গত বছর অক্টোবর থেকে ইসরাইল-হিজবুল্লাহ সঙ্ঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে লেবাননে ইসরাইলি বিমান হামলায় নিহতের সংখ্যা দু হাজার ৭ শ ৯২ জনে পৌঁছেছে। একই সময় আহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৭ শ ৭২ জনে। মঙ্গলবার লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এসব তথ্য জানিয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, শুধু সোমবারই ৮২ জন নিহত ও ১শ ৮০ জন আহত হয়েছেন। লেবাননের সামরিক সূত্রগুলো জানিয়েছে,মঙ্গলবার ইসরাইলি সামরিক বাহিনী দক্ষিণ লেবাননের প্রায় ৩০টি গ্রাম ও শহরে ৫০টিরও বেশি বিমান হামলা চালিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রগুলো জানিয়েছে,সবচেয়ে তীব্র হামলা করে দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর সিডনের সাইদা এলাকায়; যেখানে তিনটি ভবন লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়।এর ফলে ছয়জন নিহত ও ৩৭ জন আহত হন।তাদের বেশিরভাগই বাস্তুচ্যুত ব্যক্তি। সূত্র জানায়,ইসরাইলি যুদ্ধবিমানগুলো লেবানন ও সিরিয়ার মধ্যে সংযোগকারী সীমান্ত সড়কে আকাশ থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ছয়টি ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে তিনটি বিমান হামলা চালিয়েছে।এটি দু দেশের মধ্যে উভয় দিক থেকে চলাচলকারী পথচারীদের বাধা সৃষ্টি করেছে।
এদিকে লেবাননের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় খিয়াম গ্রামে হিজবুল্লাহ ও ইসরাইলি বাহিনীর মধ্যে এখনো সংঘর্ষ চলছে বলে সূত্রগুলো জানিয়েছে।তারা জানায়,ইসরাইলি যুদ্ধবিমানগুলো গ্রামের কেন্দ্রস্থলে নিবিড় অভিযান চালাচ্ছে।এসব হামলায় ভারী মেশিনগান,আর্টিলারি শেল ও রকেট ব্যবহার করা হচ্ছে।খিয়ামে ইসরাইলি বাহিনী অগ্রসর হওয়ার পরে লেবাননের একটি বাড়িতে বসবাসকারী ১৭ জন বেসামরিক নাগরিকের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। মঙ্গলবার পৃথক বিবৃতিতে হিজবুল্লাহ বলেছে, তাদের যোদ্ধারা ইসরাইলি সদর দফতর ও স্থাপনাগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন দিয়ে হামলা চালিয়েছে।এর মধ্যে রয়েছে উত্তর ইসরাইলের কিব্বুতজিম,জারিত,বাইত হিলেল এবং ইসরাইলি শহর মা‘আ লট।
এতে আরো বলা হয়,লেবাননের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় মারজেইউন শহরের আকাশসীমায় একটি ইসরাইলি হার্মিস ৯শ ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে।ইসরাইলি সেনাবাহিনী ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে লেবাননের ওপর ব্যাপক হামলা চালিয়েছে। চলতি মাসের শুরুর দিকে ইসরাইল তাদের উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্ত পেরিয়ে লেবাননে স্থল অভিযান শুরু করে। অপর এক খবরে বলা হয়, উত্তর গাজার বেইত লাহিয়া শহরে ইসরাইলি বাহিনীর বর্বর বিমান হামলার পর শিশুসহ অন্তত ৯৩ জন মারা গেছে বা নিখোঁজ হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এক ‘ভয়াবহ’ বলে অভিহিত করেছে।
এ ঘটনার পর বেইত লাহিয়ায় আক্রমণের নিন্দা করে ইসরাইলের কাছ থেকে ব্যাখ্যা চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছেন, ‘আমেরিকা ইসরাইলের কাছ থেকে ঘটনার বিষয়টি স্পষ্ট করতে বলেছে।আমরা জানতে চাই. ঠিক কী হয়েছিল?’ তিনি আরো বলেন, ‘কী করে একটা আক্রমণের ফলে এতজন শিশুর মৃত্যু হতে পারে আমরা এই প্রশ্নের জবাব চেয়েছি। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোনো জবাব পাইনি।’
উদ্ধারকারীরা জানিয়েছেন, একটি পাঁচতলা আবাসিক ভবনে আঘাত হানে ইসরাইলি ক্ষেপণাস্ত্র। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, মেঝেতে কম্বলে ঢাকা রয়েছে বহু মৃতদেহ।
ইসরাইলি সামরিক বাহিনী বলেছে,তারা বেত লাহিয়া এলাকায় মঙ্গলবার বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার খবর সম্পর্কে অবগত। ঘটনার বিস্তারিত খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) গত দুই সপ্তাহ ধরে উত্তর গাজায় বিশেষ করে জাবালিয়া,বেইত লাহিয়া এবং বেইত হানুন এলাকায় কাজ করছে।
মঙ্গলবার ভোরে বেইট লাহিয়াতে ২৫ শিশুসহ কমপক্ষে ৯৩ জন নিহত হয়েছেন। জাতিসংঘের মধ্যপ্রাচ্য দূত বেইট লাহিয়ায় ইসরাইলি ভয়াবহ এ হামলার নিন্দা করেছেন। টর ওয়েনেসল্যান্ড বলেছেন, ইসরাইলের আক্রমণে তিনি হতবাক। জাবালিয়ার নিকটবর্তী কামাল আদওয়ান হাসপাতালের পরিচালক হুসাম আবু সাফিয়া বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন,হাসপাতালে শিশুদের চিকিৎসা করা হচ্ছে। তবে কর্মী ও ওষুধের অভাবে রোগীদের চিকিৎসা করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আবু সাফিয়া বলেন,‘সেনাবাহিনী আমাদের মেডিক্যাল টিম ও কর্মীদের গ্রেপ্তার করার পর প্রাথমিক চিকিৎসার উপকরণ ছাড়া কামাল আদওয়ান হাসপাতালে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। সিনহুয়া,বিবিসি, রয়টার্স।
চাঁদপুর টাইমস রিপোর্ট
৮ নভেম্বর ২০২৪
এজি