পরিবারের সাথে করতে হবে ঈদ। তাই কর্মজীবনের দীর্ঘ জটলা থেকে বেরিয়ে আসার যুদ্ধে যেনো নেমেছে সবাই। যে কোনোভাবেই যেতে হবে বাড়ি, ভিড় আর ভাড়া যতই হোকনা কেনো। এমতাবস্থায় একটি যানবাহনে চড়তে যে প্রচেস্টা চলে, তাকে প্রতিনিয়ত যুদ্ধই বলা চলে। কর্মস্থল থেকে ফেরা মানুষের ঢল যখন চাঁদপুরের মতো ছোটো আকৃতির মফস্বল শহরে পড়ে, তখন ধারণক্ষমতা হারিয়ে বেসামাল হয়ে ওঠে এই শহরের সকল ব্যবস্থা।
শুধুমাত্র আকাশপথ ছাড়া বাস, ট্রেন ও লঞ্চ, যোগাযোগ মাধ্যমের অন্যতম তিনটি’ই রয়েছে চাঁদপুরবাসীর জন্যে। তবুও যেনো যথেষ্ট নয়। এর কারণ অনুসন্ধানে দেখা যায়, চট্টগ্রা থেকে ট্রেনযোগে চাঁদপুর হয়ে লঞ্চ-স্টিমারে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরতে হয়, যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরা, বরিশাল, পটুয়াখালি, ফিরোজপুর, শরিয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জসহ দেশের দক্ষিনাঞ্চলের কয়েক লক্ষাধিক মানুষের।
এ ছাড়াও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়ক পথে ঈদে দীর্ঘ যানজট এড়াতে চাঁদপুর হয়ে লঞ্চযোগে যাতায়াত করে পার্শবর্তী জেলা সমূহের আরো কয়েক লক্ষাধিক মানুষ। এসব অতিরিক্ত মানুষের চাপে ঈদের কয়েকদিন আগ থেকেই চাঁদপুর শহরের চিরচেনা চিত্রটি পাল্টে যায়। দীর্ঘ যানজটেরর সাথে যোগ হয় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের সিন্ডিকেট। সাধারণোত যেখানে ৫০ টাকার ভাড়া, সেখানে যাত্রীদেরকে গুনতে হয় ১০০-১৫০ বা তারও অধিক অতিরিক্ত ভাড়া। ফলে যানজট আর অতিরিক্ত ভাড়ায় দিশেহারা হয়ে ওঠে চাঁদপুর শহরে বসবাসরত নাগরীক এবং ঈদে বাড়ি ফেরা মানুষগুলো।
যদিও চাঁদপুর জেলা প্রশাসন, পুশিল প্রশাসন, স্কাউটসহ বিভিন্ন ভলান্টিয়ার সংগঠনের সেচ্ছাসেবকদ্বারা গঠিত যাত্রী নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রতি বছরই যোরদার করা হয়ে থাকে। কিন্তু ঘরমুখো মানুষের ঢল নামতে শুরু করলে প্রয়োজনের তুললনায় তা যতসামান্য হয়ে ওঠে। আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের সাথে সেচ্ছাসেবি সংগঠনের সদস্যরাও যানজট নিরসনে টানা দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়।
তার পরেও যানজট নিরসন না হওয়ার কারণ উদঘাটনে ঈদপূর্ব দু’দিনের অনুসন্ধানে দেখা যায়, দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা পরিকল্পিতভাবে শহরের রাস্তাগুলো ব্যবহার না করায় যানবাহনগুলো নিজেদের ইচ্ছামাফিক যে খানে সেখানে পার্কিং করে যাত্রী ওঠানামা করছে। অযথা পার্কিং করে যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা করার ফলেই শহরের অধিকাংশ জায়গায় যানজট লেগেই থাকে। বিশেষ করে শহরের বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় ট্রাফিক ব্যবস্থা এতোটাই দুর্বল থাকে যে, এ খানে যানচলাচলে কোনো প্রকার শৃংখলা থাকে না।
শুক্রবার (১৫ জুন) বেলা ৩টায় শহরের ইলিশচত্তর থেকে চেয়ারম্যানঘাটা পর্যন্ত অযথা যানজট লেগে থাকতে দেখা যায়। বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় দায়িত্বরত সার্জেন্ট আলম জানায়, এখানে ৪ জন ট্রাফিক পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে। তবে তার কথা অনুযায়ী সেখানে চারজন নয়, দু’জনকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। শহরের এই গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় এতো স্বল্প সংখ্যক ট্রাফিক পুলিশ দ্বারা যানজট নিরসন করা কতটুকু সম্ভব তা প্রশ্ন থেকে যায়।
এ দিকে ঘরে ফেরা মানুষের সবছেয়ে বড় বিড়ম্বনায় পড়তে দেখা যায়, যাতায়াত ভাড়া নিয়ে। চাঁদপুর বাসষ্ট্যান্ড থেকে অন্য যে কোনো সময় ফরিদগঞ্জ, হাজীগঞ্জের ভাড়া ৪০-৫০টাকা। সেখানে সিএনজি চালকরা জনপ্রতি ভাড়া হাকাচ্ছেন ১০০-১৫০ টাকা। কেনো কোনো চালক জনপ্রতি ২০০ টাকাও হাকিয়ে বসছেন। আর রিজার্ব নিতে চাইলে ১২০০-১৫০০ টাকা ভাড়া হাকাচ্ছেন সিএনজি ড্রাইভাররা। এমন অতিরিক্ত ভাড়ার চাপে দিশেহারা হয়ে ওঠছেন সাধারণ যাত্রীরা।
অতিরিক্ত ভাড়া যারা চায়, তাদের ব্যাপারে আইনশৃংখলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ দেয়ার কথা বললে যাত্রীরা তা পাত্তাই দিতে চাইচেন না। এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, এমনিতেই বিড়ম্বনায় বাচতেছিনা আবার অভিযোগ দিবো। আমাদের অভিযোগ শোনারমত সময় তাদের আছে?। যাত্রীদের এ দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে চালকরাও রয়েছে ফুরফুরে মেজাজে। কয়েকজন চালকের সাথে অতিরিক্ত ভাড়ার বিষয়টি প্রশ্ন করতেই একবাক্যে জবাব দেন ঈদের পর থেকে ৬ দিন গ্যাস বন্ধ, যা কামানোর এখনই কামাতে হবে। তাদের দাবি দীর্ঘ লাইনে থেকে গ্যাস নিতেইে দিন পার হয়ে যায় এবং লঞ্চ ঘাটেও বসে থাকতে হয় দীর্ঘ সময়। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে চাদাবাজিতো রয়েছে। তাই ভাড়া বেসি নিতে হচ্ছে। মালিক জমা তুলে তার পর আমাদের ঈদ।
বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে শহরের সচেতন মহলকে। এ ব্যাপারে সময়োপযোগি একটি সুন্দর পরিকল্পনা গ্রহণ সময়ের দাবি। আগামি দিনে ঈদে ঘরে ফেরা মানুষের এ ধরণের বিড়ম্বনা থেকে রক্ষায় একটি কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন সচেতন মহল। আর তা হতে পারে লঞ্চ টার্মিনাল থেকে (প্রস্তাবিত আধুনিক নদীবন্দর) নদীর পাড় ঘেসে বাসষ্ট্যান্ড পর্যন্ত ওয়ান ওয়ে পদ্ধতিতে বিকল্প সড়ক তৈরি করা। তা হলে (পাশ্ববর্তী জেলাসহ উপজেলা থেকে আসা) শহরের ওপর যানবাহনের চাপ অনেকটাই কমে আসবে।
প্রতিবেদক : মুসাদ্দেক আল আকিব