ঈদ উপলক্ষে ৫০ বছর পর নতুন রূপে কুমিল্লার ময়নামতি যাদুঘর

কুমিল্লার লালমাই-ময়নামতির ১৯ কিলোমিটার পাহাড়ী এলাকা জুড়ে রয়েছে সপ্তম থেকে ১২ শতকের বহু পুরাকীর্তি। যেমন, শ্রীভবদের মহাবিহার, কোটিলা মুড়া, চারপত্র মুড়া, রূপবানমুড়া, ইটাখোলা মুড়া, আনন্দ বিহার, রানীর বাংলা ও ভোজ রাজার বাড়ি বিহার প্রভৃতি।

এসব পুরাকীর্তি খননকালে খুঁজে পাওয়া মুল্যবান প্রতœসামগ্রী। এগুলো সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের জন্য ১৯৬৫ সালে শালবন বিহারের পাশে গড়ে তোলা হয় ময়নামতি জাদুঘর।

ঈদকে সামনে রেখে ঢেলে সাজানো হচ্ছে কুমিল্লার ময়নামতি প্রতœতাত্ত্বিক জাদুঘর। প্রতœবস্তু গুলোও সাজানো হচ্ছে নতুন রূপে। নিরাপত্তা ব্যাবস্থা জোরদারের পাশাপাশি লাগানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা।

প্রতিষ্ঠার প্রায় ৫১ বছর পর ময়নামতি জাদুঘরকে এবার নতুন রূপে উপস্থাপন করতে বিরামহীন ভাবে চলছে সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ।
ময়নামতি জাদুঘরে মোট ৪২টি আধারে এসব পুরাবস্তু প্রদর্শিত হচ্ছে। জাদুঘরে প্রবেশপথের বাম দিকে থেকে ১নং প্রদর্শনী আঁধার দিয়ে প্রদর্শনী আরম্ভ হয়েছে।

প্রতœস্থান খননের আবিষ্কৃত স্থাপত্যসমৃদ্ধ ধ্বংসাবশেষের মধ্যে ভূমি-নকশা, ধাতু লিপি ফলক, প্রাচীন মুদ্রা, মৃন্ময় মুদ্রক-মুদ্রিকা, পোড়া মাটির ফলক, ব্রোঞ্জ মূর্তি, পাথরের মূর্তি, লোহার পেরেক, পাথরের গুটিকা, অলংকারের অংশ এবং ঘরে ব্যবহৃত মাটির হাড়ি পাতিল প্রদর্শিত হচ্ছে।

জাদুঘরে প্রদর্শনের উলে¬খযোগ্য পাথর ও ব্রোঞ্জমূর্তি হচ্ছে- বিভিন্ন ধরনের পাথরের দন্ডায়মান লোকোত্তর বুদ্ধ মূর্তি, ত্রি-বিক্রম বিষ্ণুমূর্তি, তারা মূর্তি, মারীছী মূর্তি, মঞ্জুরের মূর্তি, পার্বতী মূর্তি, হরগৌরীমূর্তি, নন্দী মূর্তি, মহিষমর্দিনী মূর্তি, মনসা মূর্তি, গনেশ মূর্তি, সূর্যমূর্তি, হেরুক মূর্তি এবং ব্রোঞ্জের বজ্রসত্ত্ব মূর্তি।

এছাড়াও এ জাদুঘরে রয়েছে ব্রোঞ্জের তৈরী ৫শ’ কেজি ওজনের ০ দশমিক ৮৪ মিটার ব্যাস ও ০ দশমিক ৭৪ মিটার উচ্চতার বিশালাকায় একটি ঘন্টা। এ জাদুঘরের আধারে সুরক্ষিত রয়েছে ময়নামতিতে পাওয়া স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা। পোড়ামাটির ফলক, ব্রোঞ্জ ও তামার তৈরী সামগ্রী। লোহার তৈরী সামগ্রী। মাটির তৈরি বিভিন্ন প্রকারের খেলনা। কাঠের কাজের নিদর্শন। তুলাট কাগজে লেখা প্রাচীন হস্তলিপির পান্ডুলিপি। বিভিন্ন নমুনার মৃৎপাত্র ইত্যাদি।

জাদুঘরের ভেতরে বসানো হয়েছে টাইলস, করা হয়েছে রঙের কাজ। সার্বিক নিরাপত্তা ব্যাবস্থা জোরদারে বাড়ানো হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। নিরাপত্তার জন্য লাগানো হচ্ছে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা।

ঈদ উপলক্ষে নতুন সাজে সাজছে কুমিল্লার ময়নামতি জাদুঘর। অবশ্য জাদুঘরের মূলভবনে গুরুত্ব¡পূর্ণ পুরাবস্তু প্রদর্শনের জন্য স্থান সংকুলান না হওয়ায় ১৯৭০-৭১ সালে এর দক্ষিণ পাশ বর্ধিত করায় ভবনটি তৈরী করা হয়। এটি বাদ দিলে প্রতিষ্ঠার ৫১ বছর পর নতুন রূপ পাচ্ছে কুমিল্লার ময়নামতির এ প্রতœতাত্বিক জাদুঘটি।

২০ লাখ ৫৫ হাজার টাকা ব্যায়ে ঢেলে সাজানো হচ্ছে এটি। সেই সাথে সংস্কার হচ্ছে শালবন বিহারসহ আরো কয়েকটি বিহার ও মন্দিরের। ঈদকে সামনে রেখে বিরামহীন চলছে সৌন্দর্য বর্ধন ও সংস্কার কাজ।

জাদুঘরের সূত্র জানায়, ময়নামতি জাদুঘরের সঙ্গে সংস্কার হচ্ছে শালবন বিহারের ভিক্ষু কক্ষ, আনন্দ বিহারের ভেতরের দেয়াল, ভোজ বিহারের ভেতরের দেয়াল ও শত রতœ মন্দিরের সংস্কার।

এ ছাড়া রেস্ট হাউসের সংস্কার হচ্ছে। ময়নামতি জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান আহমেদ আবদুল¬াহ জানান, ঈদুল ফিতরের আগে নতুন সাজে সাজবে ময়নামতি জাদুঘর। জাদুঘর ও বিহার সংস্কার কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। গাড়ি পার্কিং মাঠটি নিরাপদ করতে সীমানা দেয়াল করা হচ্ছে। এদিকে জাদুরের কাছে দীর্ঘদিন পর প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের নিজস্ব বিভাগীয় অফিস নির্মিত হচ্ছে। ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে দ্বিতল ভবনের নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে।

সৌন্দর্য বর্ধন ও সংস্কারের ফলে পর্যটক আকৃষ্ট হবে এবং রাজস্ব আয় বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কুমিল্লা জেলা শহর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে কোটবাড়ি এলাকায় অবস্থিত এ জাদুঘরটি।

যেভাবে যাবেন ময়নামতি জাদুঘরে:
ঢাকা থেকে কুমিল্লা ৯৬ কিলোমিটারের পথ। ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে সরাসরি বাসে অথবা কমলাপুর থেকে ট্রেনেও যেতে পারেন। বাসে গেলে প্রাইম, তিশা, এশিয়া লাইন ইত্যাদি বাসে আপনি সরাসরি যেতে পারেন। বাস ভাড়া জনপ্রতি দেড়শ থেকে আড়াইশ টাকার মধ্যে। এছাড়া চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও ফেনীর বাসে চড়েও পৌঁছাতে পারেন কুমিল্লা সেনানীবাস পর্যন্ত। এখান থেকে অটোরিক্সা বা রিক্সায় করে অল্পসময়েই যাওয়া যায় ময়নামতি প্রতœতত্ত্ব যাদুঘরে।

টিকিট সংগ্রহ করবেন যেভাবে:
জাদুঘরের গেটের পাশেই রয়েছে টিকিট কাউন্টার। প্রতি টিকিট এর দাম বিশ টাকা। তবে পাঁচ বছরের কম বয়সী কোন শিশুর জন্যে টিকিট প্রয়োজন নেই। তবে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদেও ক্ষেত্রে প্রবেশ মুল্যে নির্ধারন করা হয়েছে ৫ টাকা। সার্কভুক্ত দেস সমূহের পর্যটকদের জন্যে প্রবেশ মূল্য একশত টাকা হলেও বিশ্বের অন্যান্য বিদেশী পর্যটকদের জন্য টিকিটের মূল্য দুইশত টাকা করে।

সময়সূচি:
গ্রীষ্মকালে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিহার খোলা থাকে। মাঝখানে দুপুর ১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত আধ ঘণ্টা বন্ধ থাকে। আর শীতকালে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। শীতকালেও দুপুর ১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত বন্ধ থাকে।

এছাড়া বছরের সবসময়ই শুক্রবারে জুম্মার নামাযের জন্যে সাড়ে বারোটা থেকে তিনটা পর্যন্ত বন্ধ থাকে। রোববার সাধারণ ছুটি এবং সোমবার বেলা ২টা থেকে খোলা থাকে। এছাড়াও সরকারি বিশেষ ছুটির দিনে জাদুঘর খোলা থাকে।

চাঁদপুর টাইমস, কুমিল্লা করেসপন্ডেন্ট :আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৯:০০ এএম, ৬ জুলাই ২০১৬, বুধবার
ডিএইচ

Share