জাতীয়

নিষেধাজ্ঞা মানলে ইলিশের উৎপাদন হতো দ্বিগুণ

বাংলাদেশের ‘ইলিশ’। বিশ্বের প্রায় ৮০ শতাংশ ইলিশের উৎপাদন হয় এ দেশে। গত অর্থবছরে প্রায় ৫ লাখ ৫৫ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ উৎপাদন হয়েছে। এ বছর তা ৭ লাখ মেট্রিক টনে পৌঁছানোর সম্ভাবনা দেখছে মৎস্য অধিদফতর। সরকারের নিষেধাজ্ঞা যথাযথ মেনে ইলিশ না ধরা হলে উৎপাদন হতো দ্বিগুণ।

মা-জাটকা ইলিশ ধরা প্রতিরোধে ‘নৌ-পুলিশ’ গঠন করা হয়েছে। ২০১২ সালের ১৩ নভেম্বর থেকে মা ও জাটকা ইলিশ ধরার সরঞ্জাম এবং জেলেদের আটক করছে নৌ-পুলিশ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারীদের আটকসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে সফলতা এলেও মা-জাটকা ইলিশ ধরা দিন দিন বাড়ছে। যা নৌ-পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের তথ্য-উপাত্তেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। তবে দেশে এক যুগে ইলিশের উৎপাদন দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে।

এ বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী, মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক-বিজ্ঞানী, অধিদফতরের ইলিশ ব্যবস্থাপনা পরিচালক, জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতির মহাসচিবসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন এই প্রতিবেদক।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম জানান, ইলিশ রক্ষা, উৎপাদন বাড়াতে ও জাটকা নিধন বন্ধে কাজ চলছে। ইলিশের আকার ও স্বাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারের নিষেধাজ্ঞা মানা হলে বিশ্বের ৯৫ শতাংশ ইলিশ বাংলাদেশে উৎপাদন হবে। সরকার জেলেদের উন্নয়ন ও সহযোগিতায় বিনা মূল্যে খাদ্যসামগ্রীসহ প্রয়োজনীয়তা পূরণ করছে।

১৪ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন মা ইলিশ ধরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ রয়েছে। কিন্তু, নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও জেলেরা মা-ইলিশ ধরতে নদী ও সমুদ্রে নামছে। তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা ও বাধা দেয়া সমাজের সমবেত মানুষের দায়িত্ব।

মৎস্য অধিদফতরের ইলিশ ব্যবস্থাপনা শাখার পরিচালক মাসুদ আরা মমি জানান, বাংলাদেশে ইলিশের বিপ্লব বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে। ১০ বছরে ইলিশের উৎপাদন প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। তাছাড়া যদি সরকারের নিষেধাজ্ঞা যথাযথ মেনে মা ও জাটকা ইলিশ নিধন বন্ধ করা হয়, তাহলে ইলিশে ভরে উঠবে দেশ। একটি ইলিশ দেড় থেকে ২৩ লাখ ডিম পাড়ে। এত পরিমাণ ডিমের মধ্যে যদি মাত্র ১০ শতাংশ ডিম বাঁচে তা হলে প্রায় ৪০ হাজার কোটি ইলিশ পোনা বা জাটকা পাওয়া যাবে। যদি প্রজনন ক্ষেত্রে মা-ইলিশকে ৫৫ থেকে ৬০ শতাংশ ডিম ছাড়ার পরিবেশ নিশ্চিত করা যায় তাহলে ইলিশে ভরে উঠবে দেশ।

নৌ-পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া) ফরিদা পারভীন জানান, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যদি কেউ মাছ ধরতে যায়, তাহলে মৎস্য সুরক্ষা ও সংরক্ষণ আইনের ৫ ধারায় আইনগত ব্যবস্থা নেবে নৌ-পুলিশ। ক্রয়-বিক্রয় বা বরফের মাধ্যমে মজুদের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অপরাধী ও বরফকলের মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন নৌ-পুলিশের ডিআইজি আতিকুল ইসলাম।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউট ও ওয়ার্ল্ড ফিশ বাংলাদেশ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর এ পর্যন্ত ধরা পড়া ইলিশের ৭০ শতাংশের ওজন ৫৫০ থেকে ১ হাজার ২৫০ গ্রাম। এর মধ্যে ৫৫০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ হচ্ছে ৫৫ শতাংশ এবং ১ কেজি থেকে ১ কেজি ২৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে ১৫ শতাংশ। গত বছর ইলিশের গড় ওজন ছিল ৮৭০ গ্রাম। এবার তা ৯১৫ গ্রামে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশ জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতির মহাসচিব ফণী ভূষণ মালো মানিক জানান, কারেন্ট জালে যারা ইলিশ ধরছে তারা সংঘবদ্ধ। মনে রাখতে হবে, কোনা জাল, ছন্দি জাল এবং ঘুলন্টি জাল দিয়ে নৌ-পুলিশ তথা প্রতিরোধকারী সংস্থার চোখ ফাঁকি দিয়ে ইলিশ আহরণ করা সম্ভব নয়। এসব জাল ফেলতে-উঠাতে দীর্ঘ সময় লাগে। কারেন্ট জাল মুহূর্তেই ফেলা এবং উঠানো যায়।

বার্তা কক্ষ,২৫ অক্টোবর ২০২০

Share