Home / চাঁদপুর / ইলিশ ও চাঁদপুর সিটি অব হিলাশা নিয়ে বরিশাল ডিসি’র মন্তব্যে ক্ষোভ
ইলিশ ও চাঁদপুর সিটি অব হিলাশা নিয়ে বরিশাল ডিসি’র মন্তব্যে ক্ষোভ

ইলিশ ও চাঁদপুর সিটি অব হিলাশা নিয়ে বরিশাল ডিসি’র মন্তব্যে ক্ষোভ

বুধবার রাতে বেসরকারি চ্যানেল ডিবিসি নিউজের ‘মানচিত্র : বৈশাখ ও ইলিশ’ প্রসঙ্গে এক লাইভ অনুষ্ঠানে বরিশাল ডিসি ড.গাজী মোঃ সাইফুজ্জামান ইলিশের বাড়ি তথা নিবাস হচ্ছে বরিশাল বলে দাবি করেছেন।

এ নিয়ে চাঁদপুরবাসীর মনে ব্যাপক ক্ষোভ ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে ।

লাইভ অনুষ্ঠানে বরিশালের ডিসি ড.গাজী মোঃ সাইফুজ্জামান বরিশালকে হোম অব ইলিশ দাবি করেন। সেই সাথে ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত জাটকা ধরা নিষিদ্ধ থাকলেও বড় ইলিশ ধরতে বাধা নেই বলেও তিনি দাবি করেন।

যদিও এর মধ্যে ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দু’মাস চাঁদপুরের মতলব উত্তর থেকে লক্ষীপুর জেলার চর আলেকজেন্ডার পর্যন্ত ১শ’ কিলোমিটার পদ্ম-মেঘনা নদীতে সব ধরনের মাছ আহরণ, ক্রয়-বিক্রয়, মজুদ ও পরিবহন নিষিদ্ধ করেছে মৎস্য অধিদপ্তর। এর জন্যে জেলেদের জন্য ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৪০ কেজি করে খাদ্য ও বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

যা বরিশাল জেলা প্রশাসকের বক্তব্যের সাথে সাংঘর্ষিক।

অনুষ্ঠানটির উপস্থাপনায় ছিলেন ডিবিসির সিনিয়র সাংবাদিক মজুমদার জুয়েল । উপস্থাপক মজুমদার জুয়েল ইলিশের রাজধানী চাঁদপুর না বরিশাল এমন প্রশ্ন রেখেছিলেন ।

প্রশ্নের জবাবে বরিশাল জেলা প্রশাসক দাবি করেন, চাঁদপুর ও বরিশাল দুটো জেলায়ই ইলিশ ব্র্যান্ডিং নিয়ে কাজ করছে। সেক্ষেত্রে আরো ক’টি জেলাও আছে যারা ব্যান্ডিং নিয়ে কাজ করছে। বরিশাল হলো হোম অব হিলশা। অথ্যাৎ বরিশাল ইলিশের নিবাস। কারণ হলো বরিশাল ইলিশ উৎপাদন করে, ইলিশ বড়ো করে, জাতির জন্য ইলিশ সরবরাহ করে। সে হিসেবে হোম অব হিলশা বলতে বরিশালকে বুঝায়।’

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে লগোসহ অনুমোদিত ব্যান্ডিং ‘চাঁদপুর সিটি অব হিলশার বিষয়ে তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, বরিশালের ইলিশ চাঁদপুর উপর দিয়ে ট্রানজিট হয়। তাই রাজধানী তথা হোম অব হিলশা বলতে বরিশালকেই বুঝায়। তাঁর দাবি ইলিশের নিবাস, ইলিশের উৎপাদন কেন্দ্র, ইলিশের আবাসভূমি বলতে যা বুঝায় সবকিছু বরিশাল। বরিশাল, ভোলায় ইলিশ উৎপাদন হয় এর মধ্যে বরিশালের ইলিশ ব্যান্ড। বরিশালের ইলিশের ব্র্যান্ডিং সারাদেশে সবাইকে মেনে নিতে হয়।’

চাঁদপুরকে শুধুমাত্র ইলিশের ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করছে, রাজধানীর চাইতে ইলিশের নিবাস, ইলিশের আবাসভূমি বেশি প্রাসঙ্গিক বলে তিনি মনে করেন।

পরে উপস্থাপক চাঁদপুরে ইলিশশূন্য আড়তগুলোর প্রসঙ্গ টেনে স্থানীয় শবেবরাত নামের এক ব্যবসায়ীকে লাইভ অনুষ্ঠানে প্রশ্ন করেন। সেখানে ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমরা চাঁদপুরবাসী ইলিশকে জাতীয় সম্পদ মনে করি। এটি রক্ষা করার দায়িত্ব সবার। নিষিদ্ধ সময়ে ইলিশ ধরা হয় না, তাই চাঁদপুরের আড়তগুলোতে নিষিদ্ধ সময়ে ইলিশ পাওয়া যাবে না এটাই স্বাভাবিক।

তার এ দাবিকে ‘চাঁদপুর সিটি অব হিলশা’ ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর সংশ্লিষ্টদের মনে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।

তাদের সাথে কথা বলা জানা যায়, দু’মাস পদ্ম-মেঘনা নদীর চাঁদপুরের ১০০ কিলোমিটারসহ ৫টি স্থানে অভয়আশ্রম ঘোষনা করেছে সরকার । এ কারণে অভয়আশ্রম এলাকায় নদীতে সবধরনের মাছ ধরাই নিযিদ্ধ ।

তার এই মন্তব্যে ঐতিহাসিকভাবে ইলিশের রাজধানী চাঁদপুরের জনসাধারণ দারুণ আঘাত পেয়েছে । ইলিশকে ঘিরে চাঁদপুরে ইলিশ চত্ত্বর, একযুগ যাবত ইলিশ উৎসব পালন, মৎস্য গবেষণা ইনিস্টিটিউট গড়ে উঠেছে।

চাঁদপুরেরর স্থানীয় পত্রিকাসহ সর্বত্র ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর ব্র্যান্ডিং লোগো শোভা পাচ্ছে। ব্র্যান্ডিং জেলা চাঁদপুর বাংলাদেশের মধ্যে এ প্রথম চাঁদপুর জেলা প্রশাসন, চাঁদপুর চেম্বার, সুশীল সমাজ,সাংবাদিক জনপ্রতিনিধিদের যৌথ উদ্যোগে এবং চাঁদপুর ও ঢাকায় ইলিশ মেলার আয়োজন করেছে এবং সফল হয়েছে ।

বিশেষ করে চাঁদপুর ও রাজধানী ঢাকা বসুন্ধরা সিটিতে ব্যতিক্রমধর্মী ইলিশ মেলা’র এ আয়োজন দেশের সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে ।

সারা বিশ্বে এরইমধ্যে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনার ইলিশ ব্র্যান্ডিং হিসেবে সমাদৃত । সর্বোপরি ইলিশের বাড়ি চাঁদপুরকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন করেছে । তারপরও বরিশালের জেলা প্রশাসক ড.গাজী মোঃ সাইফুজ্জামানের এমন দাবি করা কতটুকু যুক্তিযুক্ত । আর এ নিয়ে চাঁদপুরের বিভিন্ন মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে ।

এ ব্যাপারে চাঁদপুর জেলা মৎস্য অফিসার সফিকুল ইসলাম জানান, বিষয়টি আমি শুনেছি । চাঁদপুরের ষাটনল থেকে চর আলেকজেন্ডার পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার অভয়আশ্রম ঘোষনা করেছে সরকার । আর লক্ষ্মীপুরের ৩০ কিলোমিটার নদী এলাকা অভয়আশ্রম ঘোষনা করা হয়েছে । এ সময়ে চাঁদপুরের অভয়আশ্রম এলাকায় মাছ ধরা নিযিদ্ধ ও জাটকা রক্ষায় ব্যাপক কর্মসূচি পালন করা হয়েছে । এ ব্যাপারে ব্যাপক জনমতও রয়েছে । জনসাধারণও সচেতন হচ্ছে ।

এ মৎস্য কর্মকর্তা আরো বলেন, বরিশাল নদী এলাকায় এখনোও অভয়আশ্রম ঘোষনা করা হয়নি । চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা মোহনায় ডিম ছাড়ে। এ এলাকায় প্রচুর ইলিশ মাছ পাওয়া যায় । যার কারণে ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর লোগো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন করেছে ।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,আমি ওয়েবসাইটে দেখেছি পর্যটন মন্ত্রণালয়ে বরিশালের জেলা প্রশাসক বরিশাল হোম অব হিলশা নাম চেয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন । তা অনুমোদন হয়েছে কিনা তা জানি না ।

এ ব্যাপারে চাঁদপুর চতুরঙ্গের মহাসচিব ইলিশ উৎসবের রুপকার হারুন আল রশিদ জানান, চাঁদপুরের ইলিশ সারা বিশ্বে পরিচিত । সারা বিশ্বে চাঁদপুরের ইলিশ ব্র্যান্ডিং হয়ে গেছে । আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন শহরে চাঁদপুরের ইলিশ পাওয়া যায় এমন প্রচারপত্রের মাধ্যমে ইলিশ বিক্রি করা হয়ে থাকে । চাঁদপুরে ইলিশ রক্ষায় ইলিশ উৎসবের মাধ্যমে দীর্ঘদিন আন্দোলন করে আসছি । এটা সামাজিক আন্দোলনে রুপ নিয়েছে । পাশাপাশি ব্র্যান্ডিং এর অংশ হিসেবে চাঁদপুর জেলা প্রশাসন ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর নামকরণ করেছে । যা কিনা এরইমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন করেছে । ঐতিহাসিকভাবে ইলিশ ঐতিহ্যের দাবিদার চাঁদপুরঃ। এটা ওনারশীপ দাবিধার চাঁদপুরই, বরিশাল নয় ।

লাইভ অনুষ্ঠানে বরিশাল ডিসির মন্তব্যের সে ভিডিওটি দেখুন-

চাঁদপুর টাইমস রিপোর্ট
আপডেট, বাংলাদেশ সময় ২: ০৩ পিএম, ১৪ এপ্রিল ২০১৭, শুক্রবার
ডিএইচ

Leave a Reply