সারাদেশ

ইলিশের স্বাদ মেটাতে পশ্চিমবঙ্গে মিল্ক ফিশের চাষ

ইলিশের চাহিদা মেটাতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার মাছটির বিকল্প হিসেবে মিল্ক ফিশের চাষ শুরু করেছে। মিল্ক ফিশ দেখতে অনেকটা ইলিশের মতো। ইলিশের মতোই তার স্বাদ-গন্ধ।

বাঙালির রসনার তৃপ্তির প্রধান মাছ—ইলিশ। ইলিশ পাওয়া যায় বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। তবে স্বাদের দিক থেকে বাংলাদেশের ইলিশ এখনো অতুলনীয়। গোটা পশ্চিমবঙ্গে, বিশেষ করে বাংলাদেশের পদ্মার ইলিশের চাহিদা প্রচুর।

আগে বাংলাদেশের পদ্মার ইলিশ আসত পশ্চিমবঙ্গে। কিন্তু ২০১২ সালের জুলাইয়ে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ। ফলে দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের ইলিশের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ।

কাল মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গে বাঙালি হিন্দুরা পালন করছে জামাইষষ্ঠী উৎসব। জামাইদের তুষ্ট করা আর তাঁদের ভূরিভোজের জন্য শ্বশুরবাড়িতে আয়োজিত হচ্ছে এই অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ ইলিশ। সঙ্গে থাকছে আম, কাঁঠাল, লিচু।

বাংলাদেশ ইলিশ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ার পর এখানকার টাটকা ইলিশ দিয়েই চলছে জামাইষষ্ঠী। কিন্তু সমুদ্রে বৈরী আবহাওয়ার কারণে গত শুক্র ও শনিবার ইলিশ না ধরেই জেলেরা ফিরে এসেছেন তীরে। এ কারণে বঙ্গোপসাগরের টাটকা ইলিশ থেকে এবার বঞ্চিত হচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের জামাইরা। তাই হিমাগারে সংরক্ষিত গতবারের ইলিশ দিয়ে এবার রসনা তৃপ্তি করবেন জামাইরা।

মিল্ক ফিশকে ভারতে বলা হয় দাক্ষিণাত্যের ইলিশ। পাওয়া যায় ভারতের দক্ষিণের রাজ্য তামিলনাড়ু, অন্ধ্র প্রদেশসহ দক্ষিণ ভারতের সমুদ্র-উপকূলবর্তী অঞ্চলে।

মিল্ক ফিশ আবার ফিলিপাইনের জাতীয় মাছ। সাধারণত প্রশান্ত ও ভারত মহাসাগরে দেখা যায়। সর্বাধিক ১৫ বছর বাঁচে। সর্বোচ্চ ওজন ১৪ কেজি। লম্বা হয় এক থেকে দেড় মিটার পর্যন্ত। মাছের আঁশ রুপালি রঙের, চকচকে।

মিল্ক ফিশ সমুদ্রে পাওয়া গেলেও ডিম পাড়তে উপকূলের খাড়ি, নদীনালায় আসে। ডিম পেড়ে তারা আবার চলে যায় সমুদ্রে। এরা মিষ্টি ও হালকা নোনা জলেও বেড়ে উঠতে পারে।

মিল্ক ফিশ চাষের লক্ষ্যে গত বৃহস্পতিবার এখানকার মৎস্য দপ্তর চেন্নাই থেকে বিমানে করে বিশেষ ব্যবস্থায় কলকাতায় নিয়ে এসেছে পোনা। প্রথম পর্যায়ে আনা হয়েছে আট হাজার পোনা। প্রথম চাষ শুরু হচ্ছে পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়ায়।

হলদিয়ার মৎস্য অধিকর্তা সুমন কুমার সাহু বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে এই প্রথম মিল্ক ফিশ চাষ করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার চেন্নাই থেকে আনা হয়েছে পোনা। চার মৎস্যজীবীর হাতে পোনা তুলে দেওয়া হয়েছে। এই মাছের স্বাদ অনেকটাই ইলিশের মতো। চাষের ফলে এই মাছ ইলিশের অভাব অনেকটা পূরণ করতে পারবে বলে আশা করা যায়।

চেন্নাইয়ে অবস্থিত সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট অব ব্রাকিস ওয়াটার অ্যাকোয়া কালচারের মৎস্যবিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যে মিল্ক ফিশের কৃত্রিম প্রজনন ঘটাতে সক্ষম হয়েছেন। ফলে মাছের পোনা ভবিষ্যতে সহজলভ্য হবে। বিশেষ করে সমুদ্র এলাকায় এই মাছের চাষ সফল হবে।

কর্মকর্তারা বলছেন, পাঁচ থেকে ছয় মাসের মধ্যে মিল্ক ফিশ ৫০০ গ্রাম ওজনের হয়। ৪০০ গ্রাম ওজন হলে এই মাছ খাওয়ার উপযোগী হয়।

Share