চাঁদপুর

‘ইলিশের বাড়িতে’ই দাম চড়া ইলিশের

পদ্মা-মেঘনা আর ডাকাতিয়া নদীর মোহনার জনপদ চাঁদপুরকে সবাই ইলিশের বাড়ি বলেই জানে, এ জেলাটির ব্র্যান্ডিংও করা হয়েছে ইলিশকে নিয়ে। স্বাভাবিকভাবেই ধারণা হতে পারে ইলিশের বাড়িতে বোধ হয় বেশ সস্তা দামেই ইলিশ মিলবে।

সেই ধারণা থেকেই শুক্রবার (৭ সেপ্টেম্বর) বেরিয়ে পড়ি শহরের বড় রেলস্টেশন এলাকার জেলার বড় ইলিশের মোকামে। মোকামে গিয়ে দেখা গেল শুনসান নিরবতা।

ঘাটের পাশে বসে থাকা মধ্য বয়স্ক এক ব্যক্তি জানালেন মোকাম জমতে আরও বেশ দেরি। সাধারণত সকাল ৯টা থেকে ইলিশ আসতে থাকে। পুরোদমে মোকাম জমবে ১০টার পর।

বেলা ১০টা থেকে আসতে শুরু করেছে ইলিশ। জেলেরা নৌকা থেকে নামাচ্ছে হাটে নিলাম শুরু হয়েছে। তখন শুরু হয়নি খুচরো বিকিকিনি। প্রায় আধঘণ্টা পর আড়তদারদের হাঁকডাক শুরু হলো।

মোকামে আলা আমিন মাছের আড়তে গিয়ে মাছের দাম জিজ্ঞেস করতে চোখ কপালে উঠে গেল।

দু’কেজি ওজনের একটা ইলিশ পাঁচ হাজার টাকা দাম! ইলিশ বিক্রেতা পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন এক টাকাও কম হবে না। পাশেই সাজানো আরো কিছু ইলিশ। দেড় কেজি থেকে দু’কেজির কম সাইজের সেগুলো বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১৮শ’ টাকায়। এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৫শ’ টাকায়। আর আধা কেজি থেকে এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৮শ’ থেকে শুরু করে ১২শ’ টাকায়।

চাঁদপুরে থেকে ফেরার পথে চোখে পড়লো চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির কার্যালয়। কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করে ইলিশের চড়া দাম নিয়ে কথা বলা দরকার।

কার্যালয়ে গিয়ে কথা হয় ওই সমিতির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. ইউসুফ বঙ্গবাসীর সঙ্গে। বাইরের জেলা থেকে এসছি শুনে বেশ সানন্দে গ্রহণ করলেন তিনি। তার কাছে জানতে চাইলাম ইলিশের দামের ব্যাপারে।

চাঁদপুরে ইলিশের দাম বেশি হওয়ার কারণ। তিনি বলেন, নোনা পানির ইলিশে রুপালি রঙের সঙ্গে লালচে আভা থাকে। আর চাঁদপুরের মিষ্টিপানি বা নদীর ইলিশের রঙ চকচকে রুপালি হয়। এটি খেতেও অন্য ইলিশ থেকে বেশ স্বাদ। তিনি বলেন চাঁদপুরেই একমাত্র পদ্মার তাজা ইলিশ পাওয়া যায়, তিন নদীর মোহনার মিঠা পানির ইলিশের স্বাদের কথা জগত জোড়া বিখ্যাত।

এত কিছুরপরও দাম কিছুটা চড়া শিকার করলেন সমিতির এ কর্মকর্তাও।

তিনি বলেন, নদীতে এখন আর আগের মতো ইলিশ নেই। ভরা মৌসমে আগে এ মোকামে প্রতিদিন ৬ হাজার থেকে ১০ হাজার মণ ইলিশের কেনা বেচা হতো। এখন সেখানে ১শ থেকে ৫শ মণ ইলিশও আসে না।

নদীতে ইলিশ কমে যাওয়ার ব্যাপারে ইউসুফ বঙ্গবাসী বলেন, কল-কারখানার বর্জ্যের কারণে দিন দিন নদী দূষিত হচ্ছে। এ দূষণযুক্ত পরিবেশে মাছ প্রজনন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে।

অপরদিকে প্রজনন মৌসমে মা ইলিশ শিকারের কারণেও নদীতে ইলিশ কমে যাচ্ছে।

ইলিশের দামের ব্যাপারে দুপুরে জেলার হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী বাজারে গিয়ে দেখা যায় সেখানেও একই অবস্থা। জেলেরা মাছ ধরে নিয়ে এসে আড়তদারদের কাছে নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করছে। পরে আড়তদাররা চড়া দামে বিক্রি করছে খুচরা বাজারে।

জেলে আবুল কালাম বলেন , নদীতে ইলিশ কম। তাই জালে যা আসে তার দাম বেশিই।

আমতলী ঘাটের নৌকার মহাজন রাসু মিয়া হালদার বলেন, সারাদিনে ১০ জনে মিলে ২০ হালি ইলিশ ধরে ৫ হাজার টাকা বিক্রি করেছি। ভরা মৌসুমেও যদি এ অবস্থা হয় তাহলে আমরা কিভাবে বেঁচে থাকি? (বাংলানিউজ)

বার্তা কক্ষ
৮ সেপেটম্বর,২০১৮

Share