মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ড কার্যকরের অপেক্ষায় থাকা জামায়াতে ইসলামীর আমীর মতিউর রহমান নিজামী শেষ মুহূর্তে এসে কারারক্ষীদের কাছে তিনি তার ফাঁসির রায় কখন কার্যকর করা হবে তা জানতে চেয়েছেন।
কারারক্ষীরা বিষয়টি জানেন না বলার পর নিজামী উচ্চস্বরে বলতে থাকেন, ‘আমার প্রতি অবিচার করা হচ্ছে।’
রোববার রাতে কাশিমপুর কারাগার থেকে নিজামীকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়। সেখানে রজনীগন্ধা সেলে একজন ডেপুটি জেলারের তত্ত্বাবধানে তাকে রাখা হয়েছে।
তাদের দাবি, যে কোনো সময় ফাঁসির রায় কার্যকর হতে পারে- এমন আশংকায় নিজামী ভেঙে পড়েছেন। অনেকটাই নিশ্চুপ তিনি।
কারা সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সকালের নাস্তা হিসেবে নিজামীকে গমের রুটি ও আখের গুড় দেয়া হয়। তবে তিনি তা না খেয়ে কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ক্যান্টিন থেকে নিজের পছন্দমত নাস্তার খাবার সংগ্রহ করেন।
এরপর দুপুরের খাবার হিসেবে মাছ-ভাত ও ডাল সরবরাহ করা হয়। জোহরের নামাজ শেষে ওই খাবার খেয়ে বিশ্রাম নেন নিজামী।
বিকালে কিছু সময়ের জন্য নিজামীকে রজনীগন্ধা সেলের বাইরে আনা হয়। সেখানে আধা-ঘণ্টা ঘোরাফেরার সুযোগ পান তিনি। এরপর তাকে আবারও সেলে ফিরিয়ে নেয়া হয়।
সেলে গিয়ে মাগরিবের নামাজ আদায়ের পর নিজামীকে রাতের খাবার দেয়া হয়। এ সময় তিনি রাতের খাবার খেতে অনিচ্ছার কথা জানান। এক পর্যায়ে কারারক্ষীদের অনুরোধে তিনি খুবই সামান্য পরিমাণে খাবার গ্রহণ করেন।
খাবার শেষে উপস্থিত কারারক্ষীদের কাছে নিজামী তার ফাঁসির রায় কখন কার্যকর করা হবে, তা জানতে চান। তবে কারারক্ষীরা এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে নিজামীকে জানান।
এ সময় নিজামী তার ওপর ‘অবিচার’ করা হচ্ছে বলে কারারক্ষীদের উদ্দেশে উচ্চস্বরে বলতে থাকেন। এক পর্যায়ে তিনি সেলে বসে উচ্চস্বরে কালেমা পড়তে থাকেন। তখন আশপাশের কক্ষে থাকা ফাঁসির অন্য আসামিরা উৎসুক দৃষ্টিতে নিজামীর কক্ষের দিকে চেয়ে থাকেন।
কারা সূত্র জানায়, রোববার রাতে নিজামীকে কিছু সময়ের জন্য আমদানিতে (কারাগারে নতুন বন্দিদের রাখার স্থান) রাখা হয়। পরে তাকে ৮ নম্বর রজনীগন্ধা (ফাঁসির আসামিদের রাখার স্থান) সেলে নেয়া হয়। এর আগে ওই সেলের আশপাশে পর্যাপ্ত সংখ্যক কারারক্ষী মোতায়েন করা হয়।
এ বিষয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির বলেন, ‘রজনীগন্ধা সেলে নিজামীকে দিনের খাবার সরবরাহ করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই তিনি খাবার খেয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘ফাঁসির আসামিদের রাখার স্থানে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়। ডেঞ্জার জোন হিসেবে খ্যাত ওই এলাকায় অন্য বন্দিদের চলাচলের ওপর কড়াকড়ি থাকে। নিজামীর ক্ষেত্রেও সে ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’
জানা গেছে, রোববার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে কাশিমপুর কারাগার থেকে মতিউর রহমান নিজামীকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়। এর আগেই নাজিমউদ্দিন রোডের আশপাশের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।
কারাগারের ভেতরও বাড়তি সতর্কতা নেয় কর্তৃপক্ষ। সোমবার সকাল থেকে কারা ফটকে কারারক্ষীদের সংখ্যা বাড়ানো হয়।
কারাসূত্র জানায়, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অবস্থানরত জল্লাদ রাজু, আবুল, হযরত ও ইকবালকে দুপুরের পর সিনিয়র জেল সুপারের কক্ষে ডেকে নেয়া হয়।
সেখানে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন কারা চিকিৎসক বিপ্লব কান্তি। পরে ওই জল্লাদদের মানসিকভাবে ফাঁসি কার্যকরের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়।
সূত্রের দাবি, নিজামীর ফাঁসি কার্যকর করার সম্ভাবনা রয়েছে জল্লাদ রাজু ও আবুলের। এর আগেও তারা একাধিক ব্যক্তির ফাঁসির রায় কার্যকর করেছেন। (যুগান্তর)
: আপডেট ১১:১০ পিএম, ০৯ মে ২০১৬, সোমবার
ডিএইচ