ঈদ কিংবা কোনো বড় উৎসব এলেই দেশে চলে জাল টাকার মহোৎসব। এবারও ঈদুল ফিতর সামনে রেখে সরব বেশকিছু চক্র। নকল এ টাকা তৈরিতে ব্যবহার করা হয় টিস্যু পেপার, প্রিন্টার, ল্যাপটপ ও প্রিন্টারের কালি। পরে সফটওয়্যারের সাহায্যে মাউসে ক্লিক করলে মুহূর্তেই একের পর এক বেরিয়ে আসে ৫০, ১০০, ২০০, ৫০০ ও এক হাজার টাকার জাল নোট। কারবারিরা এতই বেপরোয়া যে ফেসবুকে পেজ খুলে জাল টাকা বেচাকেনার প্রচারণা চালাচ্ছে প্রকাশ্যে। দিচ্ছে হোম ডেলিভারি। চক্রটির প্রধান টার্গেট ঈদ।
সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জালে ধরা পড়েছে এমন বেশকিছু চক্র। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে চক্রটি অভিনব সব অফার দিয়ে জাল নোট ছড়িয়ে দিতে মাঠে নেমেছে। কেউ কেউ আবার জাল নোটের বেশি প্রচারণার জন্য সেই পোস্টগুলো করছে বুস্ট।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ঈদ উপলক্ষে বিশেষ অফার দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ অনলাইনে বিভিন্নভাবে বিক্রি করা হচ্ছে জাল নোট। অগ্রিম অর্ডার নিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় এজেন্টদের মাধ্যমে দিচ্ছে হোম ডেলিভারিও।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় রয়েছে জাল টাকার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকটি চক্র। ফেসবুকে বিভিন্ন পেজ ও গ্রুপ খুলে জাল নোট সরবরাহের জন্য গ্রাহক সংগ্রহ করা হচ্ছে। এসব গ্রুপে যুক্ত হতে পারছে যে কেউ। গ্রুপগুলোতে বিভিন্ন তথ্য আদান-প্রদান হচ্ছে। ফেসবুক থেকে পরে অনেককে সরাসরি যুক্ত করা হচ্ছে জাল নোট কারবারিদের বিভিন্ন এনক্রিপ্টেড অ্যাপসে। আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়াতে যোগাযোগের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপ কিংবা অন্য কোনো অ্যাপস।
অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, ‘জাল টাকা বিক্রি করি’ নামে একটি ফেসবুকে পেজে সম্প্রতি ১০ টাকা থেকে শুরু করে এক হাজার টাকার জাল নোট বিক্রির পোস্ট দেওয়া হয়েছে। ওই পোস্টে উল্লেখ করা হয়েছে- ‘পবিত্র ঈদ সামনে রেখে নিখুঁত ও মসৃণ প্রিন্টসহ সম্পূর্ণ এ গ্রেডের প্রোডাক্ট (জাল নোট) পাওয়া যাচ্ছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কুরিয়ার ও হোম ডেলিভারির ব্যবস্থাও রয়েছে।’
‘জাল নোট’ নামে আরেকটি ফেসবুক পেজে পোস্ট করা হয়েছে- ঈদ বা পূজা উপলক্ষে কারও নকল টাকা প্রয়োজন হলে যোগাযোগ করতে পারেন।
এসব মাধ্যম ঘেঁটে দেখা যায়, এক লাখ টাকার জাল নোট পেতে সব মিলিয়ে খরচ করতে হচ্ছে ১০ হাজার টাকা। তবে সেই ১০ হাজার টাকা একবারে দিতে হচ্ছে না। প্রথম ধাপে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা অগ্রিম পাঠিয়ে দিলেই দুদিনের মধ্যে কুরিয়ারের মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে লাখ টাকার জাল নোট। সেগুলো হাতে পাওয়ার পর বাকি টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হচ্ছে। তবে বেশি পরিমাণে নোট অর্ডার করলে অগ্রিম টাকা কম দিলেও চলে। দুই লাখ টাকার জাল নোটের জন্য অগ্রিম পরিশোধ করতে হচ্ছে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা।
নোট জালকারী চক্রের অপতৎপরতা প্রতিরোধে সম্প্রতি বেশ কয়েকটি নির্দেশনা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে রাজধানীর ৫৮টি ব্যস্ততম পয়েন্টে জাল নোট প্রতিরোধে সচেতনতামূলক ভিডিও প্রচারে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে সব ব্যাংকের ওপর জারি করা এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ঈদের আগে জাল নোট চক্রের অপতৎপরতা বেড়ে যায়। এজন্য ব্যাংকগুলোকে সচেতনতামূলক ভিডিও প্রচারের ব্যবস্থা নিতে হবে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, বিভিন্ন সময়ে রাজধানীর কদমতলীর রাজবাড়ি, ডেমরার বাঁশেরপুল ফরমান খাঁ মার্কেট এলাকায় অভিযান চালিয়ে জাল টাকার কারখানার সন্ধান মেলে। এছাড়া রামপুরা, মোহাম্মদপুর, কেরানীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় জাল নোটের কারখানায় অভিযান চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। একটি সংঘবদ্ধ চক্র নিয়ন্ত্রণ করছে অন্তত অর্ধশতাধিক গ্রুপ। এর বাইরে আছে আরও অর্ধশতাধিক জাল টাকার ডিলার। প্রত্যেক ডিলারের সঙ্গে কমপক্ষে পাঁচ-ছয়জন বাজারজাতকারী আছেন। এসব কারখানায় ভারতীয় রুপিসহ বিভিন্ন দেশের জাল মুদ্রা তৈরি হচ্ছে। ছড়িয়ে পড়ছে দেশ-বিদেশে।
গোয়েন্দা সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে অর্ধশতাধিক গ্রুপ জাল টাকা তৈরি ও বিপণনে জড়িত। প্রতিটি উৎসবের আগে জাল নোট তৈরির চক্রগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে।
জাল টাকা তৈরি ও বিপণনের কাজে জড়িত চক্রের সদস্যরা তিন ভাগে বিভক্ত। একটি গ্রুপ অর্ডার অনুযায়ী জাল নোট তৈরি করে, অপর গ্রুপ টাকার বান্ডিল পৌঁছে দেয়, আরেক গ্রুপ এসব টাকা বাজারে ছড়িয়ে দেয়।
গত ৯ এপ্রিল রাজধানীর ধলপুরের একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে এমনই একটি জাল নোট তৈরি ও বিক্রি চক্রের সন্ধান পায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। ঈদ টার্গেট করে চক্রটির তিন থেকে পাঁচ কোটি জাল টাকা বাজারে ছাড়ার পরিকল্পনা ছিল। তবে তাদের সেই পরিকল্পনা ডিবির অভিযানে নস্যাৎ হয়। গ্রেফতার করা হয় চক্রের প্রধানসহ তিন সদস্যকে।
ডিবি বলছে, এই চক্রটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জাল নোট বিক্রির বিভিন্ন আকর্ষণীয় অফার দিয়ে কাস্টমারদের আকৃষ্ট করতো। তারা এক লাখ জাল টাকা পাইকারি বাজারে বিক্রি করতো আট থেকে ১৫ হাজার টাকায়। মূলত ফুটপাতের দোকানিদের টার্গেট করে অভিনব কায়দায় ছড়িয়ে দেওয়া হয় এসব জাল টাকা।
গ্রেফতারের পর জামিনে বেরিয়ে আবারও জাল নোটের কারবার
চলতি বছরের ২ জানুয়ারি রাজধানীর পল্লবীতে অভিযান চালিয়ে জাল নোট তৈরি চক্রের মূলহোতা ছগির হোসেনসহ তিনজনকে গ্রেফতার করে র্যাব। এসময় এক কোটি ২০ লাখ টাকা সমমানের জাল নোট উদ্ধার করা হয়। র্যাব জানায়, গ্রেফতার ছগির হোসেন ১৯৮৭ সালে বরগুনা থেকে ঢাকায় আসেন। এসময় ইদ্রিস নামে এক জাল টাকার কারবারির সঙ্গে পরিচয় হয় তার। সেখান থেকেই জাল নোট তৈরিতে তার হাতেখড়ি।
ছগির প্রথমে জাল নোট বিক্রি করতেন। পরে রপ্ত করেন নোট তৈরি। ২০১৭ সালে জাল নোটসহ ইদ্রিস ও ছগির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন। বছরখানেক জেল খেটে বেরিয়ে এসে পুনরায় ২০১৮ সাল থেকে শুরু করেন একই কাজ।
পুরান ঢাকায় বিক্রি হয় জাল নোট তৈরির উপকরণ
অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজধানীর পুরান ঢাকায় বেশ কয়েকটি দোকানে গোপনে জাল নোট তৈরির বিভিন্ন উপকরণ বিক্রি হয়। একজন সাধারণ বিক্রেতা সেসব উপকরণ কিনতে গেলে দোকানিরা বিক্রি করেন না। দোকানদারদের নির্দিষ্ট কিছু কাস্টমার রয়েছে। শুধু তাদের কাছেই এসব উপকরণ বিক্রি হয়।
কম পুঁজিতে ধনী হতে ইউটিউব দেখে জাল টাকা তৈরি
ইউটিউব, ফেসবুক ও গুগল থেকে জাল নোট তৈরির বিভিন্ন বিষয়ে কারিগরি জ্ঞান অর্জন করে একটি চক্র। এরপর জমানো টাকা দিয়ে ল্যাপটপ, প্রিন্টার, প্রিন্টিং ডাইস, পেনড্রাইভ, কাগজ, টিস্যু পেপার ও প্রিন্টারের কালিসহ অন্য সরঞ্জামাদি কেনেন তারা। এ চক্রের সদস্যদের বয়স তখনো ১৮ পেরোয়নি। এর দেড় বছরের মধ্যেই র্যাবের হাতে গ্রেফতার হয় চক্রের চারজন। বর্তমানে তারা সবাই প্রাপ্তবয়স্ক। গত ২২ অক্টোবর রাজধানীর চকবাজার, সিরাজগঞ্জ ও খুলনায় অভিযান চালিয়ে চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করে র্যাব।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেসন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, যে কোনো বড় উৎসবের আগে জাল নোটের প্রভাব ঠেকাতে ডিএমপির একাধিক ইউনিট অভিযান অব্যাহত রাখে। এবারও এর ব্যতিক্রম নয়। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এরই মধ্যে থানা পুলিশ ও গোয়েন্দাদের অভিযান শুরু হয়েছে। অব্যাহত রয়েছে অনলাইন নজরদারি।
গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. মশিউর রহমান বলেন, দেশে বড় কোনো উৎসবের আগ মুহূর্তে জাল নোটের কারবারিরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। তারা বাসা কিংবা অফিস ভাড়া নিয়ে এসব জাল নোট তৈরি ও বিক্রি করে। বাসা কিংবা অফিস ভাড়া দেওয়ার আগে মালিকের উচিত প্রত্যেকের এনআইডি কার্ডের কপি সংগ্রহ করে নিকটস্থ থানায় দেওয়া। এছাড়া বাসা ভাড়া নেওয়ার পর ভাড়াটিয়া কী কাজ করছে সেদিকে নজর দেওয়া। সন্দেহজনক কিছু হলেই পুলিশকে খবর দেওয়া।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, রোজা, ঈদ, পূজা ও বিভিন্ন অনুষ্ঠান টার্গেট করে জাল টাকার কারবারিরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। সম্প্রতি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় জাল নোট তৈরি ও সরবরাহের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন জায়গায় অভিযানও চালানো হচ্ছে। এছাড়া র্যাবের সাইবার মনিটরিং টিম সার্বক্ষণিক অনলাইনে নজরদারি করছে। অনলাইনে জাল নোট বিক্রি ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে র্যাব।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (গোয়েন্দা) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, জাল নোট কারবারিরা দেশের অর্থনীতির জন্য অভিশাপ। তাদের রুখতে হলে সবাইকে সচেতন হতে হবে। এছাড়া আইনের ফাঁক-ফোকরে যাতে তারা কারাগার থেকে না বেরোতে পারে সেদিকে নজর দেওয়া জরুরি।
জাল নোট চেনার উপায়
এক. ১০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকাসহ প্রত্যেক নোটের সামনে ও পেছন দুদিকের ডিজাইন, মধ্যভাগের লেখা, নোটের মূল্যমান এবং সাতটি সমান্তরাল সরল রেখা উঁচু নিচুভাবে মুদ্রিত থাকে। ফলে হাত দিলে একটু খসখসে মনে হয়।
দুই. নোটের ডান দিকে ১০০ টাকার ক্ষেত্রে তিনটি, ৫০০ টাকার ক্ষেত্রে চারটি ও এক হাজার টাকার নোটে পাঁচটি ছোট বৃত্তাকার ছাপ আছে, যা হাতের স্পর্শে উঁচু-নিচু লাগে। এ বৈশিষ্ট্য জাল নোটে সংযোজন করা সম্ভব নয়।
তিন. জাল নোটের জলছাপ অস্পষ্ট ও নিম্নমানের হয়। আসল নোটে ‘বাঘের মাথা’ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোগ্রামের স্পষ্ট জলছাপ আছে, যা ভালো করে খেয়াল করলে আলোর বিপরীতে দেখা যায়।
চার. প্রত্যেক মূল্যমানের নোটেই বাংলাদেশ ব্যাংকের লোগো সম্বলিত নিরাপত্তা সুতা থাকে। নোটের মূল্যমান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের লোগো নিরাপত্তা সুতার চারটি স্থানে মুদ্রিত থাকে।
এ নিরাপত্তা সুতা অনেক মজবুত, যা নোটের কাগজের সঙ্গে এমনভাবে সেঁটে দেওয়া থাকে যে নখের আঁচড়ে বা মুচড়িয়ে সুতা কোনোভাবেই তোলা সম্ভব নয়। নকল নোটে এত নিখুঁতভাবে সুতাটি দিতে পারে না।
পাঁচ. ১০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকা মূল্যমানের প্রত্যেক প্রকার নোটের ওপরের ডান দিকে কোণায় ইংরেজি সংখ্যায় লেখা নোটের মূল্যমান রং পরিবর্তনশীল কালিতে মুদ্রিত থাকে। ফলে ১০০ ও ১০০০ টাকা মূল্যমানের নোট ধীরে ধীরে নড়াচড়া করলে মূল্যমান লেখাটি সোনালি থেকে সবুজ রং ধারণ করে। একইভাবে ৫০০ লেখা লালচে থেকে সবুজাভ হয়। অন্যদিকে জাল নোটে ব্যবহৃত রং চকচক করলেও তা পরিবর্তন হয় না।
ছয়. প্রত্যেক প্রকার টাকার নোটে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি, বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোগ্রাম ও নোটের মূল্যমান জলছাপ হিসেবে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোগ্রাম ও নোটের মূল্যমান প্রতিকৃতির তুলনায় উজ্জ্বল দেখায়। জাল নোটে এসব বৈশিষ্ট্য থাকে না।
এছাড়া স্বল্পমূল্যেও বিভিন্ন ব্র্যান্ডের জাল নোট শনাক্তকারী মেশিন আছে। ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে জাল নোট সহজেই পরীক্ষা করা যায়। জাল নোট ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে দেখলে শুধু একটা রেখা দেখা যাবে।
( জাগো নিউজ )