বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার প্রদীপ্ত সূর্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের উত্তাল ভাষণে সর্বস্তরের মানুষ যখন মুক্তির উম্মাদনায় আর স্বাধীনতার চেতনায় উজ্জীবিত। কচুয়া মুক্তি পাগল ছাত্র জনতা তখনই বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সংগ্রাম বাস্তবায়নে প্রতিরোধের আগুনে প্রজ্জলিত।
১১ই মার্চ স্বাধীন বাংলা কচুয়া থানা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেন তৎকালীন চাঁদপুর মহাকুমা ছাত্রলীগ ও স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি, মুক্তিযুদ্ধকালীন কচুয়া উপজেলা সম্মিলিত বাহিনীর অধিনায়ক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মরহুম ওয়াহিদুর রহমান।
১৫ই মার্চ কচুয়া থানা আওয়ামী লীগ সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেন বৃহত্তর কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগের সংগ্রামী সাধারণ সম্পাদক কচুয়া ও বরুড়া নির্বাচনী এলাকা হতে নির্বাচিত এম.এন.এ মরহুম এডভোকেট মোঃ আউয়াল। আঃ রশিদ প্রধান (রশিদ কন্ট্রাকটর) উপজেলা সংগ্রাম কমিটির সভাপতি মনোনিত হয়ে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি এডভোকেট মোবারক সাহেব সহ তড়িৎ গতিতে ইউনিয়ন সংগ্রাম কমিটি গঠন করেন। তখন চলছে অসহযোগ আন্দোলনসহ বঙ্গবন্ধুর ঘোষিত বিভিন্ন কর্মসূচি পালন।
মোঃ আনোয়ার হোসেন সিকদার
২৩ শে মার্চ পাকিস্তান প্রজাতন্ত্র দিবসে পাকিস্তানী জাতীয় পতাকা আনুষ্ঠানিকভাবে নামিয়ে পুড়িয়ে দেয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। সর্ব প্রথম কচুয়া বঙ্গবন্ধু ডিগ্রি কলেজ পরে অফিস আদালতসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়তে থাকে। ২৫ শে মার্চ দিবাগত রাত্রে মহান ২৬ শে মার্চ এর প্রথম প্রহরে কচুয়া ডাকবাংলায় অ্যাডভোকেট আউয়ালের সাথে সংগ্রাম পরিষদের শলা-পরামর্শ মিটিং চলা অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর চিঠি নিয়ে বিশেষ দূতের আগমন। আউয়াল সাহেব ও রশিদ প্রধান বিষন্ন চেহারায় আমাদেরকে বঙ্গবন্ধুর আদেশ অনুশাসন মেনে চলার পরামর্শ দিলেন।
তাৎক্ষনিক প্রতিরোধের (বেরিগেট) ব্যবস্থার নির্দেশে আমরা সালাউদ্দিন, তরিকুল ইসলাম, তাহের, হাবিব, মজিব, শহীদ সহ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ হতে কচুয়া-কালিয়াপাড়া একমাত্র পাকা রাস্তায় ডাকবাংলার পূর্ব পাশে ব্রীজ ভাঙ্গা সহ (বর্তমানে ব্রীজটি নাই) লুন্তি গ্রাম পয়েন্ট সহ উল্লেখিত পাকা রাস্তা কাটা ও বিভিন্নভাবে বেরিগেট তৈরী করে কচুয়ায় সু-মহান মুক্তিযুদ্ধের শুভ সূচনা করি। পরবর্তীতে উল্লেখিত রাস্তায় হোসেনপুর বাজারের উত্তর পাশের ব্রীজটি এক্সক্লোসিভ দিয়ে গুড়িয়ে ছিলেন যুদ্ধকালীন বি.এল.এফ ডেপুটি কমান্ডার মোঃ জাবের মিয়া, জেলা ইউনিট কমান্ডার দপ্তর ইয়াকুব আলী মাষ্টার, উপজেলা সাংগঠনিক কমান্ডার শফিকুর রহমান, প্লাটুন কমান্ডার হেদায়েত উল্যা, কচুয়া আঞ্চলিক কমান্ডার সৈয়দ আহম্মেদসহ অনেকে।
অগ্নিঝরা মার্চের ২৭ তারিখে কচুয়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ। বঙ্গবন্ধু ডিগ্রি কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ পাইলট ফজলুল করিম ও দেওয়ান আ. গফুর প্রশিক্ষণ পরিচালনায় ছিলেন।
সংগ্রাম পরিষদের মাধ্যমে থানার রাইফেল ছিনিয়ে নিয়ে কচুয়া, সাচার, রহিমানগর সহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ জায়গায় শুরু করা হয়। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ডেপুটি কমান্ডার জাবের মিয়া মুক্তাঞ্চলে প্রশিক্ষণ পরিচালনা করেন।
লেখক পরিচিতি:
মোঃ আনোয়ার হোসেন সিকদার
বীর মুক্তিযোদ্ধা
অন্যতম নেতা স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ,
কচুয়া-চাঁদপুর।