চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীতে পানি বাড়লেও এখনও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ইলিশের দেখা পাননি জেলেরা। ইলিশ আহরণের জন্য দিনে-রাতে হাজার হাজার জেলে নদী চষে বেড়ালেও ফিরছেন খালি হাতে।
আবার কোনো কোনো জেলে স্বল্প সংখ্যক ইলিশ পেলেও তা দিয়ে তাদের নৌকার জ্বালানি খরচও মিটছে না। আড়তগুলোতে যে অল্প কিছু ইলিশ দেখা যায়, তা আসে দক্ষিণাঞ্চল থেকে। তাই ইলিশের আড়তগুলোতে বিক্রি হচ্ছে অন্যান্য মাছ। তবে, আগামী ভাদ্র মাস থেকে ইলিশ ধরা পড়বে বলে জেলেরা আশা করছেন।
বুধবার (৪ জুলাই) দুপুরে চাঁদপুর সদর উপজেলার হানারচর ইউনিয়নের হরিণা ঘাট ও শহরের বড় স্টেশন মাছঘাটে কথা হয় ইলিশ ব্যবসায়ী ও জেলেদের সঙ্গে।
তারা জানান, চলতি বছরের মার্চ-এপ্রিল দু’মাস জাটকা সংরক্ষণ কর্মসূচি চলাকালে কিছু অসাধু জেলে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে অবাধে জাটকা নিধন করেছেন। যার কারণে নদীতে পানি বাড়লেও এখনও চাঁদপুর অভয়াশ্রম এলাকায় তেমন ইলিশ নেই। যার প্রভাব ইলিশ ব্যবসায়ী ও জেলেদের মধ্যে পড়তে শুরু করেছে। জেলেরা এখন দাদনদারদের ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে চাপে রয়েছেন।
হরিণা ফেরিঘাট এলাকার প্রবীণ মৎস্য ব্যবসায়ী সিরাজ সৈয়াল বলেন, আগে জ্যৈষ্ঠ ও আষাঢ় মাসে ইলিশের আমদানি বাড়লেও এখন আর তা হয় না। অগ্রহায়ণ মাস থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত ইলিশের আমদানি বাড়ে। তবে এ বছর আমাদের এলাকায় কারেন্টজাল দিয়ে এক শ্রেণির জেলে অবাধে জাটকা নিধন করেছেন। যার প্রভাব এখন পড়ছে।ইলিশ ধরতে যাচ্ছেন জেলেরা। ছবি এলাকার আরেক ব্যবসায়ী আহসান সৈয়াল বলেন, হরিণা মাছঘাটে হারুন খাঁ, নেছু ছৈয়াল, রাশেদ খান, হাফেজ খান, ইউছুফ গাজীসহ ১৫ জন ইলিশ ব্যবসায়ী রয়েছেন। গত বছর এ সময়ে আমরা প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ মণ ইলিশ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাইকারি বিক্রির জন্য পাঠিয়েছি। কিন্তু এ বছর সবাই বেকার বসে আছি।
মতলব উত্তর উপজেলার মৎস্যজীবী নেতা ওমর ফারুক প্রধানিয়া বাংলানিউজকে বলেন, এবার আমাদের এলাকায় জেলেরা প্রায় ৯৫ ভাগ জাটকা নিধন করেছেন। তাদের প্রশাসন কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি।
শহরের পুরাণ বাজারের সুতা ও জাল ব্যবসায়ী জীবন কৃষ্ণ দেবনাথ বাংলানিউজকে বলেন, ইলিশের লেট সিজন যাচ্ছে। ঋতুর পরিবর্তন হওয়ার কারণেই ইলিশের আকাল।
জেলার সবচাইতে বড় ইলিশের আড়ৎ বড় স্টেশন মাছঘাটের মেসার্স মিজানুর রহমান কালু ভুঁইয়া আড়তের ম্যানেজার মো. ফারুক বাংলানিউজকে বলেন, এখন প্রতিদিন দক্ষিণাঞ্চল থেকে ১০-১২ মণ এবং স্থানীয় জেলেদের কাছ থেকে আসছে ছয় থেকে আট মণ ইলিশ। এসব ইলিশ আড়তে আনার ১০ মিনিটেই বিক্রি শেষ হয়ে যায়। চাহিদার ১০ ভাগের একভাগ ইলিশও মিলছে না। আর পদ্মা-মেঘনার এক কেজি ওজনের ইলিশের মূল্য দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা। আর দক্ষিণাঞ্চলের ইলিশ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬ থেকে ১৮শ’ টাকায়।
জেলা মৎস্যজীবী লীগ এর সাধারণ সম্পাদক মো. মানিক দেওয়ান বাংলানিউজকে বলেন, মতলবের ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুরের চর-আলেকজান্ডার পর্যন্ত পদ্মা-মেঘনার একশ’ কিলোমিটার এলাকা ইলিশের অভয়াশ্রম হিসেবে চিহ্নিত করেছে সরকার। মার্চ-এপ্রিল দু’মাস এ এলাকায় সব ধরনের জাল ফেলা নিষিদ্ধ। এ সময়ে পদ্মা-মেঘনায় ইলিশ প্রবেশের সব রুট অভয়াশ্রম সময়ে বন্ধ করে দিতে হবে। তা না হলে জাটকা সংরক্ষণ কর্মসূচি সফল হবে না।
এবার জাটকানিধন বন্ধে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে জানিয়ে চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুল বাকী বাংলানিউজকে বলেন, নদীতে ইলিশ মাছ এখনও আসেনি। পাহাড়ি ঢল ও নদীতে খরস্রোত দেখা দিলে ইলিশের দেখা মিলবে। আশা করছি, ভাদ্র মাস থেকে পর্যাপ্ত সংখ্যক ইলিশ পাওয়া যাবে।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা রয়েছে ৪১ হাজার ৪২। যে সব জেলে এখনো অনিবন্ধিত রয়েছেন তাদের পর্যায়ক্রমে নিবন্ধনের আওতায় নিয়ে আসা হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
: আপডেট, বাংলাদেশ ১১: ০৯ পিএম, ৫ জুলােই ২০১৮, বৃহস্সপতিবার
ডিএইচ