Home / চাঁদপুর / চাঁদপুরে পদ্মা-মেঘনায় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই চলছে ইলিশ ধরা
ইলিশ

চাঁদপুরে পদ্মা-মেঘনায় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই চলছে ইলিশ ধরা

চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনায় সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চলছে মা ইলিশ নিধন। মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে শুরু করে হাইমচরের চরভৈরবী পর্যন্ত বিভিন্ন নদীতে জাল দিয়ে মা ইলিশ ধরছে শত শত জেলেরা। প্রশাসনেরর চোখ ফাঁকি দিয়ে মাছ ধরছে অসাধু জেলেরা। চাঁদপুর থেকে নৌপথে ঢাকা বা বরিশাল যাওয়ার পথে দেখা গেছে এ দৃশ্য।

জেলেরা জানান, আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমার আগে-পরে মোট ১৫-১৭ দিন ইলিশের ডিম ছাড়ার মৌসুম। এ সময় সাগর থেকে ঝাঁকে ঝঁকে ইলিশ আসে নদীতে। তাদের প্রজনন নির্বিঘ্ন রাখতে বছরের তিন সপ্তাহ ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করে সরকার। এবার নিষেধাজ্ঞা থাকছে ৪-২৫ অক্টোবর।

জানা গেছে, নৌকাতেই এসব ইলিশ বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা জেলেদের কাজটি করতে বাধ্য করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নদীর তীর লাগোয়া বিভিন্ন স্থানে সন্ধ্যা, রাত ও ভোর হলেই জমে উঠে অবৈধ ইলিশের হাট। প্রতিবছরের মতো এবারও স্থানীয় প্রশাসন মা ইলিশ শিকারের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে। কিন্তু ঠেকানো যাচ্ছে না শিকারিদের।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন জেলে জানান, মাছ ব্যসায়ীরাই জেলেদের জাল ফেলতে বাধ্য করেন। দাম বেশি ও দাদন দেওয়ার লোভ দেখায় কেউ কেউ। জেলেদের যারা অগ্রিম টাকা নেয়, তারা বাধ্য হয় মাছ ধরতে। প্রশাসনের কেউ কেউ অনৈতিক সুবিধা নিচ্ছেন বলেও অভিযাগ পাওয়া গেছে।

তারা আরো জানান, জেলা ট্রাস্কফোর্স অভিযান পরিচালনা কিছু লোক অভিযানের নামে প্রতিবছর বাণিজ্য করে থাকে। প্রতিবছর তাদের বাণিজ্যে সফল করতে ভিন্ন ভিন্ন প্রন্থা অবলম্ভন করে। যেন কোন বছর বিকাশের মাধ্যমে লেনদেন করেন আবার কোন বছর দালালদের মাধ্যমে লেনদেন করেন।

জানা গেছে, এবছর মাছ ধরা জেলে পল্লীগুলোতে লোকের মাধ্যমে অভিযানের খবরা-খবর জানাতে নৌকা প্রতি কন্ট্রাক্ট করছে। তাদের বাণিজ্য সফল করতে এবছর কন্ট্রাক্টের মাধ্যম হিসেবে জেলে নেতা ও গণমাধ্যম কর্মীদের ব্যবহার করছে।

মধ্যস্থকারীদের কাজ হলো জেলা ট্রাস্কফোর্স অভিযান কোন কোন সময় হবে সেই খবর আদান প্রদান করা। এতে জেলা নৌকা প্রতি প্রতিদিন হাজার টাকা পর্যন্ত কন্ট্রাক্ট করেছে বলে জানা যায়। কন্ট্রাক্টের মধ্যে রয়েছে- রওনাগোয়াল, পুরাণ ফায়ার সার্ভিস, আনন্দ বাজার, বিষ্ণপুর ইউনিয়নের লালপুর গ্রাম,বাবুর্চিঘাট, দোকানঘর, লক্ষ্মীপুর, হরিণা ঘাটের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে, আখনের হাটসহ আরো বেশ কয়েকটি স্থান।

ইলিশ

পদ্মা-মেঘনায় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চলছে মা ইলিশ নিধন

দেখা যায়, ঢাকা সদরঘাট থেকে দক্ষিণাঞ্চলে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চগুলো মুন্সীগঞ্জের পর থেকে নদীতে স্বাচ্ছন্দে চলতে পারে না। রাতে জাল ফেলে জেলেরা নৌকায় বসে থাক। বড় নৌযানকে আসতে দেখলেই তারা আলো জ্বালিয়ে নৌযানগুলোকে দিক বদলানোর নির্দেশ দেয়। চালকরাও জাল এড়াতে জেলেদের দেখানো পথে লঞ্চ ঘোরাতে বাধ্য হন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সোমবার চাঁদপুর থেকে ঢাকাগামী এমভি ঈগল লঞ্চের চালক চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘সরকার এই সময় মা ইলিশকে ডিম ছাড়ার সুযোগ দিতে জাল ফেলা নিষিদ্ধ করেছে। এ সময় আমাদের স্বচ্ছন্দে নৌযান চালানোর কথা। কিন্তু সেটার জো নেই। রাতভর জেলেদের টর্চের আলো এসে পড়ছে আমাদের চোখে। স্বাভাবিক সময়েও জেলেদের নির্দেশনায় আমাদের লঞ্চ চালাতে হয়। এখন তো নদীতে ইলিশ ধরা বন্ধ। তারপরও তাদের মাছ ধরতে দেখি।’

জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিচ্ছি। কেউ যদি রাতে জাল ফেলে, অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাছাড়া মা ইলিশ রক্ষায় এবার আমরা কঠোর অবস্থানে আছি। অভয়াশ্রম চলাকালে জেলা ট্রাস্কফোর্সের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত আছে। অভয়াশ্রমের ২২ দিন আমরা ড্রেজার বন্ধ রেখেছি। নদীত ব্যক্তিমালিকানাধীন সব স্প্রিডবোট বন্ধ রাখার ব্যবস্থা করেছি। জেলেপল্লীসহ অন্যান্য জায়গায় এ সংক্রান্ত সচেতনতা বৃদ্ধিকল্পে মাইকিং এবং প্রচার প্রচারণারও করা হয়েছে। নিষিদ্ধ ২২ দিন মৎস্য আহরণে বিরত থাকা প্রতিটি জেলে পরিবারকে ২০ কেজি হারে চাল প্রদান করা হয়েছে।’

উল্লেখ্য, ইলিশ সম্পদ সংরক্ষণে প্রটেকশন অ্যান্ড কনজারভেশন অব ফিশ অ্যাক্ট, ১৯৫০-এর অধীনে প্রণীত প্রটেকশন অ্যান্ড কনজারভেশন অব ফিশ রুলস, ১৯৮৫ অনুযায়ী মোট ২২ দিন সারাদেশে ইলিশ আহরণ, পরিবহন, মজুত ও বিপণন নিষিদ্ধ। সরকারের নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করা হলে কমপক্ষে এক থেকে সর্বোচ্চ দুই বছর সশ্রম কারাদণ্ড অথবা পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।

সিনিয়র স্টাফ করেসপন্ডেট, ২০ অক্টোবর ২০২১