Home / বিশেষ সংবাদ / ‘উকিল সাহেব আমাকে তো আপনি ডুবাচ্ছেন’
উকিল সাহেব আমাকে তো আপনি ডুবাচ্ছেন

‘উকিল সাহেব আমাকে তো আপনি ডুবাচ্ছেন’

উকিল সাহেব আমাকে তো আপনি ডুবাচ্ছেন, আপনার কিছু জানার থাকলে আমার কাছ থেকে জেনে নিন। আপনিতো আমার সব শেষ করে দিচ্ছেন।

ট্রাইব্যুনালে নিজ আইনজীবী মাসুদ রানার প্রতি এভাবেই মন্তব্য করেন ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধে আটক কিশোরগঞ্জের আসামি শামসুদ্দিন আহমেদ।

শামসুদ্দিন পেশায় আইনজীবী ছিলেন। তাই তার পক্ষে নিযুক্ত আইনজীবীর যোগ্যতার সীমাবদ্ধতায় তিনি চুপ থাকতে পারেননি। তিনি ট্রাইব্যুনালে আসামির ডকে থেকে বারবার উত্তেজিত হয়ে ওঠেন।

তবে আইনজীবী মাসুদ রানা কর্তৃক সাক্ষী আব্দুর রশিদকে জেরার বিষয়ে সন্তুষ্ট হতে পারেননি স্বয়ং ট্রাইব্যুনালও। এমনকি এ আইনজীবী আগের দিন বাসায় মামলার বিষয়ে পড়াশুনা করে আসেননি বলেও সরাসরি মন্তব্য করেন ট্রাইব্যুনাল। যদিও আইনজীবী এসময় চুপ থেকেই ট্রাইব্যুনালের সব কথা শুনতে থাকেন।

সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর সদস্য বিচারপতি শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে দুই সদস্যের ট্রাইব্যুনালে এসব ঘটনা ঘটে।

এসময় ট্রাইব্যুনাল আসামির উত্তেজনা দেখে তাকে ডকে চুপ করে বসে থাকতে তিনবার নির্দেশ প্রদান করেন।

তবে এর আগে মামলার সাক্ষী আব্দুর রশিদ ভূঁইয়াকে আসামিকে সনাক্ত করতে বলা হলে আসামি সেই সাক্ষীকে উদ্দেশ্য করেও মন্তব্য করেন।

সাক্ষীকে উদ্দেশ্য করে আসামি শামসুদ্দিন বলেন, ‘দেখ আমাকে দেখ। শপথ নিয়ে মিথ্যে সাক্ষ্য দিচ্ছ। দেখ আমাকে দেখ।’

এসময় আদালত তাকে শান্ত হয়ে বসতে নির্দেশ প্রদান করেন।

উল্লেখ্য, একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের ৫ জনের বিরুদ্ধে ৭টি অভিযোগের ওপর রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ চলছিল ট্রাইব্যুনালে।

এ মামলার অভিযুক্ত পাঁচ আসামির মধ্যে অ্যাডভোকেট শামসুদ্দিন আহমেদ গ্রেপ্তার আছেন। আর পলাতক বাকি চার আসামি হলেন- শামসুদ্দিনের সহোদর সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন মো. নাসিরউদ্দিন আহমেদ এবং রাজাকার কমাণ্ডার গাজী আব্দুল মান্নান, আজহারুল ইসলাম ও হাফিজ উদ্দিন ।

এ মামলায় অভিযোগের ভিত্তিতে অন্তত ৪০ জনকে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী হিসেবে উপস্থাপন করা হতে পারে বলে প্রসিকিউশন পক্ষ জানিয়েছে।

এর আগে গত ২৬ নভেম্বর তদন্তকারী কর্মকর্তা আতাউর রহমান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত প্রসিকউটর সৈয়দ হায়দার আলীর কাছে ৪৫০ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

নাসির উদ্দিন আহমেদ ও শামসুদ্দিন আহমেদের বাড়ি কিশোরগঞ্জে। নাসির উদ্দিন আহমেদ ও শামসুদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার বিদ্যানগর, আয়লা, ফতেপুর বিল, কিরাটন বিলসহ আশেপাশের কয়েকটি গ্রামে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও রাজাকার বাহিনী নিয়ে অত্যাচার নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে।

২০১৩ সালের ৬ জুন তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়। এক বছর পাঁচ মাস ১৮দিন তদন্ত করে গত ২৪ নভেম্বর তদন্ত কাজ শেষ হয়।

অভিযুক্তদের মধ্যে নাসিরউদ্দিন ও শামসুদ্দিনের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক বাহিনীদের সহায়তায় হত্যা, গণহত্যা, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের পাচঁটি অভিযোগে তদন্ত চূড়ান্ত করা হয়েছে।

এর আগে গত ২১ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপক্ষে অভিযোগ গঠনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল-মালুম, সুলতান মাহমুদ সীমন ও রেজিয়া সুলতানা চমন।

অপরদিকে ৪ অক্টোবর অভিযোগ গঠনের বিপক্ষে শুনানি করেন আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আব্দুশ শুকুর খান।