মা ইলিশ রক্ষায় সরকারের নিষেধাজ্ঞা জারির পর থেকে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় মেঘনা নদীতে প্রশাসন ও মৎস্য কার্যালয়ের অভিযান চলছে।
সোমবার পর্যন্ত অভিযানে ১৬ জেলেকে আটক করা হয়, জেল-জরিমানা করা হয় ১২ জনকে। জব্দ করা হয় প্রায় দুই লাখ মিটার কারেন্ট জাল। তবু মেঘনায় দেদার ইলিশ নিধন করছেন জেলেরা। এতে ব্যাহত হচ্ছে মা ইলিশের নিরাপদ প্রজনন।
মতলব উত্তর উপজেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্র জানায়, মা ইলিশের প্রজনন নির্বিঘ্ন ও নিশ্চিত করতে ১৪ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত ইলিশ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। মাছ ধরা ছাড়াও ইলিশ বেচাকেনা, পরিবহন, বাজারজাতকরণ, সংরক্ষণ ও মজুত করাও নিষিদ্ধ করা হয় ওই পরিপত্রে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যিনি বা যাঁরা ইলিশ শিকার করবেন, তাঁর বা তাঁদের বিরুদ্ধে মৎস্য আইনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও উল্লেখ করা হয় ওই পরিপত্রে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মেঘনার মতলব উত্তর উপজেলার এখলাশপুর, মোহনপুর, ষাটনল, আমিরাবাদ ও বোরোচর এলাকায় ইলিশ শিকারের জন্য জেলেরা কারেন্ট জাল পেতে রেখেছেন। এসব জালের দুই প্রান্ত প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে বাঁধা। জালের আশপাশে কোনো জেলে নেই।
স্থানীয় ব্যক্তিদের অভিযোগ, নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে জেলেরা মেঘনায় কারেন্ট জাল ফেলছেন। অভিযানের খবরাখবর প্রায়ই আগেভাগে জেনে যান তাঁরা। এ জন্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাঁদের ধরা যায় না। এভাবে চলতে থাকলে মা ইলিশ রক্ষা করা যাবে না। আমিরাবাদ এলাকার বাসিন্দা আবুল কালাম ও রেজাউদ্দিন মন্তব্য করেন, কার্যকর অভিযান না থাকায় অনেক জেলে গভীর রাতে ও ভোরে মেঘনা নদীতে জাল পেতে ইলিশ ধরছেন। এ ব্যাপারে আরও কার্যকর ও সাঁড়াশি অভিযান চালানো উচিত।
স্থানীয় মৎস্য বিভাগ সূত্র জানায়, মা ইলিশ রক্ষায় ১৪ অক্টোবর থেকে মতলব উত্তর উপজেলায় মেঘনার ষাটনল থেকে আমিরাবাদ এলাকা পর্যন্ত আটটি অভিযান চালানো হয়। স্থানীয় প্রশাসন, মৎস্য কার্যালয়, পুলিশ ও কোস্টগার্ড এসব অভিযান পরিচালনা করে। এসব অভিযানে ১৬ জেলেকে আটক করা হয়।
পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে জেল-জরিমানা করা হয় ১২ জনকে। অভিযানে জব্দ করা হয় প্রায় দুই লাখ মিটার কারেন্ট জাল, দুটি ইঞ্জিনচালিত ট্রলার ও ১০ কেজি ইলিশ।
মতলব উত্তর উপজেলার সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, তাঁর উপজেলায় প্রতিদিন মেঘনায় ইলিশ রক্ষার অভিযান চালানো হলেও তাঁদের চোখ ফাঁকি দিয়ে মেঘনার বিভিন্ন স্থানে জেলেরা কারেন্ট জাল পেতে ইলিশ নিধন করছেন। নিষেধাজ্ঞাকে আমলেই নিচ্ছেন না অনেকে। সচেতনতার অভাবে তাঁরা এটি করছেন।
তিনি আরও বলেন, তাঁর উপজেলায় জেলের সংখ্যা প্রায় ৯ হাজার। এসব জেলের প্রত্যেককে ২০ কেজি চাল দেওয়া হচ্ছে। তবু তাঁরা মেঘনায় জাল ফেলছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) স্নেহাশীষ দাস বলেন, ইলিশ রক্ষার অভিযানের পাশাপাশি জেলেদের খাদ্যসহায়তাও দেওয়া হয়েছে। তবু জেলেরা ইলিশ ধরছেন। এটি তাঁদের মানসিক দুর্বলতা। শতভাগ কার্যকর অভিযান চালাতে হলে তাঁদের স্পিডবোট দরকার। সরকারের পক্ষ থেকে এ-জাতীয় লজিস্টিক সাপোর্ট নেই। তবু ইলিশ রক্ষায় আপ্রাণ চেষ্টা চালানো হচ্ছে।