পদ্মা–মেঘনার সুস্বাদু রুপালি ইলিশের জন্য খ্যাত চাঁদপুরকে বলা হয় ‘ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর’। আর এই চাঁদপুরে একটি রুপালি ইলিশ বিক্রি হলো ৮ হাজার ৮০০ টাকায়।
চাঁদপুর মৎস্য আড়তে পদ্মা-মেঘনা নদীর সুস্বাদু একটি রুপালি ইলিশের ওজন ২ কেজি ২০০ গ্রামের ইলিশটি ৪০০০ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে ৮ হাজার ৮শ’ টাকায়। এটি ক্রয় করেন শহরের এক ব্যবসায়ী কবির খান। সে তার ছোট স্ত্রী দীপুর জন্য এ মাছটি শখ করে তাকে উপহার দিতে কিনেছেন বলে তার মনের কথা জানান।
চাঁদপুর নৌ-সীমানায় ইলিশের ব্যাপক আকাল চলছে এখন। এখন পুরো ভরা মৌসুমেও চাঁদপুর মাছ ঘাটে আশানুরুপ ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না।
২ কেজি ও ২ কেজি ১০০ গ্রাম ওজনের এমনই সাইজের ৪টি ও বিভিন্ন সাইজের ৪টি ইলিশসহ মোট ৮টি ইলিশ নিয়ে গত ৩দিন যাবত মাছঘাটে বসে আছেন ওই বাজারের বিক্রেতা মোখলেছ বেপারী। বসে বসে সময় পার করলেও তার ভাগ্যে মিলছে না বেশী দাম দিয়ে সাহসিকতার সাথে ইলিশ ক্রয় করার মত ইলিশের ক্রেতা।
ইলিশ বিক্রেতা মোখলেছ চাঁদপুর টাইমসকে জানান,’শনিবার থেকে বড় আকারের ৮টি ইলিশসহ বিভিন্ন আকারের আরও কিছু ইলিশ জেলেদের কাছ থেকে ক্রয় করেছি। কিন্তু তিনদিন ধরে সেগুলো বিক্রি হচ্ছেনা। লোকজন এসে দর-দাম করে চলে যায়। এতে মাছগুলো অনেকাংশে নরম হয়ে যাচ্ছে। উপযুক্ত দাম দিয়ে ক্রয় করে কেউ নিচ্ছেনা।
১০ জুলাই সোমববার দেড় কেজি ওজনের ইলিশ ৩ হাজার ৫০০ টাকায়, এক কেজি ২০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৩ হাজার ১০০ টাকা, এক কেজি ওজনের ইলিশ ২ হাজার ৫০০ টাকা, ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৮০০ টাকা এবং ছোট আকারের ইলিশ ৭০০ থেকে ৯ শ’ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে।
মৎস্য বনিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শবেবরাত সরকারের মৎস্য আড়তের ম্যানেজার শামীম হোসাইন বেপারী বলেন, ‘নিষিদ্ধ সময়ে অসাধু জেলেরা বড় ইলিশসহ জাটকা ধরে ফেলায় এখন ইলিশের ভর মৌসুমে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছেনা।
মৎস্য আড়তের হুমায়ুন কবির বলেন, ‘মৌসুম না থাকা সময়েও ইলিশের এত ক্রাইসিস ছিলনা। এখন আমদানী কম এজন্য ইলিশ অনেক বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।’
ঢাকা থেকে ইলিশ ক্রয় করতে আসেন শিল্পী চৌধুরী চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘আমি চাঁদপুরের মেয়ে, ঢাকায় থাকি। চাঁদপুর বেড়াতে এলে প্রতিবারই ইলিশ কিনতে এই মাছ ঘাটে আসি। কিন্তু এবার মাছের যে আকাশচুম্বী দাম, এতে আমি হতবাক। ২ কেজির বড় ইলিশ ৪ হাজার ৬০০ টাকা চাওয়ায় আমি আর সাহস করিনি ক্রয় করতে। পরে বাধ্য হয়ে ২ হাজার ৩০০ টাকা করে এক কেজির ৮টি ও আড়াই হাজার টাকা করে সোয়া কেজি সাইজের আরও ৮টি ইলিশ ক্রয় করেছি।’
এ বিষয়ে চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শবেবরাত সরকার বলেন, ‘ইলিশের মৌসুম প্রায় আড়াই মাস হতে চলছে, কিন্তু এ মাছ ঘাটে প্রতিদিন গড়ে ৮ থেকে ১০ মণের বেশি ইলিশ আসছে না। অথচ গত বছরও এসময় প্রতিদিন গড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ মণ পর্যন্ত ইলিশ আমদানী ও বিক্রি হয়েছে।’
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মেহেদী হাসান জানান, আমরা বলতে পারছিনা এই ভরা মৌসুমে ইলিশের এত সংকট ও আকাশচুম্বী দাম কেন তার রহস্য খুঁজে পাচ্ছি না।
জেলেদের জিজ্ঞেস করলে তারা বলে, নদীতে আশানুরুপ ইলিশ পাইনা। তাইতো এতো দাম ইলিশের।
স্টাফ করেসপন্ডেট, ১০ জুলাই ২০২৩