কচুয়া

ঈদ আনন্দ ও কোরবানি থেকে বঞ্চিত কচুয়ার নাছিরের পরিবার

গাজীপুরের টঙ্গী টেম্পাকো ফয়েল্স লিঃ কারখানায় গত শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) ভোরে ভয়াবহ গ্যাস বিস্ফোরনের ঘটনায় চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার তেগুরিয়া গ্রামের অধিবাসী মো. নাছির উদ্দিন পাটোয়ারীর (৫৪) পরিবারে ঈদ আনন্দের ছোঁয়া লাগেনি।

নাছির উদ্দিন পাটোয়ারী ফিরে আসার পথ চেয়ে আছে তার শোকাহত পরিবারটি। তিনি কি আদৌ মারা গেছেন, নাকি জীবিত আছেন এ নিয়ে সংশয় রয়েছে পরিবারের মাঝে।

কেউ কেউ ধারনা করছেন তিনি এখনো বেঁচে আছেন, আবার কেউ কেউ ধারনা করছে হয়তো তিনিও অন্য শ্রমিকদের মতো ভয়াবহ আগুনের লেলিহানে মারা গেছেন।

ঘটনার পর থেকেই নাছির উদ্দিন পাটোয়ারীর পরিবারের সদস্যরা টানা ৭ দিন ধরে খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দুশ্চিন্তায় দিনানিপাত করছেন।

নাছির উদ্দিন পাটোয়ারী টঙ্গীর টেম্পাকো ফয়েল্স লিঃ কারখানার সিনিয়র অপারেটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি ১৯৯৩ সাল থেকে ওই কারখানায় একজন দক্ষ অপারেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ১০ সেপ্টেম্বর শনিবার তিনি কচুয়ার গ্রামের বাড়িতে আসার কথা ছিল।

নাছির উদ্দিন পাটোয়ারীর গ্রামের বাড়িতে গিয়ে এক হৃদয় বিদায়ক দৃশ্য চোখে পড়ে। তার একমাত্র শিশু পুত্র নাকিবুল পাটোয়ারী রুহান (৫) এখনো জানে না তার বাবা কোথায় আছে?

গত মঙ্গলবার পবিত্র ঈদের দিন ঈদ-উল-আযহার নামাজ পড়তে যায়নি সে। শুধু বার বার তার মাকে প্রশ্ন করে বাবা কখন বাড়ি আসবে।?

অবুঝ সন্তানের অভাগী মা রাশেদা আক্তার বার বার কাপড়ের আচলে চোখের পানি মুছে আর বলছে তোমার বাবা ঈদে ছুটি পায়নি, তাই বাড়ি আসেনি। শিশু রুহান অপর তিন বোন শিরিন সুলতানা নাজমিন (২১), জাকিয়া সুলতানা (১৮) ও ফাহমিদা সুলতানা নুপুরের (১২) ঘাড়ে চড়ে এদিক-ওদিক ছুটাছুটি করছে, কিন্তু তার পরও সে জানে না তার বাবা কি আদৌ বেঁচে আছে কিনা। প্রতিদিন সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত নাছির উদ্দিন পাটোয়ারীর বাড়িতে শত শত মানুষ ও পাড়া পড়শিরা ভিড় জমায়। এই বুঝি নাছির উদ্দিন পাটোয়ারী সবাইকে চমকে দিয়ে বাড়ি আসছেন, এমন আবেগ সকলের।

তার স্ত্রী রাশেদা আক্তার চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘জানিনা আল্লাহ তা’য়ালা আমাকে ও আমার সন্ত্রানদের কী অগ্নি পরীক্ষায় ফেলেছেন। ঈদের কোরবানির জন্য ছেলেকে নিয়ে আমার স্বামীর গরু কেনার কথা ছিল। পরিবারের সবার সাথে ঈদ করা হলো না তার।’

তিনি আরো জানান, ‘আমার মন বলছে আমার স্বামী এখনো বেঁচে আছে। আমি ঘরে এসে তাকে প্রতিনিয়ত সন্ধ্যার আলোতে টর্চ লাইটে তাকে খুঁজে ফিরি। আমার ছোট্ট সন্তানের সাথে নাকি দুষ্টমির ছলে ঘরের কোনে লুকিয়ে আছে।’

এভাবে আবেগী কণ্ঠে কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এবং তার সন্তানদের আহাজারিতে আকাশ ভারি হয়ে ওঠে।

তেগুরিয়া গ্রামের অধিবাসী মো. জহিরুল ইসলাম পাটোয়ারী চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘নাছির উদ্দিন পাটোয়ারী একজন সৎ ও নিষ্ঠাবান ব্যক্তি ছিলেন। ব্যক্তি জীবনে কোন দিন তার সাথে এলাকায় কারো দ্বন্দ্ব বা বিরোধে লিপ্ত হননি।’

তাঁর দাবি, ‘কারখানায় ভয়াবহ গ্যাস বিস্ফোরণে এ পর্যন্ত ৩৫ জনের লাশ পাওয়া গেলেও নাছির উদ্দিন পাটোয়ারীকে পাওয়া যায়নি। ফলে তঁরা ভীষন দুশ্চিন্তায় রয়েছি। আমরা দোয়া করি তিনি জীবিত অবস্থায় তার স্ত্রী সন্তানদের কাছে ফিরে আসুক। আর যদি তিনি ওই দুর্ঘটনায় মারা যায় তার লাশটি পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হোক।

এদিকে ঘটনার পর থেকে নাছির উদ্দিন পাটোয়ারীর পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা টঙ্গীর টেম্পাকো ফয়েল্স লিঃ কারখানা এলাকায় তার ফিরে আসা ও টঙ্গীর স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে তাকে হন্য হয়ে খুঁজছেন।

: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৭:১০ পিএম, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬, শুক্রবার
ডিএইচ

About The Author

প্রতিবেদক- জিসান আহমেদ নান্নু, কচুয়া
Share