ইলিশের গায়ে চিহ্ন এঁকে উজানে ছাড়ছে ভারত

ইলিশের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ ও উৎপাদন বাড়ানো যায় কি-না সেই কৌশল জানতে ইলিশের গায়ে চিহ্ন দিয়ে ফারাক্কায় গঙ্গা নদীর উজানের দিকে সেগুলোকে ছেড়ে দিচ্ছে ভারতের সেন্ট্রাল ইনল্যান্ড ফিশারিজ রিসার্চ ইনস্টিটিউট।

ফরাক্কায় গঙ্গার মূল ধারার যেসব এলাকায় ইলিশ ডিম দেয়, সেসব এলাকা সংরক্ষণ করাই এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। সেই সঙ্গে ইলিশ উত্তরে নদীপথ বেয়ে কত দূর যেতে পারে, সেটাও দেখতে চায় ভারতীয় এই সংস্থা। যে কারণে ছোট ছোট ইলিশ মাছ ধরে, গায়ে চিহ্ন দিয়ে তাকে খুব যত্নের সঙ্গে বাঁচিয়ে রেখে গঙ্গার উত্তর দিকে নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।

ভারতের সেন্ট্রাল ইনল্যান্ড ফিশারিজ রিসার্চ ইনস্টিটিউট বলছে, সেই চিহ্নিত ইলিশ যদি নদীর উত্তর দিকের কোনও জায়গায় কোনও মৎস্যজীবীর হাতে পড়ে, তা হলে ইলিশের গতিবিধি বোঝা যাবে। সে জন্য মৎস্যজীবীদের চিহ্নিত ইলিশ প্রতি ২০০ টাকা করে পুরস্কারের ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে।

ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তা সঞ্জীবকুমার বলেন, ইতোমধ্যে প্রায় আড়াইশ’ এমন চিহ্নিত ইলিশ ধরা পড়েছে গঙ্গার উজানের বিভিন্ন এলাকায়।

বিশ্বের যে ১১টি দেশে ইলিশ উৎপাদন হয়, বাংলাদেশ তার মধ্যে শীর্ষস্থানে রয়েছে। মাত্র ৪ বছর আগে বাংলাদেশ ইলিশের জোগান দিতো বিশ্বের ৬৫ শতাংশ। এখন তা বেড়ে হয়েছে ৮৬ শতাংশ। সেই তুলনায় ইলিশ উৎপাদনে ভারত ছিল দ্বিতীয় স্থানে। ৫ বছর আগে ভারতে ইলিশের উৎপাদন ছিল বিশ্বের মোট উৎপাদনের ২৫ শতাংশ। সেই উৎপাদন বর্তমানে কমে দাঁড়িয়েছে ১০ শতাংশে।

ইলিশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ছোট ইলিশ ধরার ফলে ভারতে ইলিশের এই সংকট তৈরি হয়েছে। তাই নমামী গঙ্গে প্রকল্পের মাধ্যমে ইলিশ নিয়ে ফারাক্কা থেকে এলাহাবাদ পর্যন্ত পরীক্ষা নিরীক্ষা বাড়াতে চাইছে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার।

সেন্ট্রাল ইনল্যান্ড ফিশারিজ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ফারাক্কার পর থেকে উজানে ইলিশের প্রজনন এখন প্রায় বন্ধ। ফারাক্কা ব্যারাজ টপকে গঙ্গার উজানে ইলিশ আর ঢুকতে পারছে না। অথচ ফারাক্কা ব্যারাজ চালু হওয়ার আগে এলাহাবাদ পর্যন্ত প্রচুর ইলিশ পাওয়া যেত। নদীর উজানে ব্যাপক পলি, নদী দূষণ এবং নির্বিচারে ছোট ইলিশ ধরার ফলে ফারাক্কায় ইলিশের পরিমাণ একেবারে তলানিতে ঠেকেছে। ফারাক্কায় গঙ্গায় নির্দিষ্ট এলাকাগুলোতে ডিম পাড়ার উপযোগী করে তুলে সংরক্ষণ করে গঙ্গায় ইলিশের সংখ্যা বাড়ানোর এই চেষ্টা।

ফারাক্কায় ইতোমধ্যে ২৫০ মিটার লম্বা ও প্রায় ২৬ মিটার চওড়া একটি নতুন নেভিগেশনাল লকগেট তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। পুরোনো লকগেটটি চালু হয় ১৯৭৮ সালে। তারপর থেকেই উজানে ইলিশের যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন, নতুন নেভিগেশনাল লকগেট চালু হয়ে গেলে উজানে ইলাহাবাদ পর্যন্ত ইলিশের জোগান বাড়বে। ডিম পাড়ার সম্ভাবনাও তৈরি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সেন্ট্রাল ইনল্যান্ড ফিশারিজ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মৎস্য বিশেষজ্ঞ এ কে সাহু জানান, ‘ফারাক্কায় ইলিশ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয়েছে। ডাউন স্ট্রিমে গঙ্গা থেকে ইলিশ ধরে বিশেষ ব্যবস্থায় ট্যাগিং করে তা ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে আপ স্ট্রিমে। তার গতিবিধির ওপর নজর রাখা হচ্ছে। এতে উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হবে।’

সূত্র: আনন্দবাজার।

Share