নারীর ক্ষমতায় বিশ্বের নজর কেড়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বে ক্ষমতাধর নারীদের তালিকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অন্যতম। এছাড়া বিরোধীদলীয় নেত্রী ও জাতীয় সংসদের স্পিকারও নারী।
কিন্তু জাতীয় নির্বাচনে নারীর অংশগ্রহণের হার বাড়ছে না। এবারের নির্বাচনে ১ হাজার ৮৬১ প্রার্থীর মধ্যে মাত্র ৬৮ জন নারী। শতকরা হিসাবে যা ৩ দশমিক ৬৪ শতাংশের কম। যদিও প্রতিটি নির্বাচনে প্রার্থী সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু মোট প্রার্থীর তুলনায় নারীদের হার বাড়ছে না। তবে বর্তমানে নারীদের জন্য ৫০টি সংরক্ষিত আসন রয়েছে।
স্বাধীনতার পর এ পর্যন্ত দেশে মোট ১০টি নির্বাচন হয়েছে। এর মধ্যে ১৯৭৩ সালে মোট নারী প্রার্থী ছিলেন ২ জন, ’৭৯ সালে ১২ জন, ’৮৬ সালে ১৩ জন, ’৯১ সালে ৩৯ জন, ’৯৬ সালে ৩৭ জন, ২০০১ সালে ৩৮ জন, ২০০৮ সালে ৫৬ জন এবং সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনে ৬৮ জন নারী প্রার্থী রয়েছেন।
এছাড়া ১৯৯১ সালের নির্বাচনে দলের নেত্রী হিসেবে তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। তবে এ বছর ব্যতিক্রম। সংসদের বাইরে থাকলেও মাঠের প্রধান বিরোধী দল হিসেবে খ্যাত বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া আইনি জটিলতার কারণে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি।
১৯৭৯ সালের উপনির্বাচনে খুলনা-১৪ থেকে সৈয়দা রাজিয়া ফয়েজ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ হিসাবে তিনি প্রথম নির্বাচিত নারী সদস্য। নারীরা সরাসরি নির্বাচনে সফলতা লাভ করেন তৃতীয় সাধারণ নির্বাচনে।
১৯৮৬ সালের এ নির্বাচনে বাংলাদেশের ইতিহাসে শেখ হাসিনাসহ তিনজন নারী প্রার্থী নির্বাচিত হন। শেখ হাসিনা নির্বাচিত হন তিনটি আসন থেকে এবং বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একজন নারী হিসেবে
সংসদে বিরোধীদলীয় নেত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। এরপর পঞ্চম সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব লাভ করেন খালেদা জিয়া। পরের ২৭ বছরে দেশের প্রধান নির্বাহী তথা প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্বে নারীরাই রয়েছেন।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুসারে ২০২০ সালের মধ্যে নিবন্ধিত সবগুলো রাজনৈতিক দলের সব কমিটিতে ন্যূনতম ৩৩ শতাংশ নারী রাখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
এবারের নির্বাচনে যেসব নারী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন তারা হলেন- চাঁদপুর-২ ডা. দীপু মনি (আ’লীগ),পঞ্চগড়-২ তাসমিয়া প্রধান (জাগপা), দিনাজপুর-৬ শাহিদা খাতুন (এনপিপি), নীলফামারী-২ শাহিদা খাতুন (এনপিপি), রংপুর-৩ রিটা রহমান (বিএনপি), রংপুর-৪ লায়লা আঞ্জুমানারা বেগম (জাকের পার্টি), রংপুর-৬ শিরীন শারমিন চৌধুরী (আ’লীগ), গাইবান্ধা-১ আফরুজা বারী (স্বতন্ত্র), গাইবান্ধা-২ মাহবুব আরা গিনি (আ’লীগ), গাইবান্ধা-৩ দিলারা খন্দকার (জাপা), জয়পুরহাট-১ আলেয়া বেগম (স্বতন্ত্র), নাটোর-২ সাবিনা ইয়াসমিন (বিএনপি), সিরাজগঞ্জ-১ রুমানা মোর্শেদ কনকচাঁপা (বিএনপি), সিরাজগঞ্জ-২ রুমানা মাহমুদ (বিএনপি), চুয়াডাঙ্গা-১ মেরিনা আক্তার (বাংলাদেশ মুসলিম লীগ), যশোর-৬ ইসমাত আরা সাদেক (আ’লীগ), বাগেরহাট-৩ হাবিবুন নাহার (আ’লীগ), খুলনা-২ মনিরা বেগম (গণফ্রন্ট), খুলনা-৩ বেগম মন্নুজান সুফিয়ান (আ’লীগ), পটুয়াখালী-২ সালমা আলম (বিএনপি), বরিশাল-৫ শামীমা নাসরিন (এনপিপি), বরিশাল-৬ নাসরিন জাহান রতœা (জাপা), ঝালকাঠি-২ জেবা আমিন খান (বিএনপি), টাঙ্গাইল-৭ রূপা রায় চৌধুরী (প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল), টাঙ্গাইল-৮ কুঁড়ি সিদ্দিকী (কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ), শেরপুর-১ সানসিলা জেবরীন (বিএনপি), শেরপুর-২ বেগম মতিয়া চৌধুরী (আ’লীগ)।
ময়মনসিংহ-৪ ও ৭ বেগম রওশন এরশাদ (জাপা), ময়মনসিংহ-১১ নাজমা আক্তার (জাকের পার্টি), নেত্রকোনা-৪ জলি তালুকদার (সিপিবি), তাহমিনা জামান (বিএনপি) ও রেবেকা মমিন (আওয়ামী লীগ), কিশোরগঞ্জ-৫ সেলিনা সুলতানা (জেএসডি), মানিকগঞ্জ-২ মমতাজ বেগম (আ’লীগ), মানিকগঞ্জ-৩ আফরোজা রিতা (বিএনপি) ও চৌধুরী ফাহরিয়া আফরিন (স্বতন্ত্র), মুন্সীগঞ্জ-২ সাগুফতা ইয়াসমিন (আ’লীগ), ঢাকা-১ সালমা ইসলাম (স্বতন্ত্র), ঢাকা-৮ শম্পা বসু (বাসদ), সুমি আক্তার শিল্পী (বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি) ও হাসিনা হোসেন (বাংলাদেশ মুসলিম লীগ), ঢাকা-৯ আফরোজা আব্বাস (বিএনপি) ও মাহফুজা আক্তার (এনপিপি), ঢাকা-১১ শামীম আরা বেগম (বিএনপি), ঢাকা-১৬ নাঈম খালেদ মনিকা (বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি), ঢাকা-১৮ সাহারা খাতুন (আ’লীগ), গাজীপুর-৪ সিমিন হোসেন রিমি (আ’লীগ), গাজীপুর-৫ মেহের আফরোজ (আ’লীগ) ও রাহেলা পারভীন শিশির (জাপা), নরসিংদী-২ সাদিকুন নাহার খান (বিএনএফ), ফরিদপুর-২ শামা ওবায়েদ ইসলাম (বিএনপি) ও সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী (আ’লীগ), গোপালগঞ্জ-৩ শেখ হাসিনা (আ’লীগ), সুনামগঞ্জ ২ জয়া সেনগুপ্তা (আ’লীগ), সিলেট-২ তাহসিনা রুশদী (বিএনপি), ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ জেসমিন নূর বেবী (জাপা), কুমিল্লা-২ সেলিমা আহমাদ (আ’লীগ)।
দেওয়ান কামরুন্নেছা (জাকের পার্টি), ফেনী-১ শিরীন আখতার (জাসদ, নৌকা প্রতীকে), নোয়াখালী-৪ সামসুন নাহার (বিএনএফ), নোয়াখালী-৫ মমতাজ বেগম (বিএনএফ), নোয়াখালী-৬ আয়েশা ফেরদৌস (আ’লীগ), লক্ষ্মীপুর-৪ তানিয়া রব (জেএসডি), চট্টগ্রাম-১০ সাবিনা খাতুন (স্বতন্ত্র), কক্সবাজার-১ তনিমা আফরিন (স্বতন্ত্র) ও হাসিনা আহমেদ (বিএনপি), কক্সবাজার-৪ শাহীন আক্তার (আ’লীগ) এবং রাঙ্গামাটি আসনে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন প্রথম ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নারী জুঁই চাকমা। (যুগান্তর)
বার্তা কক্ষ
৩০ ডিসেম্বর,২০১৮