চাঁদপুর

সময়ের পরিবর্তনে ভালো নেই চাঁদপুরের ইলেক্ট্রনিক্স কারিগররা

বর্তমানে ডিজিটাল বাংলাদেশে ইন্টারনেট, ফেসবুক ও বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স পণ্য-সামগ্রীর কোম্পানির ভিড়ে ভালো নেই চাঁদপুরের ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর কারিগররা।
আজ থেকে প্রায় ৮/৯ বছর পূর্বে চাঁদপুর শহরে ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী মেরামত করার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজের যে পরিমাণ ও চাহিদা ছিলো এখন আর সেই অবস্থা নেই।

তখনকার দিনে দেখা যেতো টিভি, ফ্রিজ, টেপরেকর্ডার, ভিসিডি, ডিভিডি, চার্জার লাইট, সিলিং ফ্যান, টেবিল ফ্যান, ইস্ত্রিসহ বিভিন্ন ধরনের নষ্ট হয়ে যাওয়া সামগ্রীগুলো মেরামতের জন্য নিয়ে আসা হতো কারিগরদের কাছে।

তখন একজন কারিগর প্রতি মাসে প্রায় ৪০ থেকে ৫০টি কাজ পেতেন। আর তা দিয়ে দোকান ভাড়া এবং নিজেদের পরিবার পরিজন নিয়ে ভালোই চলতেন।

কিন্তু বর্তমানে ইন্টারনেট, ফেসবুক, মোবাইল মেমোরি কার্ড এবং টিভি, ফ্রিজসহ বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য সামগ্রীর কোম্পানির ভিড়ে তেমন একটা ভালো নেই তারা। এর কারণ হচ্ছে তখনকার সময়ে ইন্টারনেট, ফেসবুক, মোবাইল মেমোরি কার্ডের এতটা প্রচলন বা ব্যবহার ছিলো না।

বিভিন্ন কোম্পানিগুলোও তাদের যে কোনো পণ্যের এতটা ওয়ারেন্টি বা গ্যারান্টি দিতো না। তাই যে কোনো ইলেকট্রনিক্স জিনিস সহজেই নষ্ট হয়ে যেতো এবং তা মেরামতের জন্যে মানুষজন মিকারদের কাছে নিয়ে আসতেন।

বর্তমানে বিভিন্ন কোম্পানি তাদের যে কোনো পণ্যের ৫ থেকে ৮/১০ বছরের গ্যারান্টি বা ওয়ারেন্টি দিয়ে থাকে। তাই সেগুলো অতি সহজে নষ্টও হয়ও না। আর নষ্ট হলেও সেগুলো ওয়ারেন্টি অনুযায়ী কোম্পানির মাধ্যমেই মেরামত করে দেয়া হয়।

এছাড়াও যুব সমাজ হতে শুরু করে অনেক পরিবারের সদস্যরাই এখন বিভিন্ন স্যাটেলাইট চ্যানেল ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিনোদন অনুষ্ঠান গুলো দেখে অথবা কেউ মেমোরি কার্ডে ছবি অথবা গান লোড করে দেখে। তাই টিভি ভিসিডি কিংবা টেপ রেকর্ডারের তেমন প্রয়োজন হয় না। সেজন্যে কোনো ইলেকট্রনিক্স পণ্য সামগ্রী নিয়ে মিকারদের কাছে তেমন একটা আসতে হয় না মানুষজনকে।

গত ক’দিনে চাঁদপুর শহরের অনন্যা সুপার মার্কেটের অনন্যা ইলেকট্রনিক্সরে সঞ্জিত চক্রবর্তী, রেলওয়ে হকার্স মার্কেটের তরঙ্গ ইলেকট্রনিক্সরে স্বপন সাহা, সনি ইলেক্ট্রনিক্সরের শিমুসহ বেশক’টি প্রতিষ্ঠানের মিকারদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, আগের তুলনায় এখন তাদের কাজের তেমন একটা চাহিদা নেই।

তারা জানান, আমরা আগে প্রতিমাসে যেখানে ৪০ থেকে ৫০-৬০টির মতো কাজ পেতাম কিন্তু এখন দেখা যায় আমরা মাসে ১০ থেকে ১৫-২০টি কাজ পেয়ে থাকি। আর সেই কাজ করে আমাদের তেমন একটা লাভ হয় না।

মানুষ শুধু যন্ত্রাংশের মূল্য দিতে চায় তাদের পারিশ্রমিকটা অনেকেই দিতে চায় না। যেখানে একটা পার্টস (যন্ত্র) কিনতে হয় ৫শ’ থেকে সাড়ে ৫শ’ টাকা, মানুষজন সেই পার্টসের দাম দিলেও কেউ কেউ কাজ অনুযায়ী পারিশ্রমিক দিয়ে থাকেন ১শ’ দেড়শ’ কি সর্বোচ্চ ৩শ’ টাকা।

অথচ তাদের একটি প্রতিষ্ঠান চালাতে গিয়ে দেখা যায় প্রতিমাসে দোকান ভাড়া দিতে হয় ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা। এর বাইরে কর্মচারী, ডিশ বিল, বিদ্যুৎসহ আরো অন্যান্য খরচ তো আছেই।

চাঁদপুরের অধিকাংশ কারিগররা তেমন একটা ভালো না থাকার কথা জানালেও তাদের মধ্যে দু’একজন অনেকটাই ভালো আছেন বলে জানিয়েছেন।

এর মধ্যে রেলওয়ে হকার্স মার্কেটের খান এন্টারপ্রাইজের মালিক আমির হোসেন জানান, অন্যরা তেমন কাজ না পেলেও সেদিক দিয়ে তিনি অনেকটাই ভালো আছেন। তার কাছে প্রতিদিনই ছোট-বড় অনেক কাজ আসে। বিশেষ করে ৩/৪টি ইলেকট্রনিক্স কোম্পানির সাথে তার যোগাযোগ থাকায় তিনি অনেক ভালো আছেন।

তিনি জানান, ওইসব কোম্পানির ওয়ারেন্টি দেওয়া যেসব পণ্যে সমস্যা দেখা দেয় কোম্পানির মাধ্যমে সেগুলো তিনিই মেরামত করে থাকেন। সেজন্যে তিনি অন্যদের তুলনায় অনেকটাই ভালো আছেন।

আমির হোসেন ভালো থাকলেও প্রকৃতপক্ষে দেখা গেছে যে সময়ের পরিবর্তনে ইন্টারনেট, ফেসবুক ও বিভিন্ন কোম্পানির ভিড়ে তেমন একটা ভালো নেই চাঁদপুরের ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর কারিগররা।

প্রতিবেদক- কবির হোসেন মিজি : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ০২:৫০ এএম, ৫ ডিসেম্বর ২০১৬, সোমবার
ডিএইচ

Share