চাঁদপুরের হাইমচরের চরভৈরবী এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিত্যক্ত বাধে বসবাসরত কয়েক হাজার ভুমিহীন ও বাজারের চার শতাধিক ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ীদের পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদ অভিযান প্রক্রিয়ার প্রতিবাদে এলাকাবাসী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে ।
স্থায়ীভাবে পুনর্বাসন ছাড়াই পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক উচ্ছেদ প্রক্রিয়া শুরু করায় শনিবার (১৩ মে) দুপুরে চরবৈরবী বাজারে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে কয়েক হাজার ভূমিহীন নারী-পুরুষ।
তাদের দাবি একটাই পূনর্বাসন ছাড়া রোজা এবং ঈদের আগে উচেছদ করা হলে তারা পথে বসে যাবে । তাদের যাবার কোন জায়গা নেই।
অন্যদিকে স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ ও জনপ্রতিনিধিরা বলছেন আসছে সংসদ নির্বাচনের পূর্বে এমন উচ্ছেদ অভিযান করা হলে ক্ষুন্ন হবে সরকারের ভাবমূর্তি।
জানা যায়, দীর্ঘ ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে নদীভাংতি পরিবারের প্রায় পাঁচ হাজারেরও বেশি লোক পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিত্যক্ত বেড়িবাঁধে বসবাস করে আসছে। এ ছাড়া প্রায় ৪ শতাধিক ব্যবসায়ী বাঁধের দুই পাশে পরিত্যক্ত জমিতে অস্থায়ী দোকানপাট নির্মাণ করে কোন রকম ভাবে পরিবার নিয়ে জীবন-যাপন করছে। একটি চক্র এসব ভূমিহীন পরিবারকে উচ্ছেদ এবং তাদের দোকানপাট পাউবোর জনৈক কর্মকর্তার আত্মীয়র জায়গায় স্থানান্তরের চেষ্টা করছে।
ভূমিহীন পরিবারগুলো তাদেরকে উচ্ছেদ না করে দীর্ঘদিন ধরে পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকা স্থানটিতে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ দিতে দাবি জানিয়েছে ।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, , চরভৈরবী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ ভুট্টু মুন্সী, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা ও বাজার কমিটির সভাপতি দিদারুল আলম বাবু ও সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াছ লিটন, মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী ফাতেমা আক্তার, শাহাবুদ্দিন প্রমুখ।
মানববন্ধন চলাকালে স্থানীয় সংবাদকর্মীরা সেখানে পৌঁছলে বহু নারী-পুরুষকে উচ্ছেদ আতঙ্কে কান্নায় ভেঙ্গে পড়তে দেখা গেছে।
স্থানীরা জানান চরবৈরবীসহ আশ পাশের এলাকায় বহু সম্পত্তি পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে । এসব সম্পত্তি প্রভাবশালী ধনী পরিবারগুলো দখলে রাখলে সেখানে উচ্ছেদ করা হচ্ছে না । শুধুমাত্র পরিত্যক্ত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাধে বসবাসরত নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের কোনো প্রকার পুনর্বাসন ছাড়াই স্থানীয় পাউবো কর্তৃপক্ষ তাদের উচ্ছেদের চেষ্টা করছে।
তারা দাবি করেন পুনর্বাসন ছাড়া এভাবে উচ্ছেদ করলে এসব ব্যবসায়ীসহ তাদের পরিবারের শতশত লোক না খেয়ে মরবে।
পরপর পাঁচ বার নদী ভাঙনসহ সবশেষ আগুনে পুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত চরভৈরবী বাজারের টেইলার দোকানী বিনা আক্তার কান্না কণ্ঠে বলেন, ‘আমরা নদী ভাঙনে শেষ হয়ে গেছি। আমাদের আর কোথাও থাকার জায়গা নেই। সরকারের কাছে আমাদের দাবি আমাদের একটা মাথা গোজার ঠাঁই করে যেনো দেয়া হয়।
চরভৈরবী ইউপি চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ ভুট্টু বলেন, ‘পুনর্বাসন ছাড়া এদের উচ্ছেদ করলে তাদের সাথে অন্যায় করা হবে। সেই সাথে এলাকার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হবে।’
চরভৈরববী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আহমদ আলী মাস্টার বলেন, ‘আমরা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে এসব ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পুনর্বাসনের জোর দাবি করছি। দলের ইমেজ নষ্ট করার জন্য একটি চক্র পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের উৎসাহ দিচ্ছে। তিনি বলেন সামনে রোজা এবং ঈদ এ সময় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা অযোক্তিক এবং অমানিবিক।’
চরভৈরবী বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াছ লিটন জানান, ‘আমরা বাজার কমিটি পরিত্যক্ত এ সম্পত্তি বহুবার লীজ চেয়েছি কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড দেয়নি । পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্থানীয় এক জন এসও (যার বাড়ি হাইমচর) এর ইন্ধনে পানি উন্নয়ন বোর্ড উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করতে চাচ্ছে । আমাদের উচ্ছেদ করে এ স্থানে এসও পছন্দের লোকদের বসাতে চাচ্ছে ।’
চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান বলেন, ‘চাঁদপুরের বিভিন্নস্থানে পাউবো অনেক জায়গা অবৈধভাবে দখল করে আছে। তাদের উচ্ছেদের ব্যাপারে আমরা খুব সহসাই অভিযান শুরু করবো। হাইমচরের চরভৈববীতেও পরিত্যক্ত বেড়িবাঁধে যে বাজার রয়েছে সেখানে দু’একদিনের মধ্যে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।
এ সম্পত্তি হঠাৎ কেনো পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রয়োজন হলো? আর উচ্ছেদ করা হলে অসহায় মানুষগুলো কোথায় যাবে এমন প্রশ্নের জনাবে তিনি চুপ থাকেন ।
চরভৈরবী এলাকার হাজার হাজার মানুষ উচ্ছেদ বন্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা.দীপু মনি, জেলা প্রশাসক মোঃ আবদুস সবুর মন্ডল, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ওচমান গনি পাটোয়ারীসহ সকলের সহযোগিতা ছেয়ে গণস্বাক্ষর করে স্মারকলিপি দিয়েছে ।
নিউজ ডেস্ক
আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১০: ৩০ পিএম, ১৩ মে ২০১৭, শনিবার
ডিএইচ