সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি, বর্ষা পেরিয়ে শরৎ এসেছে। সাধারণত বছরের এ সময়ে দেশের বাজারে ইলিশের জোগান বেড়ে যায়। এতে ব্যাপক হারে দাম কমে। আর ইলিশের জন্য ভোক্তাদের চাহিদাও থাকে বেশি। কিন্তু এবারের চিত্র ভিন্ন রকমের। যেমন আজ বুধবার রাজধানীর অন্যতম পাইকারি বাজার কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা যায়, গুটিকয়েক বিক্রেতা অল্প কিছু ইলিশ নিয়ে বসে আছেন, ক্রেতাও খুব কম। মাঝেমধ্যে দু-একজন ক্রেতা এলেও চড়া দাম শুনেই চলে যান।
কারওয়ান বাজারে এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে এ ধরনের ইলিশের দাম ১ হাজার ৩০০ টাকা থেকে দেড় হাজার টাকার ওপরে। রাজধানীর অন্য বড় বাজারগুলোর মধ্যে মালিবাগ, শান্তিনগর ও তেজগাঁওয়ের কলমিলতা মার্কেটে বড় ইলিশের কেজি দেড় হাজার টাকার ওপরে। ১ কেজির নিচে, অর্থাৎ ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের পাইকারি দাম ৯০০ টাকা। খুচরা বাজারে সেই মাছ ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মগবাজার এলাকার বাসিন্দা রীতা হালদার গত বুধবার সকালে কারওয়ান বাজারে পাইকারি দামে ইলিশ কিনতে এসেছিলেন। এই দোকানে, ওই দোকানে অনেকক্ষণ ঘোরাফেরা করলেও কাঙ্ক্ষিত দামে আর ইলিশ কেনা হয়নি তাঁর। অগত্যা অন্য মাছ কিনে বাসায় ফিরলেন। যাওয়ার সময় বললেন, ইলিশের দাম এক সপ্তাহ আগেও কিছুটা কম ছিল। হঠাৎ দাম বেড়ে যাওয়ায় আর প্রিয় মাছটি কেনা যাচ্ছে না।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে বাজারে গত বছরের এ সময়ের তুলনায় ইলিশের দাম ২১ দশমিক ৫৩ শতাংশ বেশি। কারওয়ান বাজারের মাছ বিক্রেতা মো. সুমন ইসলাম প্রথম আলোকে জানান, গত বছর এ সময়ে খুচরা পর্যায়ে ১ কেজির বেশি ওজনের ইলিশ ৯০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। আর ১ কেজির কম ওজনের ইলিশের দাম ছিল ৬০০ টাকার মতো।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুধু ঢাকার পাইকারি বাজারই নয়, দেশের সবচেয়ে বড় ইলিশের বাজার (ল্যান্ডিং স্টেশন) চাঁদপুর বড় স্টেশনের মাছঘাটেও এবার ইলিশের দাম তুলনামূলক বেশি। বুধবার সেখানেও প্রতি মণ ইলিশ ৪৬ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। সেই হিসাবে ১ কেজি ইলিশের দাম পড়ে ১ হাজার ১৫০ টাকা।
জানতে চাইলে চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির সভাপতি আবদুল বারী জমাদার বলেন, সাধারণত বছরের এ সময়ে চাঁদপুরে দৈনিক চার হাজার মণ ইলিশ ওঠে। কিন্তু এ বছর দৈনিক ৪০০ থেকে ৫০০ মণের বেশি ইলিশ উঠছে না।
দেশে গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট ইলিশ উৎপাদিত হয়েছিল ৫ লাখ ৫০ হাজার টন, যা তার আগের অর্থবছরের তুলনায় ১৭ হাজার মেট্রিক টন বেশি। এখন পর্যন্ত মাছের জোগান তুলনামূলক কম হলেও মৎস্য সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আশা করছে, এবার ইলিশের উৎপাদন বিগত বছরগুলোর চেয়ে বেশি হবে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, এ মুহূর্তে ইলিশের উৎপাদন কম থাকার কারণ হচ্ছে এটি পূর্ণিমা ও অমাবস্যার মাঝামাঝি সময়। তাই এখন তুলনামূলক কম মাছ ধরা পড়ছে। তবে ২১ সেপ্টেম্বর একটি পূর্ণিমা রয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, তখন ইলিশ আহরণ বাড়বে এবং বাজারেও দাম কমে আসবে।
ঢাকা ব্যুরো চীফ