনুষ্ঠিত হয়। ওই বছর ১০ মার্চ প্রথম ধাপে ৮২টি, ১৮ মার্চ দ্বিতীয় ধাপে ১২৩টি, ২৪ মার্চ তৃতীয় ধাপে ১২২টি, ৩১ মার্চ চতুর্থ ধাপে ১০৬টি এবং ১৮ জুন পঞ্চম ধাপে ২২টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। দেশে বর্তমানে উপজেলার সংখ্যা ৪৯৫টি। আইন অনুযায়ী, উপজেলা পরিষদের মেয়াদ হচ্ছে প্রথম সভা থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর। আর নির্বাচন করতে হয় মেয়াদ পূর্তির আগের ১৮০ দিনের মধ্যে। জানা গেছে, প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে সে সময় বিজয়ীদের শপথ ২০১৯ সালের মার্চেই হয়েছে। অন্য ধাপেরগুলো পরবর্তীতে ধাপে ধাপে অনুষ্ঠিত হয়েছে এপ্রিল, মে মাসে। সে হিসেবে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের সময় গণনা ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে।

প্রতিবেদক: আশিক বিন রহিম, ৩০ জানুয়ারি ২০২৪

Share