জাতীয়

ইসি রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন আইন পরিবর্তন করতে যাচ্ছে

নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন ধরে রাখতে রাজনৈতিক দলগুলোর অন্যতম যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত ছিলো জাতীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নিয়ে অংশ নেয়া। কিন্তু যে কেউ নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দেয়া বেশকিছু শর্ত পূরণ করে নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন পেয়ে যেতে সক্ষম হতেন। এখন আর তা হচ্ছে না।

রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইন-২০২০ প্রণয়নের লক্ষ্যে ইসির তৈরি খসড়া আইনে রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন পাওয়ার অন্যতম যোগ্যতা ধরা হয়েছে নিবন্ধনের আবেদন দাখিলের আগের দু’টি সংসদ নির্বাচনে ঔ দলকে অংশগ্রহণ করতে হবে।

আইনের ৪ (১) দফায় বলা হয়েছে, কোনো রাজনৈতিক দল নিবন্ধিত হইতে আগ্রহী হইলে- দরখাস্ত দাখিল করার তারিখ থেকে পূর্ববর্তী দু’টি সংসদ নির্বাচনে দলীয় নির্বাচনি প্রতীক নিয়ে কমপক্ষে একটি আসন লাভ; বা উপরোক্ত সংসদ নির্বাচনের যে কোনো একটিতে দরখাস্তকারী দল কর্তৃক নির্বাচনে অংশগ্রহণকৃত আসনে প্রদত্ত ভোটের ৫% পেতে হবে।

রাজনীতিক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নতুন আইনের শর্ত পূরণ করতে পারবেনা ইসিতে পূর্বে নিবন্ধিত অনেক রাজনৈতিক দলও। ইসিতে অনেক নিবন্ধিত দল আছে যারা অনেকটাই নামসর্বস্ব। প্রধান কার্যালয়ও অনেক দলের বাসা-বাড়িতে। জেলা-উপজেলায় তো কার্যালয়ই নেই। পর পর দু’টি নির্বাচনে অংশ নিয়ে অন্তত একটি আসনে জয়লাভ করা এসব দলের পক্ষ্যে কখনো সম্ভব হয়নি। নতুন আইন কার্যকর হলে এসব দল ইসির বাতিলের খাতায় চলে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি বলে মনে করছেন তারা।

ইসি সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৪১টি হলেও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে মাত্র ১২টি দল। আর নবম সংসদের ভোটে অংশ নিয়েছিল ২৭টি দল। যে কারণে ইসির আগের নিয়ম অনুযায়ীই বিএনপি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, জাকের পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি, গণফোরাম, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এমএল) ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি নিবন্ধন ঝুঁকিতে পড়েছিলো। নতুন আইনে নিবন্ধন ঝুঁকি আরো বাড়তে পারে।

খসড়ায় বলা হয়েছে, নিবন্ধন সনদপত্র- (১) কোনো রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর, ওই দলের অনুক‚লে কমিশন নির্ধারিত পদ্ধতিতে একটি নিবন্ধন সনদপত্র প্রদান করিবেন এবং উহা সরকারি গেজেটে প্রকাশ করিবে। নিবন্ধনের জন্য দাখিলকৃত কোনো দরখাস্ত নাকচ করা হইলে, চ‚ন্তান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ১৫ কার্য দিবসের মধ্যে কমিশন উহা লিখিতভাবে সংশ্লিষ্ট দলকে অবহিত করিবে। নিবন্ধন বিষয়ে কমিশনের সিদ্ধান্ত চ‚ড়ান্ত বলিয়া গণ্য হইবে।

ধারা ৯-তে বলা হয়েছে, কোনো দল নিষিদ্ধ উৎস ব্যতিরেকে, কোনো ব্যক্তি, কোম্পানি, দলগতভাবে একাধিক কোম্পানির কিংবা বেসরকারি সংস্থা থেকে দান অথবা অনুদান গ্রহণ করতে পারবে। তবে শর্ত থাকে যে, ওই দান বা অনুদানের পরিমাণ কোনো পঞ্জিকা বছরে ব্যক্তির ক্ষেত্রে দশ লাখ টাকা বা তার সমমানের কোনো সম্পদ বা সেবা এবং প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ৫০ লাখ টাকা বা তার সমমানের কোনো সম্পদ বা সেবার বেশি হতে পারবে না।

খসড়া আইনের ১১ ধারায় কোনো দলের নিবন্ধন বাতিলের কারণ বর্ণনা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী কমিটি, তা যে নামেই অভিহিত হোক না কেন, সেই কমিটি দলকে বিলুপ্ত ঘোষণা করলে কিংবা নিবন্ধন বাতিলের জন্য দলের প্রধান ও সাধারণ সম্পাদক বা মহাসচিব বা তাদের সমপর্যায়ের পদাধিকারী কর্তৃক দলীয় সিদ্ধান্তের কার্যবিবরণীসহ কমিশন বরাবর আবেদন করলে, নিবন্ধিত কোনো রাজনৈতিক দল সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত হলে এবং কমিশের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে কোনো তথ্য পর পর তিন বছর সরবরাহ করতে ব্যর্থ হলে, নিবন্ধন শর্ত ভঙ্গ করলে, পরপর দুটি সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে নিবন্ধন বাতিল করা হবে।

তবে নিবন্ধন বাতিলের পূর্বে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলকে শুনানির সুযোগ প্রদান করা হবে। বিলুপ্ত ঘোষিত নিবন্ধিত কোনো রাজনৈতিক দলের নাম অনুযায়ী অপর কোনো দলকে নিবন্ধিত করা হবে না। এছাড়া আইনের খসড়ায় নির্বাচনের সময় রাষ্ট্রীয় প্রচার মাধ্যমে সবাইকে সমান সুযোগ দেয়ার কথাও বলা হয়েছে।

৩৩ % নারী পদ শিথিল হচ্ছে: খসড়ায় রাজনৈতিক দলের সব পর্যায়ের কমিটিতে ৩৩ % নারী পদ পূরণে যে সময়সীমা ছিল, তা আর রাখছে না নির্বাচন কমিশন। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া ও তা বাস্তবায়নের ক্ষমতা দলের ওপরই ছেড়ে দিচ্ছে নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ হিসেবে স্বাধীন এ সংস্থাটি।

আরপিওতে ভিআইএ অধ্যায়টি সংযোজন করে প্রচলন করা হয়েছিল নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য বাধ্যতামূলক দল নিবন্ধন প্রক্রিয়া। সেখানে নিবন্ধন পাওয়ার অন্যতম শর্ত ছিল ২০২০ সালের মধ্যে দলের সব পর্যায়ের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী পদ পূরণ করতে হবে। কিন্তু ২০২০ সালের মাঝামাঝিতে এসেও ইসি জানাচ্ছে, কোনো দলই সব পর্যায়ের কমিটিতে ৩৩ % নারী কোটা পূরণ করতে পারেনি। তাই সময়সীমা আর বেঁধে দিতে চায় না সংস্থাটি।

খসড়া অনুযায়ী, দলগুলো গঠনতন্ত্রে ৩৩ % নারী পদ পূরণের সময়সীমা নিজেরাই উল্লেখ করবে এবং প্রতিবছর তথ্য প্রদানের সময় ইসিকে নিজেদের নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে নারীপদ পূরণের অগ্রগতি সম্পর্কে অবহিত করবে।

বার্তা কক্ষ , ১৯ জুন ২০২০

Share