Home / উপজেলা সংবাদ / ফরিদগঞ্জ / ফরিদগঞ্জে ইয়াবা সেবনে পুড়ছে লক্ষাধিক ৫-১০ টাকার নোট
Yaba taka

ফরিদগঞ্জে ইয়াবা সেবনে পুড়ছে লক্ষাধিক ৫-১০ টাকার নোট

মাদকের দুনিয়ায় একচ্ছত্র আধিপত্য এখন এমন এক ধরনের লাল বড়ি ইয়াবা। যা মেথা এম্পিটামিন ও ক্যাফেইনের মিশ্রণে তৈরি নেশা জাতীয় ট্যাবলেট। পয়েল পেপার পুড়িয়ে বা বড়ি হিসেবে সেবন করা হয় এ মরন ব্যাধি নেশা জাতীয় ট্যাবলেট। এক্ষেত্রে অনেকসময় ব্যবহার করা হয় ৫ টাকা কিংবা ১০ টাকার নোট।

উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণী, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী, প্রাইভেট কোম্পানির কর্মচারী বিত্তশালী পরিবারের ছেলে-মেয়ে-বউ কে নেই ইয়াবা নেশার তালিকায়।

সাম্প্রতিক সময়ে দেখা গেছে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ সদর, গাজীপুর, চান্দ্রা, টোরা মুন্সিরহাট, পাটওয়ারী বাজার, খাজুরিয়া , রূপসা, গৃদকালিন্দিয়া, রামপুর, নয়াহাট, ধানুয়া, বাগড়াসহ প্রায় সব বাজারেই ক্রেতা-বিক্রেতারা বিপাকে আছেন এক বিশেষ ধরণের পোড়া টাকা নিয়ে।

সে সব টাকা সাধারণ ক্রেতা থেকে আরম্ভ করে বির্ভিন্ন কোম্পানী প্রতিনিধি, যানবাহনের চালক এমনকি ব্যাংকও নিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করে। খোঁঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব পোড়া টাকা মাদক দ্রব্য ইয়াবাসেবীদের ব্যবহৃত।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ী জানান, ফরিদগঞ্জের প্রায় সর্বত্র রিক্সাচালক থেকে শুরু করে সমাজের কতিপয় শীর্ষস্থানীয় কতিপয় কর্তা ব্যক্তিদের ছত্রছায়ায় ইয়াবা সহজলভ্য হয়ে পড়ায় বেড়েছে বিভিন্ন বয়সি ইয়াবাসেবীদের সংখ্যা।

বর্তমানে সারা দেশের ন্যায় ফরিদগঞ্জ উপজেলাতে এ নেশাজাতীয় দ্রব্যটি সেবনকারীদের নিকট বিলাসিতার বস্তু হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। প্রতিযোগিতা করে চলছে এ পাগলা বড়ি ইয়াবার ধোঁয়া ও স্বাদ গ্রহণ।

সিএনজি অটো রিক্সাচালক হারুন বলেন, প্রায় প্রতিদিনই যাত্রীদের কাছ থেকে পোড়া টাকা পেয়ে থাকি। এ নিয়ে তাদের সাথে আমাদের অনেক সময় বাকবিতন্ডা চলে। পরে একান্ত বাধ্য হয়ে সে টাকা গ্রহণ করতে হয়। শুনেছি, ইয়াবা সেবনকালে আগুনে পুড়ে যাওয়ায় টাকার এ হাল হয়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, পূর্বে সিগারেটের প্যাকেটের ভিতরে থাকা চিকচিকে কাগজ ও চকলেটের খালি মোড়কের উপর ইয়াবা পুড়িয়ে নেশা করা হত। কিন্তু এখন ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় পয়েল পেপার দিয়াসলাই ও অন্যান্য সরঞ্জামসহ নতুন ২, ৫, ১০, থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংখ্যার নোট মুড়িয়ে সারা হচ্ছে নেশার কাজ।

লোকচক্ষুর অন্তরালে ইয়াবাসেবীরা ঝামেলা এড়াতে তাদের সাথে থাকা নতুন চকচকে বিভিন্ন মানের টাকা পেঁচিয়ে নলের মত করে ইয়াবার ধোঁয়া শ^াসের ভিতরে নেয়। হাতে থাকা ইয়াবা সেবনের পর যে নির্যাস থাকে সেটাকে পুনরায় আগুনে গলিয়ে সেবন করে। ফলে, শেষ মুহুর্তে গ্রহণ করা ইয়াবার ধোঁয়া নেয়ার সময়ই মূলতঃ মোড়ানো টাকার গায়ে আগুন লেগে টাকার অংশ বিশেষ পুড়ে যায়। তারপর সে টাকা বিভিন্ন হাত ঘুরে প্রবেশ করে বাজারে। আর সেগুলো নিয়েই বিপাকে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

এমন ছেঁড়া-পোড়া টাকার নোট দেখে সাধারণ মানুষ অনেক সময় বিচলিত হয়ে পড়েন। তারা মনে করেন যে, দেশে মাদকসেবনকারীদের বিস্তৃতি কতটা বৃদ্ধি পেয়েছে এ টাকাই তার প্রমান স্বরূপ।

ইয়াবা সেবনের জন্য ‘পাইপের’ প্রয়োজন হয়। পাঁচ টাকার নোট দিয়ে সহজেই সেই ‘পাইপ’ বানানো যায়। শুধু তাই নয়, ইয়াবা সেবনকালে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ‘পাইপ’ হিসাবে ব্যবহৃত পাঁচ টাকার নোট পুড়ে নষ্ট হয়ে যায়।

দেশে এমনিভাবে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা পুড়ছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হিসাবে প্রতিদিন সারাদেশে ৮ লাখের বেশি ইয়াবা সেবন করা হয়। এই ৮ লাখ ইয়াবাসেবীর অর্ধেকও যদি ইয়াবা সেবনের সময় পাঁচ টাকার নোট ব্যবহার করে থাকে তাহলে প্রতিদিন ৪ লাখ পাঁচ টাকার নোট পুড়ে ছাই অথবা বিনিময়ের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। আর টাকার অঙ্কে প্রতিদিন ধ্বংস হচ্ছে কমপক্ষে ২০ লাখ টাকা।

আলাপকালে কয়েকজন ইয়াবাসেবী জানান, বাজারের নতুন হালকা নীলাভ রঙের পাঁচ টাকার নোট ইয়াবা সেবনের জন্য খুবই ভালো। এটি অতি সহজে গোল করে ‘পাইপ’ বানানো যায়। এরপর সেটি নাকে দিয়ে সহজেই ইয়াবার ধোঁয়া টেনে নেয়া যায়। কিছুক্ষণ এভাবে টানার পর নোটের মাথার অংশ পুড়ে যায়। এরপর সেটির আর কার্যকারিতা থাকে না।

ইয়াবা সেবনের জন্য আগেও নতুন টাকা ব্যবহার করা হতো। তবে পাঁচ টাকার নোট আসার পর বড় বড় নোটের ব্যবহার কমে গেছে। এখন এই পাঁচ টাকার নোটের চাহিদা এতোটাই বেড়েছে যে, ইয়াবার সাথে এখন পাঁচ টাকার নোট দ্বিগুণ তিনগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে।

একজন ইয়াবাসেবী জানান, একটা ইয়াবার সাথে একটা পাঁচ টাকার নোট নিতে গেলে কমপক্ষে ১০ টাকা দিতে হয়।

এদিকে মাদকের বিরুদ্ধে সাঁড়শি ও চিরুনী অভিযান এ সব যেন সমাজের মধ্যে খুবই পরিচিত একটা শব্দ। আর গনমাধ্যমে প্রচারাভিযানে কোন ধাপেই কমতি রাখে না।

এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ এইচ এম মাহফুজুর রহমান চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ইয়াবা সেবনের কারণে টাকা পোড়ার ব্যাপারে এ পর্যন্ত কোন অভিযোগ পাওয়া যায় নি। তারপরও এ সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ শাহ আলম বলেন, ‘টাকা পুড়িয়ে ইয়াবা সেবনের কথা অজানা। তবে, ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদক ও মাদকসেবীদের রুখতে অভিযান অব্যাহত আছে।’

প্রতিবেদক- সানাউল হক