রমজান ঘিরে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছিল। মাঝে কয়েকদিন দাম কমলেও আবার ঈদুল ফিতরে মুরগির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দাম বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা। তবে ঈদের পাঁচ দিন পরও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে মুরগি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদ উদযাপনে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার পর এখনো পুরোপুরি ঢাকায় ফিরে আসেনি মানুষ। ফলে বাজারও জমে উঠছে না। বিক্রি কম হচ্ছে। তা ছাড়া মুরগির আমদানি কম হওয়ায় দাম কমানো যাচ্ছে না।
এদিকে রোজা শেষ হলেও সবজির দাম তেমন কমেনি। হাতেগোনা কয়েকটি সবজির দাম কমা ছাড়া অধিকাংশই সবজি আগের দামে আছে।
শুক্রবার সকারে রাজধানীর বসুন্ধরায় কাঁচা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা কেজিতে। এ দামে ঈদের আগে বিক্রি হচ্ছিল। লেয়ার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা কেজি। এ ছাড়া সোনালি জাতের মুরগি ৩৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা, খাসির মাংস প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকা।
মুরগি কিনতে এসেছিলেন বেসরকারি কোম্পানিতে কর্মরত আল আমিন হোসেন। কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি জানান, ঈদের আগে যে দামে মুরগি কিনেছি, সে দামে এখনো কিনতে হচ্ছে। বাসায় মেহমান এসেছে। তাই মুরগি কিনতে বাধ্য হচ্ছি। বর্তমানে ব্রয়লার মুরগির যে দাম তা মনে হচ্ছে গরুর মাংসের দামে কিনতে হচ্ছে। কয়েকটি দোকান দেখলাম কেউ ২৫০ টাকার নিচে দিচ্ছে না।
মুরগির এত কেন দাম এ বিষয়ে বসন্ধুরা এলাকার মুরগি ব্যবসায়ী সোহেল রানার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা খুচরা ব্যবসায়ী, মুরগির পাইকারি ব্যবসায়ী ঈদের সময় থেকে মুরগির দাম বাড়িয়েছে। আগে যে মুরগি কিনেছি ২০৭ টাকা কেজি, সেই মুরগি এখন কিনতে হচ্ছে ২৪৭ টাকা কেজিতে। এ কারণে ২৫০ টাকার বেশি বিক্রি করতে হচ্ছে আমাদের।
একাধিক ক্রেতা অভিযোগ করে বলেন, মুরগি ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়েছে। এখানে সরকারের কিছুটা গাফিলতি রয়েছে। এটা শক্তভাবে মনিটরিং করলে অবৈধভাবে এভাবে দাম বাড়াতে পারতেন না ব্যবসায়ীরা। শুধু তাই নয়, এর সঙ্গে জড়িত আছে প্রাণিসম্পদের উচ্চপদস্থ অসাধু কিছু কর্মকর্তা।
সবজি বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, টমেটো ৪০ টাকা, বরবটি প্রতি কেজি ৮০ টাকা, সজিনা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১২০ টাকা, সিম প্রতি কেজি ৮০ টাকা, লেবু প্রতি হালি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা, মুলা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা, পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫০ টাকা, যা আগে ছিল ৪০ টাকা।
এদিকে চড়া দামের মধ্যেও কয়েকটি সবজির দাম ঈদের আগের দাম থেকে কিছুটা কমেছে। পটোল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা, যা রমজানে ছিল ৮০ টাকা। শশা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা, যা আগে ছিল ১৬০ টাকা। বেগুন প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা, যা আগে ছিল ১০০ টাকা। কাকরোল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা, যা আগে ছিল ১৬০ টাকা।
মাছ বাজারে গিয়ে দেখা যায়, এখনো তেমন বাজার জমে ওঠেনি। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আরও কয়েক দিন পর মাছ বাজার জমে উঠবে।
সবজির দাম না কমানোর কারণ হিসেবে সবজি ব্যবসায়ী মাসুম বলেন, এখন সবজি আমদানি কম হচ্ছে । ফলে আর দাম কমছে না । তবে বর্ষার সময় সবজি বেশি উৎপাদন হয় । তখন কমতে পারে।
অন্যদিকে মুদি দোকানে গিয়ে দেখা যায়, চিনি বিক্রি হচ্ছে ১১৫ টাকা, সয়াবিন তেল ১৮৭ টাকা, ডিম ৪৫ টাকা হালি, মোটা চাল ৫৮ থেকে ৬০ টাকা কেজি। মিনিকেট চাল ৭৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। রসুন প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা। আদা বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি; যা ঈদের আগে ছিল ১২০ থেকে ১৪০ টাকা।
বাজার করতে এসেছিলেন বেসরকারি কোম্পানিতে কর্মরত আবুল কাসেম। তিনি জানান, ভাই কী আর বলব! অল্প বেতনে চাকরি। ভেবেছিলাম রমজান শেষে সব কিছুর দাম কমবে। কিন্তু দাম কমেনি। বরং অনেক কিছুর দাম বেড়েছে।
বাজার করতে এসে কথা হয় ইসলামী ব্যাংকে কর্মরত আজহার মাহমুদের সঙ্গে। তিনি জানান, রমজানে যেভাবে পণ্যের দাম বেড়েছিল, রমজান শেষ হলে কমবে। বরং ঈদে মুরগির যে দাম বেড়েছে, তা কখনো এভাবে এত দাম বাড়েনি। এখনো দাম কমেনি। আদৌ দাম কমার সম্ভাবনা নিয়ে সংশয় আছে।
টাইমস ডেস্ক/ ২৮ এপ্রিল ২০২৩