সন্ধ্যা ৬ টার পর বালি উত্তোলন নয় : প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক

দেশের কোথাও সন্ধ্যা ৬টার পর নদী থেকে বালি উত্তোলন করা যাবে না বলে জেলা প্রশাসকদের কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। তিনি বলেন,‘ বালি উত্তোলন বন্ধ,উঁচু স্থানে আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণ এবং নদীর তীরবর্তী বাঁধগুলোতে যাতে ঘরবাড়ি বা অবৈধ স্থাপনা গড়ে না ওঠে সে দিকে ডিসিদের নজর দিতে বলা হয়েছে।’

বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক সম্মেলনের শেষ দিনের দ্বিতীয় অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

জাহিদ ফারুক বলেন, ‘ বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বর্ষা মৌসুমে অধিক পানি প্রবাহিত হয়। আবার শুষ্ক মৌসুমে পানি একদমই কমে যায়। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি, ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদীর নাব্য রক্ষার। যেকোনোভাবে নদীতে পানি সচল রাখতে হবে। নাব্য রক্ষা করতে হবে; যাতে নৌযান খুব সহজে চলাচল করতে পারে।’

পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী বলেন,‘আমরা লক্ষ করছি, সারা দেশে অবৈধ বালি উত্তোলনের হিড়িক চলছে। দেশে এর মহাসমারোহ শুরু হয়েছে। এটা বন্ধ করতে না পারলে, আমরা যদি নদীর একটি বাঁধ লোহা দিয়েও নির্মাণ করি সেটিও এক সময় ঢলে পড়বে। তখন আমরা নদী থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারবো না। নির্মাণাধীন বাঁধ ভেঙে পড়বে।’

তিনি বলেন, ড্রেজিং ম্যাটেরিয়ালস নিয়ে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে। সেটি শিগগিরই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হবে। সেখানে বালি উত্তোলনের সময়টা সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত বেঁধে দেয়া হবে। বালি উত্তোলন কোনোভাবেই সন্ধা ৬টার পরে করা যাবে না।

এ ছাড়া সরকারের যেসব উন্নয়নমূলক প্রকল্প রয়েছে,তা চলমান রাখার জন্য বালির প্রয়োজন হবে। কিন্তু তার জন্য যত্রতত্র বালি উত্তোলন করলে চলবে না। তা উত্তোলন করতে হবে নির্দিষ্ট বালু মহল থেকে। পানি উন্নয়ন বোর্ড, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রকৌশলীদের নিয়ে বালি মহল চিহ্নিত করুন।’

পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী বলেন,‘জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যেন বাঁধের ওপরে কোনোভাবেই অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা না হয়। সাধারণভাবে আপনারা দেখেছেন নদীর ওপরে যে বাঁধ থাকে সেখানে কিছু ঘরবাড়ি গড়ে ওঠে। বাঁধের ওপরে এভাবে ঘরবাড়ি করলে এবং রান্নাবান্না করলে সেখানে ইঁদুরের বাসা হয়। এতে বাঁধের মাটির তল দুর্বল হয়ে পড়ে। কিন্তু ওপর থেকে জানাই যাবে না যে বাঁধটি দুর্বল হয়ে পড়েছে। ফলে বন্যার সময় যখন পানির প্রবল স্রোতের ধাক্কা লাগে তখন এই বাঁধগুলো ভেঙে যায়। তখন কিন্তু অনেকেই বলে এই বাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ড তৈরি করেছে এবং এর নির্মাণকাজ ভালো হয়নি।’

তিনি বলেন,‘আপনারা দেখবেন আশ্রয়ন প্রকল্প কিন্তু সাধারণভাবে নদীর কিনার থেকে করা হয়। ফলে যখনই বন্যা হয় তখনই কিন্তু পানি এসে আশ্রয়ণ প্রকল্প ডুবে যায়। এতে সরকারকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। আমরা জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দিয়েছি, আপনারা যখন এ আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণের পরিকল্পনা করবেন। প্রকল্প স্থান নির্ধারণের ক্ষেত্রে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে নেবেন। যদি স্থান নির্ধারণের ক্ষেত্রে একটু উঁচু জায়গায় বেছে নেন, তাহলে ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পটি পানিতে ডুবে যায় না। সে ক্ষেত্রেও নিচু স্থান হলে বালি ফেলে তা উঁচু করে নেওয়া যায়। তাহলে আশ্রয়ণ প্রকল্পগুলো টেকসই হবে।’

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন,‘উপকূলীয় অঞ্চলের বাঁধ রক্ষার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। উপকূলীয় বাঁধগুলো ভেঙে যাচ্ছে। এগুলো ষাটের দশকে গড়া প্রকল্প। এখনই প্রকল্পগুলোর পরিবর্তন করা হচ্ছে। এখানে বিশ্বব্যাংকের তত্ত্বাবধানে কাজ হচ্ছে। এখানে ১৩৯টি ফোল্ডার আছে। ১০টি ফোল্ডারের কাজ শেষের পথে। আরও ২০টি ফোল্ডারের কাজ প্রক্রিয়াধীন। এছাড়া স্থানীয় সরকারের তত্ত্বাবধানে আরও সাতটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। উপকূলীয় প্রকল্পের এসব কাজগুলো সম্পন্ন হয়ে গেলে আগামী ৭-৮ বছর পরে উপকূলীয় অঞ্চল একটি সহনীয় পর্যায়ে আসবে। তখন উপকূলবাসীকে জলোচ্ছ্বাস থেকে আমরা রক্ষা করতে পারবো।’

বার্তা কক্ষ ,
২০ জানুয়ারি ২০২২,
এজি

Share