Tuesday, 28 July, 2015 02:44:08 AM
চাঁদপুর টাইমস নিউজ ডেস্ক:
ইসলামী ব্যাংককে জামায়াত-শিবিরমুক্ত করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের আওতাধীন প্রভাবশালী একটি গোয়েন্দা সংস্থাকে প্রায় দেড় মাস আগে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে, ব্যাংকটিতে কর্মরতদের সমস্ত তথ্য সম্পর্কে খোঁজ নিতে। ওই নির্দেশ অনুযায়ী সংস্থাটি গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে ইসলামী ব্যাংকে কর্মরত জামায়াত-শিবির সংশ্লিষ্টদের সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজ করেছে। দেড় মাসের মধ্যে এ সম্পর্কিত প্রতিবেদন সরকারের উচ্চপর্যায়ে জমা দেওয়া হবে। তদন্তে সম্পৃক্ত এমন একাধিক গোয়েন্দাসূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।
সূত্রমতে, ইসলামী ব্যাংকে জামায়াত-শিবিরের দলীয় বিনিয়োগ আছে কি নেই, জামায়াত-শিবিরসংশ্লিষ্ট পরিচালক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নাম, নাম্বার, ঠিকানা ও তাদের কর্মকাণ্ডের বিস্তারিত তথ্য চেয়েছে সরকার। সংশ্লিষ্টদের কর্মস্থল, ব্যাংকের শাখা প্রভৃতির তথ্যও জমা দিতে বলা হয়েছে। ওই নির্দেশনা অনুযায়ী চলতি মাসের শুরুতে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ঈদের বন্ধের কারণে তদন্তে সময় দিতে পারেনি সংস্থাটির কর্মকর্তারা। তবে চলতি সপ্তাহের শেষ দিকে মাঠ পর্যায়ের গোয়েন্দাদের প্রতিবেদন জমা হলে আগামী সপ্তাহের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পৌঁছে যাবে মূল প্রতিবেদন।
তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সত্যতা স্বীকার করেন। তবে সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশের প্রসঙ্গ অস্বীকার করে বলেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো স্বাধীন। তারা যেকোনও বিষয়ে তদন্ত করতে পারে। গোয়েন্দাদের কাজের সিষ্টেম এটিই। তবে এটি সরকারের জন্য নয়। তাদের নিজেদের জন্য হতে পারে।
তদন্তের বিষয়টি দৃষ্টি আকর্ষণ করে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল মান্নানের সঙ্গে বিগত দুদিন কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। রবিবার তার সেলফোনে কল করা হলে তার ব্যক্তিগত সহকারী পরিচয়ে একজন জানান, তিনি বৈঠকে আছেন। পরে কথা বলবেন। পরে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। এরপর সোমবার বিকালে ফের তাকে কল করা হলে ফোন রিসিভ করা হলেও কেউ কথা বলেননি।
এদিকে, অসমর্থিত একটি গোয়েন্দাসূত্রে জানা গেছে, ইসলামী ব্যাংক থেকে জামায়াতকে অর্থায়ন করা হয় কি না, এ বিষয়ে সুস্পষ্ট তথ্য জানতেই এই গোয়েন্দা প্রতিবেদন। ইতোমধ্যে অনেকের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এরই মধ্যে ব্যাংকটির কেন্দ্রীয় কতৃর্পক্ষসহ প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন শাখার তথ্যও নেওয়া হয়েছে।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ইসলামী ব্যাংকে বর্তমানে ১৩জন পরিচালক আছেন। এমডিসহ সর্বমোট পরিচালনা বোর্ডে রয়েছেন মোট ১৪ জন। ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ইঞ্জিনিয়ার মুস্তাফা আনোয়ার। বর্তমানে শেয়ারবাজারে ব্যাংকটির ২০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, এর আগে ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন আবু নাসের মোহাম্মদ আব্দুজ জাহের। যিনি ইবনে সিনার এমডি ছিলেন। বর্তমানে মানারতের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করলে তার জিপি সেলটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
গোয়েন্দা সূত্রে প্রাপ্ততথ্য, ইতোমধ্যে সন্দেহভাজন কর্মকর্তা ও পরিচালকদের নামের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এখন এই তালিকার সূত্র ধরে প্রত্যেকের বিস্তারিত খোঁজ-খবর নেওয়া হবে। আগামী দুমাসের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেবে সংস্থাটি।
সূত্রের দাবি, তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তির ছাত্রজীবন, কর্মজীবন কোথায় শুরু, পরিবার ও রাজনৈতিক তৎপরতাকে প্রাধান্য দেওয়া হবে।
সূত্রমতে, ইসলামী ব্যাংক নয় কেবল, সারা দেশে জামায়াতের অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকাও তৈরি করার নির্দেশনা দেওয়া হয়ে সরকারের তরফে। তবে এখন এই তালিকার বিস্তারিত কিছু জানতে পারেনি গণমাধ্যম।
সূত্র জানায়, প্রচার আছে, ইসলামী ব্যাংকে বিপুল পরিমাণ জামায়াত সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিতে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের অগ্রাধিকারভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়। পাশাপাশি ব্যাংকটির সিস্টার কনসার্ন ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের অনেক বেশি স্বল্পমূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। যদিও ২০১৩ সালে গণজাগরণমঞ্চ থেকে ১০৯ টি জামায়াতের অর্থায়ন করা প্রতিষ্ঠানের তালিকা দিয়েছিল। এর মধ্যে, ইসলামী ব্যাংক, ইবনে সিনা, কেয়ারি ফুড, ইসলামী ব্যাংক চক্ষু হাসপাতাল, সান সিটি, দৈনিক সংগ্রাম, শতাব্দী প্রেস, আধুনিক প্রকাশনী প্রেস, দারুল ইসলাম ট্রাস্ট, সোনার বাংলা পত্রিকা, রাবেতা ইসলাম, দারুল ইসলাম ট্রাস্ট, ফুলকুঁড়ি, ফালাহ্ আম ট্রাস্টসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নাম ছিল।
ওই সময় ইসলামী ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ আবদুল মান্নান গণমাধ্যমে ব্যাংকটির বিষয়ে মুখ খুলেছিলেন। একটি জাতীয় দৈনিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি দাবি করেছিলেন, ‘জামায়াতে ইসলাম বা অন্য কোনও দলের কাছে এই ব্যাংকের কোনও শেয়ার নেই। ব্যক্তি হিসেবে ৬০ হাজার লোকের কাছে ৩৭ শতাংশ শেয়ার বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া আমাদের পরিচালনা পর্ষদেও এ দলের কেউ কখনও ছিলেন না।’
ইসলামী ব্যাংক রাজনৈতিক দলগুলোকে অর্থায়ন করে- এমন অভিযোগ অস্বীকার করে ব্যাংকটির শীর্ষ নির্বাহীর দাবি ছিল, ‘ইসলামী ব্যাংকের বিনিয়োগ কার্যক্রম পরিচালিত হয় সম্পূর্ণ পেশাদারত্বের ভিত্তিতে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার আলোকে, দেশের সব আইনের মধ্যে থেকে আমরা বিনিয়োগ করি। সেখানে দল, মত, ধর্ম, শ্রেণি, পেশা, লিঙ্গ কোনও কিছুই বিবেচনা করা হয় না। সংখ্যালঘুদের মধ্যেও আমাদের প্রচুর বিনিয়োগ আছে। আশ্চর্য হলেও সত্য, আমাদের প্রথম বিনিয়োগ গ্রাহক ছিলেন একজন অমুসলিম। বর্তমানে এ ব্যাংকের হাজার হাজার অমুসলিম গ্রাহক রয়েছে।’
সাধারণত রাজধানীসহ দু-একটি বিভাগীয় শহরের সেন্ট্রাল ব্রাঞ্চগুলোয় যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়। এক্ষেত্রে বড় ধরনের লবিয়িং না হলে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের নিয়োগ দেওয়া হয় না। মেধার ভিত্তিতেই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় বলে সূত্রের দাবি।
যদিও রবিবার রাতে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রভাবশালী এক নেতা জানান, ‘প্রথমত, দল হিসাবে জামায়াতের কোনও সম্পর্ক নেই। দ্বিতীয়ত, আমরা আসলে সেভাবে কোনও তদবির করি না, যারা ইন্টারভিউতে টেকেন তাদেরই নিয়োগ দেওয়া হয়, এটাই জানি।’
যদিও এসব নিয়োগের বিষয়ে ব্যাংকটির প্রধান নির্বাহী তার ওই দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘অনেক সময় এ ধরনের অভিযোগ আসে। বিজ্ঞপ্তি ছাড়া আমরা কখনোই কোনও নিয়োগ দেই না। এ ছাড়া নিয়োগের ক্ষেত্রে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থীকে বাছাই করা হয়। বাছাই প্রক্রিয়া এতটাই স্বচ্ছ যে, এখানে যোগ্যতা না থাকলে কোনওভাবেই নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ নেই। নিয়োগ পরীক্ষায় কৃতকার্য না হওয়ায় আমার নিজের ভাতিজাকেও আমি এখানে চাকরি দিতে পারিনি।’ (বাংলা ট্রিবিউন)