বহুদিনের কাঙ্ক্ষিত তিস্তা গার্ডার সেতু ২৫ আগস্ট উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে সেতুটির জন্য অপেক্ষা করছিলেন নদীর দু
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গাইবান্ধার হরিপুর থেকে কুড়িগ্রামের চিলমারী পর্যন্ত বিস্তৃত এ সেতুটির দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৪৯০ মিটার। এ গার্ডার সেতুতে রয়েছে ২৯০টি পিলার ও ৩১টি স্প্যান।
সেতু চালু হলে সরাসরি উপকৃত হবেন গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম ও আশেপাশের জেলার অন্তত ২০ লাখ মানুষ। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ এবং কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার মধ্যকার দূরত্ব ৪০ কি.মি. কমে যাবে। এ পথে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগের পথ কমে যাবে অন্তত ৬০ কি.মি.। এ অঞ্চলের কৃষক, শ্রমজীবী, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ীসহ সকল শ্রেণির মানুষের জীবনযাত্রায় আসবে দৃশ্যমান পরিবর্তন।
হরিপুরের কৃষক আবেদুর রহমান বলেন,‘আগে নদী পার হতে অনেক সময় লাগত। এখন সেতু চালু হলে সহজেই পার হতে পারব, ফসলও সময়মতো বাজারে বিক্রি করতে পারব।’ ব্যবসায়ী ফিরোজ মিয়া বলেন, ‘সেতু চালু হলে ব্যবসায় অনেক সুবিধা হবে।
এক পাড় থেকে আরেক পাড়ে যাওয়া সহজ হবে, সময় ও খরচ দু-ই বাঁচবে।’
সংবাদ কর্মী আব্দুল মান্নান বলেন,‘সেতুর আশপাশের এলাকা এখনই বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন শত শত মানুষ আসছে সেতু দেখতে এবং নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে। এখানে দর্শনার্থী কিংবা ভ্রমণ পিপাসুরা যদি অবকাঠামগত সুযোগ পান তাহলে এলাকার উন্নয়নে এ বিনোদন কেন্দ্রটি অবদান রাখতে পারবে।’
তিস্তা সেতুর চালুর পর স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ব্যবসা, পরিবহন এমনকি পর্যটন খাতেও আমূল পরিবর্তন আসবে। দূরের কলেজ, হাসপাতাল, প্রশাসনিক সেবা সব কিছুই হয়ে উঠবে কাছের গন্তব্য।
সংশ্লিষ্ট দপ্তর জানায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে নির্মিত এ সেতু প্রতিষ্ঠানটির এখন পর্যন্ত এলজিইডির করা দেশের সবচেয়ে দীর্ঘ সেতু।
এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জ্বল চৌধুরী বলেন, ‘এটি এলজিইডির সর্ববৃহৎ সেতু। গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামের মধ্যে ৪০ কিলোমিটার দূরত্ব কমে যাবে। প্রায় ২০ লাখ মানুষ সরাসরি উপকৃত হবেন। সেতু নির্মাণে প্রাথমিক বাজেট ছিল ৪৪০ কোটি টাকা, তবে আশা করা হচ্ছে তার চাইতে কম খরচেই কাজ সম্পন্ন হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘সেতুর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ২৫ আগস্ট উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা এই সেতু উদ্বোধন করবেন বলে এখন পর্যন্ত কথা রয়েছে। তবে বিস্তারিত জানাতে আর কিছুদিন সময় লাগবে।’
স্থানীয়রা জানান, ‘তিস্তা সেতুর দীর্ঘ ৩০ বছর আন্দোলন এবং মানুষের দ্বারে দ্বারে আবেদন নিয়ে ঘোরাফেরা করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষক শরিতুল্লাহ মাস্টার। তিনি ওয়ান ম্যান আর্মি হয়ে তিস্তা সেতুর জন্য লড়াই করে গেছেন। সুন্দরগঞ্জ এবং গাইবান্ধা জেলায় ইতিমধ্যে মানববন্ধন-মিছিল-সমাবেশ করে এলাকাবাসী প্রধান উপদেষ্টার কাছে দাবি তুলেছেন- সেতুটিতে যেন ওই মানুষটির নাম থাকে। তারা চান সেতুটির নাম হোক- শরিদুল্লাহ মাস্টার সেতু।’
এ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সংগঠক আশিকুর রহমান বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা শরিতুল্লাহ মাস্টার তার আবেগ দিয়ে এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য কাজ করেছেন। সেতুটির সঙ্গে এ জীবন্ত কিংবদন্তির নাম থাকা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করছি। জুলাই আন্দোলনের পর দেশে যে ইতিবাচক পরিবর্তন সূচিত হয়েছে,আশা করছি জনবান্ধব অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আমাদের প্রত্যাশা পূরণ করবেন।’
৭ আগস্ট ২০২৫
এ জি
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur