মেঘনা-ডাকাতিয়া আর ধনাগোদা নদীর জলধারায় বিধৌত দেশের অন্যতম প্রাচীন জনপদ চাঁদপুর। মেঘনা কন্যা চাঁদপুরকে নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। কেউ বলেন,‘রুপসী চাঁদপুর’ কেউ বলেন,‘ইলিশের দেশ চাঁদপুর’। চাঁদপুরের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে হাজার হাজার প্রত্নসম্পদ। মেহের কালীবাড়ি,হযরত শাহরাস্তি ও তার দরগা,পঞ্চদশ শতকের পর্তুগীজ দুর্গ,ঐতিহ্য একটি মোঘল গ্রাম অলিপুর ও দুটি মসজিদ-স্হাপত্য শৈলীর অনুপম নিদর্শন,লোহাগড়া মঠ, হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদ,মৎস গবেষণা কেন্দ্র,পদ্মা-মেঘনা মিলনস্হল,শ্রী শ্রী জগন্নাথ মন্দির,মনমুড়া,সাহার পাড়ের দিঘি,উজানী বখতিয়ার খা মসজিদ,নাটেশ্বর রায়ের দিঘি,কড়াইতলী জমিদার বাড়ি, সাহাপুর রাজবাড়ি,কাশিমপুর রাজবাড়ি চাঁদপুর জেলার দর্শনীয় স্হান।
ঐতিহাসিক রূপসা জমিদার বাড়ি
চাঁদপুর শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে ফরিদগঞ্জ উপজেলা সদরের পাশে রূপসা বাজারের পশ্চিম দক্ষিণ কোনে নজর দিলেই চোখে পড়বে জমিদার প্রাসাদ। পাশেই কারুকার্জ খচিত একটি মসজিদ।
মসজিদের দক্ষিণ পাশে একটি কবরস্থান। এর প্রতিটি ফলকে লেখা রয়েছে চিরনিদ্রায় শায়িত ব্যক্তিদের সুকর্মের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা। পথ ধরে সামনে এগুলেই চোখে পড়বে ঘাঁট বাঁধানো দীঘি।
তবে আগের সে দীঘি এখন আর নেই। সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ার পথে রয়েছে জমিদার বাড়ির পুরো পরিবেশ।
বাড়িটির সামনে তাকালে নজরে পড়বে জমিদারবাড়ির ঐতিহ্য সেই কাছারি ঘর। প্রায় দু’শতাব্দির আগের কথা। আঠারো শতকের মাঝামাঝি সময়ে রূপসার জমিদারদের গোড়াপত্তন।
গ্রামের নাম রূপসা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সুর্দীর্ঘ ঐতিহ্যই এ রূপের অহংকার। যখন এ অঞ্চলের বেশিরভাগ জনপদগুলো উন্নত সভ্যতার আলো দেখেনি।
চাঁদপুর জেলার সু-প্রাচীন জনপদ ফরিদগঞ্জ উপজেলার রূপসা গ্রাম তখনও সমৃদ্ধ ছিলো। সমৃদ্ধশালী এ গ্রামটির গৌরবময় ইতিহাসের সাথে জড়িত আছে এ গ্রামের ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি।
জমিদারবাড়ি ভেতরের অংশ ঘুরে দেখা যায়, বাড়ির অভ্যন্তরে আজো বসবাস করছে ওইসময়ে জমিদারদের কর্মচারী হিসেবে থাকা পাইক-পেয়াদা, সৈনিকদের প্রায় ৪০টি পরিবার।
আবার তাদের অনেকেই সেখানে জায়গা কিনে বসতবাড়ি নির্মাণ করে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। নানা কারণে জমিদার বাড়ির অনেক সম্পত্তির মালিকও এখন তাদের প্রজা ও কর্মচারীরা।
ঐতিহাসিক স্থান চাঁদপুরের রূপসা জমিদার বাড়িতে সে জমিদারদের খাজনা আদায়ে অত্যাচার নির্যাতনের কোনো ভয়ঙ্কর স্মৃতি চিহ্ন নেই । তাইতো আজও সাধারণ মানুষের কাছে অনেক স্মরণীয় আর ভালবাসার স্থান হিসেবে রয়ে গেছে রূপসা জমিদার বাড়ি।
চাঁদপুর জেলার মেঘনা নদীর উত্তর পাড়ের ঐতিহ্যবাহী রূপসা জমিদার বাড়ির কথা। জমিদারের জমিদারি না থাকলেও এতটুকু সম্মান আর শ্রদ্ধার কোনো ঘাটতি হয়নি প্রজা প্রিয় জমিদারদের প্রতি সাধারণ মানুষের।
তাইতো এ এলাকার সাধারণ মানুষ আজো জমিদারদের পূণ্যময় কাজগুলোর প্রশংসা করতে ভুলেন না। জমিদারি প্রথা থাকাকালীন প্রজাদের খাজনার টাকায় ভোগ বিলাস না করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট, মসজিদ-মাদ্রাসাসহ অনেক কিছুই স্থাপন করে গেছেন জমিদাররা।
বড় স্টেশন মোলহেড:
চাঁদপুর শহরের বড় স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত এ মোলহেড নদীবিধৌত চাঁদপুরের প্রধানতম আকর্ষণীয় স্থান। মূলত: এটি চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধের একটি অংশ।
মোলহেড সংলগ্ন পদ্মা-মেঘনা-ডাকাতিয়ার মিলনস্থল রূপালী ইলিশের উৎকৃষ্টতম প্রজনন কেন্দ্র। সাগর থেকে উঠে আসা মা-ইলিশ এ মোলহেড সংলগ্ন ত্রি-মোহনায় ডিম ছাড়ে এবং জাটকা থেকে কিশোর ইলিশ (টেম্পু ইলিশ) পর্যন্ত বৃদ্ধি এ মোলহেড সংলগ্ন ত্রি-মোহনায় ঘটে। তাই দেশের ইলিশ উৎপাদনে এ ত্রি-মোহনার গুরুত্ব অসীম। মোলহেড শুধুমাত্র রূপালী ইলিশের ডিম ত্যাগ এবং বেড়ে ওঠার স্থান হিসেবেই খ্যাত নয়,এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও অতুলনীয়।
পূর্ণাঙ্গ বর্ষায় পদ্মা-মেঘনা-ডাকাতিয়ার এ ত্রি-মোহনায় জলরাশিতে বড় আকারের ঘূর্ণি সৃষ্টি হয় এবং বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ে এই মোলহেডে। এ সময়ে বিপুল পরিমাণ জলরাশির গর্জন এবং ত্রি-মোহনায় পানির তলদেশে তীব্র স্রোতের ফলে মোলহেডে কম্পন অনুভব করা যায়। আবার শান্ত নদীতে স্বচ্ছ জলরাশি, চলমান অসংখ্য যাত্রীবাহী নৌকা, লঞ্চ-স্টীমার এবং ছায়া ঘেরা মোলহেড এক নৈসর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এখানে সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখার জন্য প্রতিদিন শত শত লোকের সমাগম ঘটে।
মোহনপুর পর্যটন কেন্দ্র:
পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে চাঁদপুরের মতলব উত্তরের মেঘনা নদীর পাড়ে কক্সবাজারের আদলে ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে তোলা মিঠা পানির মিনি সমুদ্র সৈকত। মোহনপুর পর্যটন কেন্দ্রে প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কয়েকশ পর্যটক দলবেঁধে নৌ পথে ও সড়ক পথে ঘুরতে আসছেন।
সাঁতার না জানলেও পর্যটকরা মিঠা পানির এই সমুদ্র সৈকতে সম্পূর্ণ নিরাপদে গোসলে করতে পারেন। পর্যটন কেন্দ্রের ভেতরে রয়েছে থিম পার্ক, কটেজ, মার্কেটসহ বিভিন্ন ধরনের বিনোদন ব্যবস্থা। পর্যটন কেন্দ্রে প্রবেশ মূল্য ১০০ টাকা। ভেতরে রয়েছে উন্নত মানের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অত্যাধুনিক রেঁস্তোরা দ্য শিপ ইন। সভা, সেমিনার করার মতো এই রেঁস্তোরাটিতে ৫ হাজার লোক একসঙ্গে বসতে পারেন। এছাড়াও রয়েছে উন্মুক্ত বার বি কিউ কর্ণার। পর্যটন কেন্দ্রের বাইরে ঝাউবন, টেস্ট অব হেভেনসহ কয়েকটি খাবার রেঁস্তোরা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নৌ পথে লঞ্চ ও নৌকায় এবং সড়ক পথে প্রাইভেট গাড়ি নিয়ে পর্যটকরা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখানে ঘুরতে আসছেন।
হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদ
প্রাকৃতিক শোভায় সুশোভিত হাজীগঞ্জ উপজেলায় বিরল কারুকার্য খচিত কর্মকুশলতার অনন্য নিদর্শণ উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ মসজিদগুলোর অন্যতম।
জুমাতুল বিদার বৃহত্তম জামাতের মসজিদ হিসেবে খ্যাত হজীগঞ্জে এই ঐতিহাসিক জামে মসজিদটি অবস্থিত। বাংলা একাদশ শতকের কাছাকাছি সময়ে হযরত মকিম উদ্দিন (রঃ) নামে এক বুজুর্গ অলীয়ে কামেল ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে আরব ভূমি হতে স্ব-পরিবারে চাঁদপুরের বর্তমান হাজীগঞ্জ অঞ্চলে আসেন।
পরবর্তীতে তারই বংশধর হাজী মুনিরম্নদ্দিন (মনাই গাজী) এর প্র-পৌত্র হাজী আহমদ আলী পাটোয়ারী (রঃ) হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক জামে মসজিদের জন্য জায়গা ওয়াকফ করে মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন। সর্বমোট ২৮,৪০৫ বর্গফুট আয়তনের এই বিশাল মসজিদটির রয়েছে ১৮৮ ফুট উচ্চতার একটি মিনার। মিনারের চুড়ায় উঠার জন্য রয়েছে সিঁড়ি। অসংখ্য ভক্ত মুসুলস্নী উক্ত মিনারের চুড়ায় আরোহন করে থাকেন। বর্তমানে মসজিদটিতে হাজার হাজার মুসুলস্নী তাদের প্রার্থণার কার্যক্রম সম্পাদন করে থাকেন।
হযরত শাহরাস্তি (রঃ) এর মাজার এবং মসজিদ
বাংলার অন্যতম সুফি মুসলিম ব্যাক্তিত্ব হলেন হযরত শাহরাস্তি (রঃ)। উত্তর-পূর্ব বাংলায় মুসলমানদের আন্দোলন এবং বাংলাদেশে ইসলাম ধর্মের প্রচারে তাঁর নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে।
মধ্যপ্রাচ্য, মধ্য এশিয়া, ভারতীয় উপমহাদেশ এবং পূর্ব এশিয়ায় দীর্ঘ ভ্রমনের মধ্যেই তিনি এদেশে সুফিবাদের মাধ্যমে ইসলাম প্রচার করেন। তাঁকে চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে সমাহিত করা হয় এবং তাঁর সম্মানে এই স্থানটির নামকরণ করা হয়। চাঁদপুরের পূর্বের নাম ছিল শাহরাস্তি। এছাড়া, এই জেলার একটি থানা, উপজেলা, ডাকঘর, এবং স্কুল তাঁর নামে নামকরণ করা হয়েছে।
প্রারম্ভিক জীবন এবং শিক্ষাঃ
শাহরাস্তির জন্ম তারিখ এবং জন্মস্থানের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে, জানা যায় তিনি সৌদি আরবের মক্কায় জন্মগ্রহন করেন এবং পরবর্তীতে শিশুকালেই তাঁর পরিবারের সাথে ইরাকের বাগদাদে গমন করেন। হযরত শাহরাস্তি (রঃ) ইসলামিক স্টাডিজ এবং ইসলামিক থিওলোজি বিষয়ে লেখাপড়া করেন। দীর্ঘ লেখাপড়া এবং ধ্যান চর্চার পর তিনি আত্মিক শুদ্ধতা (কামালিয়াহ) অর্জন করেন।
ভারতে গমনঃ
লোককথায় আছে হযরত শাহরাস্তি (রঃ) একদল মুসলিম সাধকের সাথে ভারতে আগমন করেন। প্রত্যেক সাধকের কাছেই ছিল একমুঠো করে মাটি। তাঁদের সেখানেই স্থায়ী হতে হয়েছিল যেখানকার মাটির রং তাঁদের হাতে থাকা মাটির সাথে হুবহু মিলে গিয়েছেল। ১৩০০ সালে ভারতে আগমন করেন হযরত শাহরাস্তি (রঃ)। তাঁর হাতের মাটির রঙ কুমিল্লার মাটির রঙের সাথে মিলে যায় এবং তিনি কুমিল্লায় একটি পাহাড়ের উপর অবস্থান গ্রহন করেন। তবে এই স্থানটি সঠিক ছিল না। পরবর্তীতে যে স্থানের সাথে হযরত শাহরাস্তির কাছে থাকা মাটির রঙ হুবহু মিলে যায় সেখানে তাঁর কাছে একটি বাঘ এসেছিল এবং তিনি সেখানেই স্থায়ী হন।
জীবনের বাকি অংশে হযরত শাহরাস্তি (রঃ) ইসলাম প্রচারের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেন। তাঁর নির্দেশনায় হাজার হাজার হিন্দু এবং বৌদ্ধ ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন। হযরত শাহরাস্তি (রঃ) এর ভাই সৈয়দ শাহ মাহবুব এবং আরও দুজন সঙ্গী তাঁর সাথে ছিল। হযরত শাহরাস্তি (রঃ) অবিবাহিত ছিলেন তাই তাঁর ভাতিজা সৈয়দ শাহ গিয়াসউদ্দিন হযরত শাহরাস্তির উত্তরাধিকারি ছিলেন। হযরত শাহরাস্তির উত্তরাধিকারিরা এখনও তাঁর দরগার পাশে বাস করেন। চাঁদপুরে হযরত শাহরাস্তির দরগার রয়েছে ব্যাপক খ্যাতি। বাংলাদেশ থেকে প্রতিদিন প্রচুর মানুষ আসেন এই দরগায়।
অঙ্গীকার
চাঁদপুর শহরের মুক্তিযোদ্ধা সড়কের পাশের লেকে হাসান আলী সরকারি হাইস্কুল মাঠেরসামনে একাত্তরের শহীদ স্মরণে নির্মিত হয়েছে স্মারক ভাস্কর্য ‘অঙ্গীকার’।
‘অপরাজেয় বাংলা’রশিল্পী সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদ ভাস্কর্যটির স্থপতি। সিমেন্ট, পাথর আর লোহাদিয়ে তৈরি বেদীসহ এইভাস্কর্যটির উচ্চতা ১৫ ফুট।এর দৃঢ় মুষ্ঠি স্বাধীনতার স্বপক্ষজনতার দৃঢ়তার প্রতীক, আর অস্ত্রটি স্বাধীনতা অর্জন এবং তা রক্ষার শক্তির প্রতীক।জনগণের দৃঢ়তার সাথে অস্ত্রের সমন্বয়ে সৃষ্টি হয়েছে একটি দৃঢ় অঙ্গীকার।
চাঁদপুরের তৎকালীন জেলা প্রশাসকএসএম শামছুল আলমের প্রচেষ্টায় ১৯৮৯ সালে দৃষ্টিনন্দন এ ভাস্কর্যটি তৈরী করা হয়। জ্যোৎস্না রাতে চাঁদের আলোয় অঙ্গীকারকে অপরূপ দেখায়।প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসসহ অন্যান্য জাতীয় দিবসসমূহের সূচনা হয় ‘অঙ্গীকার’পাদদেশে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে।
লোহাগড়া মঠ-একটি কিংবদন্তীর নিদর্শন
ফরিদগঞ্জ উপজেলার চান্দ্রা বাজার থেকে দেড় কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে ‘লোহাগড়া’ গ্রামের মঠটি কিংবদন্তীর সাক্ষী হিসেবে এখনো দন্ডায়মান।
পরম প্রতাপশালী জমিদার পরিবারের দু’ভাই ‘লোহা’ ও গহড়’ এতোই প্রভাবশালী ছিলো যে, এরা যখন যা ইচ্ছা তা-ই করতেন এবং তা প্রতিফলিত করে আনন্দ অনুভব করতেন। এই দুই ভাইয়ের নামানুসারে গ্রামের নাম রাখা হয় ‘লোহাগড়’।
জনৈক ব্রিটিশ পরিব্রাজক লোহাগড় গ্রাম পরিদর্শনে গেলে তাদের আভিজাত্য দেখে বিমুগ্ধ হন। কথিত আছে, ওই পরিব্রাজকের জন্যে নদীর কুল হতে তাদের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা, যার প্রস্থ ২ হাত, উচ্চতা ১ হাত, দৈর্ঘ্য ২০০ হাত সিকি ও আধুলি মুদ্রা দিয়ে নির্মাণ করেন। (এটি বর্তমানে বিলুপ্ত) সাধারণ মানুষ এদের বাড়ির সামনে দিয়ে ভয়ে চলাফেরা পর্যন্ত করতো না।
বাড়ির সামনে দিয়ে ডাকাতিয়া নদীতে নৌকাগুলো নিঃশব্দে যাতায়াত করতে হতো। ডাকাতিয়া নদীর কূলে তাদের বাড়ির অবস্থানের নির্দেশিকা স্বরূপ সুউচ্চ মঠটি নির্মাণ করেন। তাদের আর্থিক প্রতিপত্তির নিদর্শন স্বরূপ মঠের শিখরে একটি স্বর্ণদন্ড স্থাপন করেন।
এই স্বর্ণদন্ডের লোভে মঠের শিখরে ওঠার প্রচেষ্টায় কেউ কেউ মৃত্যুবরণ করেছেন বলে শোনা যায়। এই বৃহৎ স্বর্ণদন্ডটি পরবর্তীকালে ঝড়-তুফানে মঠ শিখর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নদীতে পড়ে যায় এবং নদী তটের জমি চাষ করার সময় একজন কৃষক পেয়েছিলেন বলে জানা যায়। লোকমুখে শোনা যায়, এই স্বর্ণদন্ডটি প্রায় আড়াই মণ ওজনের ছিলো।
লোহাগড়ের এই দুই ভাইয়ের প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ এখনো বিদ্যমান। এখানে মাটির নিচে গহবর এখনো বিদ্যমান। মঠটি এখন দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন বহু মানুষ মঠটি দেখতে আসে।
মঠটি এখনও দাঁড়িয়ে আছে দুই ভাইয়ের দোর্দন্ড প্রতাপের নীরব সাক্ষী হয়ে। কথিত আছে, নবাব সিরাজউদ্দৌলার রাজত্বকালে, ১৭৫৭ সালের কিছুকাল আগে নবাব সিরাজ-উদ্-দৌলার সভাসদ রাজ বল্লভের ছেলে কৃষ্ণ বল্লভ নবাব রাজত্বের আদায়কৃত খাজনার বিপুল অর্থসহ পালিয়ে ফরিদগঞ্জ এলাকার এক অত্যাচারী জমিদারের আশ্রয় নিয়েছিলেন।
ওই জমিদার পরিবারের বসবাস ছিলো বর্তমান লোহাগড় গ্রামে। প্রায় ২০০ বছরের পুরানো লোহাগড়ের মঠটি অত্যাচারী জমিদারদের অত্যাচারের নীরব সাক্ষী হিসেবে আজও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে আর সরকারিভাবে কোনো পরিচর্যা না থাকায় পুরানো স্মৃতি বিজড়িত প্রাচীন নিদর্শনটি সবার স্মৃতি থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। ফরিদগঞ্জ উপজেলার সদর থেকে এর দূরত্ব ৫ কিলোমিটার।
চাঁদপুর টাইমস রিপোর্ট
২২ এপ্রিল ২০২৩