সরকার ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীকে পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থানের মাধ্যমে ২০১৮ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি ভিক্ষুকমুক্ত রাষ্ট্রে পরিণত করার পরিকল্পনা করেছে।
তারই অংশ হিসেবে ‘ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর ভিক্ষাবৃত্তি হোক দূর’ ‘ভিক্ষুক মুক্তকরণ, ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থান কর্মসূচি’ বস্তবায়নে চাঁদপুর জেলা প্রাশাসকের কার্যক্রম চলছে।
স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন ২০০৯-এর পঞ্চম তফসিলের ৩০নং অনুচ্ছেদে ভিক্ষার জন্য বিরক্তিকর কাকুতি-মিনতি করা বা শরীরের কোন বিকৃত অঙ্গ বা নোংরা ক্ষতস্থান প্রদর্শন করার জন্য ৮৯নং ধারায় অনধিক ১৫,০০০ (পনের হাজার) টাকা অর্থদন্ডের বিধান আছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, চাঁদপুর জেলা থেকে ঘৃণিত পেশা ‘ভিক্ষাবৃত্তি’ দূর করার লক্ষ্যে ৪ হাজান ৭শ’ ৫৬ জন ভিক্ষুকের একটি ছবিসহ তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। তাদের বিভিন্ন ধরণের উপকরণ সহায়তা প্রদান, পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের জন্যে বিভিন্ন ব্যক্তি, সংস্থা, সংগঠন ভিক্ষুকমুক্তকরণ তহবিলে আর্থিক সহায়তা প্রদানের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এছাড়া চাঁদপুর জেলার সকল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী একদিনের বেতন ভিক্ষুকমুক্তকরণ তহবিলে জমা দিয়েছে।
চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের ফেসবুক প্রোফাইলে দেয়া এক পোস্টে জানিয়েছেন, স্থানীয়ভাবে তহবিল সংগ্রহের জন্যে জেলা-উপজেলায় পরিচালিত ব্যাংক হিসাব থেকে (২৮ সেপ্টম্বর) ২০১৭ তারিখ পর্যন্ত মোট ৮৬ লাখ ৩২ হাজার ৩শ’ ৩৪ টাকা অনুদান সংগৃহীত হয়েছে।
এরই অধিকাংশ এসেছে চাঁদপুর জেলার সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এক দিনের বেতন থেকে।
ভিক্ষুকদের চাহিদার আলোকে তাদেরকে পুনর্বাসিত করা হবে। তাদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে জেলা ও উপজেলায় ভিক্ষকমুক্তকরণ সংস্থা সংগঠন করে সংস্থার নামে ব্যাংকে একটি হিসাব খোলা হয়েছে।
‘ভিক্ষুকমুক্তকরণ, ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থান কর্মসূচি’ হিসাব নং ০১০০০৯৪৯৬৪১০০, জনতা ব্যাংক, চাঁদপুর শাখা অনলাইভিত্তিক এ হিসাবে যে কোন সময় যে কোন স্থান হতে অর্থ জমা দেয়া যাবে।
এরইমধ্যে এক দিনের বেতনের অর্থ জমা দিয়েছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসন। এবং যারা এখনো অর্থ জমা করার সুযোগ পাননি তাদেরকে “ভিক্ষুকমুক্তকরণ, ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থান কর্মসূচি” নামে জনতা ব্যাংক লিমিটেড, কো-অপারেটিব শাখা, চাঁদপুরে ০১০০০৯৪৯৬৪১০০ নম্বর সঞ্চয়ী হিসাবে জমা দেয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা জানিয়েছেন চাঁদপুর জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সবুর মন্ডল।
এদিকে চাঁদপুর জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সবুর মন্ডল এক খোলা চিঠিতে চাঁদপুরবাসীকে অনুরোধ করছি, যারা ভিক্ষা দিতে ইচ্ছুক তারা বেশি সংখ্যক ভিক্ষুককে অল্প অর্থ,শাড়ি, লুঙ্গি না দিয়ে একজন ভিক্ষুককে একবারে মোটা অংকের অর্থ দিয়ে পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা গ্রহণে সাহায্য করুন। এক্ষেত্রে আপনারা যাকাতের অর্থও জেলা ও উপজেলা ভিক্ষকমুক্তকরণ তহবিলে জমা দিতে পারেন।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি মানুষের কাছে ভিক্ষা করতে থাকবে, কিয়ামতের দিন সে এমন অবস্থায় উঠবে যে, তার মুখমন্ডলে এক টুকরা মাংসও থাকবে না।” বুখারী-১৯৯
অথচ আমাদের সমাজের কেউ কেউ ভিক্ষাবৃত্তিকে ব্যবসা হিসেবে নিয়েছেন, আবার অনেকেই জীবন বাঁচানোর তাগিদে ভিক্ষা করছেন। আর সহজে সওয়াব ও পুণ্য অর্জনের আশায় আমরা ভিক্ষা প্রদান করছি।
ভিক্ষাবৃত্তি একটি অভ্যাসগত সমস্যা, মানসিক সমস্যা এবং অনেক ক্ষেত্রে ব্যবসা। তাই ভিক্ষা দিয়ে ভিক্ষুক সৃষ্টি না করে ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধে ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানে সবাইকে সহযোগিতা করার জন্যে অনুরোধ জানিয়েছেন সদ্য জনপ্রশাসন পদকপ্রাপ্ত চাঁদপুর জেলা প্রশাসক।
এদিকে গত (৩১ আগস্ট) জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো.খোরশেদ আলম ২৬ লাখ টাকার একটি চেক চাঁদপুর জেলা প্রশাসক মো.আব্দুস সবুর মন্ডলের হাতে হস্তান্তর করেছিলেন।
এ টাকা চাঁদপুরের ৮ উপজেলায় ১ হাজার ১শ’ ৪৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা, কর্মচারী ও প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগীয় জেলা-উপজেলায় কর্মরত সব কর্মকর্তাগণ তাদের একদিনের বেতন কর্তন করে এ অনুদান দেন। আরো দেড় হাজার শিক্ষকের ৫ লাখ টাকার চেক প্রদানের আশ্বাস দিয়েছেন ওই জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।
এসময় জেলা প্রশাসক তাঁদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন,‘আমি আশাবাদী ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ সালে চাঁদপুরকে ভিক্ষুক মুক্ত জেলা ঘোষণা দেয়া যাবে।’
প্রতিবেদক : আহম্মদ উল্যাহ, সহকারী বার্তা সম্পাদক চাঁদপর টাইমস
: : আপডেট, বাংলাদেশ ০২ : ১০ পিএম, ১ অক্টোবর সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রোববার
এইউ