চাঁদপুর

রূপালি ইলিশ খেতে চাঁদপুরে

তিন নদীর মোহনার মিঠা পানির রূপালি ইলিশ! সেই ইলিশ কেটে ভেজে দেওয়া হলো, সঙ্গে বেগুন ভাজি আর পোড়া মরিচ। ভাবা যায়! ঘ্রাণটা যেন এখনও লেগে আছে হাতে।

ন্ধুদের কাছে চাঁদপুরের রূপালি ইলিশ খাওয়ার এমন গল্প শুনেছি অনেকবার। যতবার শুনেছি ইচ্ছে করছে তখনই চলে যাই তিন নদীর মোহনার দিকে। কিন্তু বললেইতো আর হয়না, সব কিছুতো ব্যাটে বলে মিলতে হবে।

সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত ইলিশের ভরা মৌসুম। পরিকল্পনা করলাম এ সময়ের ভেতরেই যেতে হবে ইলিশের রাজধানীতে।

ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি হোক বা না হোক, এবাবের ভরা মৌসুমে ইলিশ খাবোই খাব! শেষ অব্দি বৃহস্পতিবার (৬ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৭টায় চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা মেঘনা এক্সপ্রেসে আরেক সহকর্মীসহ ফেনী থেকে উঠে পড়ি চাঁদপুরের গন্তব্যে।

ট্রেন গতি বাড়তেই তন্দ্রাচ্ছন্ন চোখ ঘুমে এলিয়ে পড়লো। রাত ১০টা নাগাদ ঘুম ভাঙে, জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখি ট্রেন থেমেছে হাজীগঞ্জ স্টেশনে। পাশের সিটের যাত্রী জানালেন চাঁদপুর পৌঁছতে আরও এক ঘণ্টার মতো লাগবে।

ট্রেনের জানালা দিয়ে আসা মৃদু বাতাসে আবারও তন্দ্রচ্ছন্ন হয়ে হয়ে পড়ি। কিছুক্ষণ পর সহকর্মী দুলাল তালুকদার ডাকে উঠে জানালা দিয়ে তাকাতেই চোখে পড়ে চাঁদপুর রেলওয়ে স্টেশনের নাম ফলক।

ট্রেন থেকে নেমেই খোঁজ করতে থাকি ইলিশের। প্লাটফর্মের এক দোকানি জানালেন স্টেশনের পাশেই জেলার সবচেয়ে বড় ইলিশের মোকাম।

তার কাছে জানতে চাইলাম, তাজা রান্না করা ইলিশ খেতে হলে কোথায় যেতে হবে। তিনি পরামর্শ দিলেন, শহরের মাদ্রসা রোডের নদীবন্দর এলাকায় যেতে। সেখানে ভালো মানের হোটেল আছে।

দেড়ি না করে উঠে পড়ি রিকশায়। ২০ মিনিট পর আমরা পৌঁছে যাই নদীবন্দর। ২০ টাকা ভাড়া দিয়ে প্রথমেই হোটেলে না গিয়ে বন্দরটা দেখে অসা দরকার মনে হলো। ৫ টাকা প্রবেশ মূল্য দিয়ে বন্দরে প্রবেশ করতেই অভ্যর্থনা।

বড় বিশাল বিলবোর্ডে লেখা ইলিশের বাড়িতে স্বাগতম। তখন ঘড়ির কাঁটায় রাত সাড়ে ১১টা। ঢাকা, শরীয়তপুর, ভোলা,মাদারীপু, বরিশালগামী লঞ্চগুলো ভিড়েছে বন্দরে।

হাঁটতে হাঁটতে চোখে পড়লো বরিশাল হোটেল এন্ড রেস্তোরো। সেখানে লেখা ‘এখানে পদ্মার তাজা ভাজা ইলিশ পাওয়া যায়’। হোটেলের কাছে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হোটেলম্যানদের উষ্ণ অভ্যর্থনা। নাকে ভেসে আসছে ইলিশের ঘ্রাণ, মূহুর্তেই যেন মোহে আটকে গেলাম।

হোটেলের একদম সামনের অংশে বিভিন্ন সাইজের ইলিশ মাছ কেটে মসলা মিশিয়ে রাখা হয়েছে। হোটেল ম্যান জানতে চাইলেন কোন সাইজেরটা খেতে চাই। একদম বড় সাইজ প্রতি পিস ১২০ টাকা, এর থেকে একটু ছোট ১০০ টাকা, একদম ছোট সাইজ ৮০। এছাড়াও আছে বিভিন্ন প্রজাতির নদীর মাছ, পোড়া মরিচ এবং বেগুন ভাজি।

আমরা অর্ডার করলাম বড় সাইজের ইলিশ, সঙ্গে বেগুন ভাজি। হাতমুখ ধুয়ে সিটে বসার ১০ মিনিটের মধ্যেই সাদা ভাতের সেগুলো পরিবেশন করা হলো। আহা! দেখেই সুখ। কি ঘ্রাণ! পেট ভরে দু’জন খেলাম। বিল এলো ৩৫০ টাকা।

ইলিশ তো খাওয়া হলো, এবার থাকার যায়গা খোঁজা দরকার। চাঁদপুরের সহকর্মী মাসুদ ভাই আগে থেকেই স্টেশন রোডের একটি হোটেল বুকিং দিয়ে রেখেছিলেন। হোটেলে গিয়ে কোনো রকমে রাতটা কাটিয়ে ভোর হবার আগেই আমরা চলে আসি বড় রেলওয়ে স্টেশনের পাশের ইলিশের মোকামে, ইলিশ দেখবো বলে।

সকাল ৯টার দিকে মোকামের পাশের একটি হোটেলে আবার ইলিশ ভোজন। সিদ্ধান্ত হলো চাঁদপুরে যতদিন আছি ইলিশ দিয়ে খাব। দুপুরে হাইমচর উপজেলার চল ভৈরবী বাজারে গিয়েও পাতে উঠল ইলিশ। শুক্রবার রাতে যখন ফিরবো তখনও ইলিশ দিয়েই ভুড়িভোজন। ইলিশ ছেড়ে যেন আসতেই চায়না না মন।

বলে রাখা ভালো, চাঁদপুর বড় রেলওয়ে স্টেশনের পাশের মোকাম থেকে ইচ্ছে হলে পছন্দের ইলিশ কিনে নিতে পারেন। সঙ্গে নিয়ে আসার জন্য বরফ দিয়ে ইলিশ প্যাকেট করারও ব্যবস্থা আছে এ বাজারে।

যেতে পারেন হরিণা ফেরিঘাটে। শহর থেকে জায়গাটির দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার। হরিণায় পদ্মার ওপারে শরীয়তপুর। এখানে আছে ইলিশের আরেকটি মোকাম। আকারে একটু ছোট। এখানের সব ইলিশই আসে পদ্মা থেকে। তাছাড়া এখানে খুব কাছ থেকে পদ্মায় জেলেদের ইলিশ ধরা দেখতে পাবেন। (বাংলা নিউজ)

করেসপন্ডেট

Share