নিষেধাজ্ঞা সময়ে ইলিশ আহরণ থেকে বিরত থাকবেন : ডিসি

চাঁদপুর সদর উপজেলার হরিণাঘাট, বহরিয়া বাজার, হাইমচরের চরভৈরবী, কাটাখালীসহ বিভিন্ন এলাকায় মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ২০২৫’ সফল করার লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) জেলা টাস্কফোর্সের একাধিক জনসচেতনতামূলক পথসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন।

তিনি বলেন, “মা ইলিশ রক্ষায় সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে। ইলিশ আমাদের জাতীয় সম্পদ। এই সময়ে ইলিশের প্রজনন ঘটে, তাই আগামী প্রজন্মকে বাঁচাতে এবং টেকসই মৎস্য সম্পদ নিশ্চিত করতে সকলকে সহযোগিতা করতে হবে।”

তিনি জেলেদের উদ্দেশে আরও বলেন, “নিষিদ্ধ সময়ে আপনারা ইলিশ আহরণ থেকে বিরত থাকবেন। সরকার ইতোমধ্যেই নিবন্ধিত জেলেদের জন্য ভিজিএফ এর মাধ্যমে চাল বিতরণের ব্যবস্থা নিয়েছে। তাই আপনারা সাময়িক কষ্ট স্বীকার করে দেশের স্বার্থে আইন মেনে চলুন।”

পথসভায় উপস্থিত জেলেরা ইলিশ আহরণের এই নিষিদ্ধ সময়ে নদীতে মাছ না ধরার অঙ্গীকার করেন। তারা বলেন, মা ইলিশ রক্ষিত হলে ভবিষ্যতে নদীতে ইলিশের প্রাচুর্য বাড়বে, আর তাতে জেলেদের জীবনও হবে সচ্ছল।

বিশেষ অতিথি ছিলেন নৌ পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার সৈয়দ মোশফিকুর রহমান, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ, কোস্টগার্ড চাঁদপুর স্টেশনের স্টেশন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট শওকত আহমেদ এবং সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ওমর ফারুকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সদস্যবৃন্দ।

পথসভা থেকে জেলে ও মৎস্যজীবীদের উদ্দেশ্যে বলা হয়, ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর (১৯ আশ্বিন থেকে ৯ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ) পর্যন্ত ২২ দিনব্যাপী চাঁদপুরসহ সারাদেশে ইলিশ ধরা, পরিবহন, মজুদ, বেচাকেনা ও বিনিময় সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে সতর্ক করা হয়।

পথসভায় নৌ পুলিশ সুপার সৈয়দ মোশফিকুর রহমান বলেন, আপনারা সবাই জানেন মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান শুরু হয়েছে। আগামী ২২ দিন দেশের কোথাও মা ইলিশ ধরা, বিক্রি করা, মজুদ করা বা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নেয়া সম্পূর্ণভাবে নিষেধ। এ সময় মাছের আড়ত, হাট-বাজার এবং চেইনশপে পুলিশের নিয়মিত অভিযান চলবে।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, ইলিশ রাখার জন্যে ব্যবহৃত ককশিটের বাক্স তৈরি বা পরিবহন করা যাবে না। ইলিশ ধরার জন্যে নৌকা, ট্রলার, ফিশিংবোট নদীতে নামানো বা ঘাট থেকে ছাড়াও যাবে না। এছাড়া নদীতে নতুন কোনো চরে বসতি, বাজার বা অস্থায়ী ঘর বানানো যাবে না। তিনি বলেন, মা ইলিশ ধরা বা লুকিয়ে বিক্রি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। কেউ নিয়ম ভাঙ্গলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তিনি জেলেদের এই ২২ দিনে সরকারের দেয়া বিকল্প কাজের পরামর্শ গ্রহণ করতে এবং মা ইলিশ সংরক্ষণে সহায়তা করতে অনুরোধ জানান। তিনি সচেতনতা বাড়ানো এবং নিয়ম লঙ্ঘনকারীদের তথ্য পুলিশকে দিয়ে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান।

পথসভা শেষে উপস্থিত জেলেদের মাঝে সচেতনতামূলক লিফলেট ও প্রচারসামগ্রী বিতরণ করা হয়। এ অভিযান সফল করতে স্থানীয় প্রশাসন, মৎস্য বিভাগ, কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশ যৌথভাবে কাজ করবে।

এছাড়া একইদিন বিকেল তিনটায় চাঁদপুর শহরের বড় স্টেশন টিলাবাড়ি এলাকায় সচেতনতামূলক পথসভায় জেলেদেরকে করণীয় ও বর্জনীয় সম্পর্কে বুঝিয়ে বলা হয়।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন সহকারী পুলিশ সুপার ইমতিয়াজ আহমেদ পিপিএম, চাঁদপুর সদর নৌ থানার অফিসার ইনচার্জ একেএমএস ইকবালসহ অন্যান্য কর্মকর্তা। প্রতিটি ঘরে মাইকিংয়ের মাধ্যমে সরকারের আদেশ মান্য করার জন্যে বলা হয় এবং লিফলেট বিতরণ করা হয়। নৌ পুলিশ, চাঁদপুর অঞ্চলের প্রচার ও প্রকাশনা সেল থেকে এসব তথ্য জানানো হয়।

স্টাফ করেসপন্ডেট/ ৩ অক্টোবর ২০২৫