ইব্রাহীম (আ.) যেভাবে আল্লাহকে খুঁজে পেয়েছিলেন

আল কোরান:

যখন ইবরাহিম তার পিতা আজরকে বলল, ‘আপনি কি প্রতিমাগুলোকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করেন?’ আমি তো দেখতে পাচ্ছি, আপনি ও আপনার সম্প্রদায় প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় নিপতিত। (৭৫) এভাবেই আমি ইবরাহিমকে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর পরিচালনব্যবস্থা দেখাতে লাগলাম, যাতে সে নিশ্চিত বিশ্বাসীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। (৭৬) অতঃপর রাতের অন্ধকার যখন তাকে আচ্ছন্ন করল তখন সে একটি তারকা দেখে বলল, ‘এটাই আমার প্রতিপালক।’ অতঃপর যখন তা অস্তমিত হলো তখন সে বলল, ‘আমি অস্তগামীদের ভালোবাসি না।’ (৭৭) অতঃপর যখন সে চন্দ্রকে সমুজ্জ্বলরূপে উদিত হতে দেখল তখন বলল, ‘এটা আমার প্রতিপালক।’

অনন্তর যখন তা অস্তমিত হয়ে গেল, সে বলল, ‘আমাকে আমার পালনকর্তা সৎ পথ প্রদর্শন না করলে আমি অবশ্যই পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব।’ (৭৮) অতঃপর যখন সে সূর্যকে দীপ্তিমানরূপে উদিত হতে দেখল তখন বলল, ‘এটা আমার প্রতিপালক, এটা সর্ববৃহৎ।’ যখন এটাও ডুবে গেল তখন সে বলল, ‘হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা যাকে আল্লাহর শরিক (অংশীদার) করো, আমি ওসব থেকে মুক্ত।’ (৭৯) আমি একনিষ্ঠভাবে ওই সত্তার দিকে মুখ ফিরাচ্ছি, যিনি নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল সৃষ্টি করেছেন আর আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই। (সুরা আনআম : ৭৪-৭৯) তাফসির : ইবরাহিম (আ.)-এর জাতি গ্রহ, নক্ষত্র ও বিভিন্ন মূর্তির পূজা করত। কিন্তু যিনি মানুষের প্রতিপালক, সুখ-দুঃখের মালিক, সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী তিনি কোনো পাথরের মূর্তি বা কাঠ-খড় দিয়ে নির্মিত কোনো পুতুল হতে পারেন না বলেই ইবরাহিম (আ.)-এর বিবেক তাঁকে জানিয়েছিল। ক্ষয়িষ্ণু, ক্ষণস্থায়ী ও অস্তগামী কেউ প্রভু হতে পারেন না বলেই ইবরাহিম (আ.)-এর মুক্তচিন্তা তাঁকে এসব থেকে উদাসীন করেছে। মূলত বৈচিত্র্যময় প্রকৃতিতেই স্রষ্টার বিস্ময়কর নিদর্শন লুকায়িত আছে, সুস্থ-বিবেকবান ও বিশুদ্ধ চিন্তাশীলের কাছে তা খুব সহজেই ধরা দেয়। আলোচ্য আয়াতগুলোতে বিশেষ ভঙ্গিমায় হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর একটি তর্কযুদ্ধ উল্লেখ করা হয়েছে, যা তিনি প্রতিমা ও গ্রহ-নক্ষত্রের বিরুদ্ধে নিজ সম্প্রদায়ের সঙ্গে করেছিলেন। এর মাধ্যমে তিনি তাদের সবাইকে একত্ববাদের শিক্ষা দিয়েছেন। তাঁর বিশুদ্ধ চিন্তা আল্লাহকে খুঁজে পেতে সাহায্য করেছিল।

‘আজর’ কি ইবরাহিম (আ.)-এর পিতার নাম? হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর পিতার নাম ‘আজর’- এ কথাটি সুপ্রসিদ্ধ। কোরআনের শব্দচয়ন থেকেও তা-ই বোঝা যায়। বেশির ভাগ ইতিহাসবিদের অভিমতও তা-ই। তাঁরা তাঁর নাম ‘তারেখ’ বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁদের মতে, ‘আজর’ তাঁর উপাধি। তবে ইমাম রাজি (রহ.) ও কিছুসংখ্যক আলেমের মতে, ইবরাহিম (আ.)-এর পিতার নাম ‘তারেখ’। তাঁর চাচার নাম ‘আজর’ ছিল। তাঁর চাচা নমরুদের মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করার পর মুশরিক হয়ে যান। আর চাচাকে পিতা বলা আরবি ভাষারীতিতে সাধারণভাবে প্রচলিত। ইমাম রাজি (রহ.)-এর অভিমত গ্রহণ করা হলে বলা যায় যে উল্লিখিত রীতি অনুসারেই আয়াতে ‘আজর’কে ইবরাহিম (আ.)-এর পিতা বলা হয়েছে।

পরিবর্তন ও সংশোধনের কাজটা শুরু করতে হবে নিজ পরিবার থেকেই ‘আজর’ হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর পিতা হোক কিংবা চাচা সর্বাবস্থায়ই তিনি ছিলেন বংশগত দিক দিয়ে একজন সম্মানিত ব্যক্তি। ইবরাহিম (আ.) সর্বপ্রথম নিজ গৃহ থেকেই সত্য প্রচারের কাজ শুরু করেছেন। মহানবী (সা.)-কেও অনুরূপ নির্দেশ দিয়ে বলা হয়েছে, ‘তোমার নিকট আত্মীয়দের সতর্ক করো।’ (সুরা শুয়ারা : ২১৪) অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা নিজেদের ও তোমাদের পরিবার-পরিজনদের জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করো।’ (সুরা তাহরিম : ৬) কাজেই পরিবর্তন ও সংশোধনের কাজটা শুরু করতে হবে নিজ থেকে। নিজ পরিবার ও বংশ থেকে। (তাফসিরে মা’আরেফুল কোরআন ও ইবনে কাছির অবলম্বনে)

।। ১২:২০ এএম, ৩০ নভেম্বর ২০১৫, সোমবার

ডিএইচ

Share