রাত সাড়ে ৮টা, বনানীর ২৭ নম্বর সড়কের কে ব্লকের ৯নং ভবনের ‘আত্তিন’ নামের একটি এরাবিয়ান রেস্টুরেন্টে। ভেতরে ঢুকতেই দেখা গেল নিচতলার কক্ষগুলো ধোঁয়ায় অন্ধকার। ১৮-৩০ বছর বয়সী নারী পুরুষরা আয়েশিভাবে পায়ে পা তুলে আওয়াজ করে পান করছেন শিশা। কেউ দেখলে বিশ্বাসই করবেন না কিছুক্ষণ আগেই এখানে শেষ হয়েছে প্রথম রোজার ইফতারের আয়োজন।
ইফতার শেষে খাবারের ডিশগুলো তখনো পুরোপুরি সরিয়ে ফেলতে পারেননি রেস্টুরেন্টটির কর্মীরা। এরই মধ্য বেশ কয়েকজন দেশি-বিদেশি তরুণ-তরুণী টেবিলে সিগারেটের প্যাকেট ও জুস রেখে বসে গেছেন শিশার আসরে।
এরাবিয়ান এই রেস্টুরেন্টের ভেতরে ঢুকতেই এগিয়ে আসেন আনিসুর রহমান নামের এক কর্মী। তার কাছে সেহরির মেন্যু চাইলে তিনি জানান, ‘স্যার, মেন্যু নেই, শেষ হয়ে গেছে।’
তবে তিনি বলেন, ‘সাধারণত আমাদের এখানে যেসব খাবার পাওয়া যায়, সেহরির সময় সেগুলোই মিলবে। তবে ১২০০ টাকার একটি মেন্যু আছে, তাতে শিশার সঙ্গে স্যান্ডউইচ ও সফটড্রিংকস পাওয়া যাবে।’
রমজানে সেহরির সময় শিশার মেন্যু কেন জানতে চাইলে আনিসুর বলেন, ‘আসলে সেহরির জন্য এই মেন্যু না। এখানে শিশা সব সময়ই পাওয়া যায়। যারা সেহরির সময় শিশা সেবনের জন্য আসবেন, এই মেন্যুটা তাদের জন্যই।’
ইফতারের সময়ও কি শিশা পাওয়া যায় কিনা জানতে চাইলে না সূচক মাথা নাড়েন এই রেস্টুরেন্ট কর্মী। যদিও ইফতার শেষ হওয়ার মাত্র ঘণ্টাখানেক পর ওই রেস্টুরেন্টে গিয়ে শিশার ধোঁয়া আর ফ্লেভারের ভরপুর গন্ধ পাওয়া যায়।
এরাবিয়ান ওই রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থাপনা বিভাগের কারো সঙ্গে কথা বলতে চাইলে আনিসুর বলেন, ‘ব্যবস্থাপনা বিভাগ বা পরিচালনা পর্ষদের কেউই বর্তমানে রেস্টুরেন্টে নেই। আমাদের হেল্পলাইন নাম্বার নিয়ে যান, যে কোনো প্রয়োজনে ওই নাম্বারে যোগাযোগ করতে পারেন।’
আনিসের দেয়া মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করলে ফোন ধরেন জিলানী নামে এক কর্মকর্তা। সেহরির মেন্যুতে শিশার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘আসলে আমাদের পরিচালনা পর্ষদ থেকে যে কর্মকর্তাকে মেন্যু তৈরির নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল, তিনি ওই মেন্যুতে শিশার কথা উল্লেখ করেছেন। এটা ভুলবশত হয়েছে। আমরা প্রায় ১৫ হাজার লিফলেট ছাপিয়েছিলাম। সেগুলো বাতিল করে মেন্যু থেকে শিশা বাদ দিয়ে পরবর্তীতে নতুন করে আবার লিফলেট করা হয়েছে।’
যদিও সেহরির মেন্যুতে শিশার কথা উল্লেখ করে আত্তিন এরাবিয়ান রেস্টুরেন্টের ওই লিফলেটের ছবি এখন ফেসবুকে ভাইরাল। আত্তিনের ফেসবুক পেজ থেকে ওই লিফলেটের ছবি মুছে ফেলা হলেও ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা পেজে একের পর এক মন্তব্য করে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করে চলেছেন।
অনেকেই তাদের মন্তব্যে ওই রেস্টুরেন্ট বন্ধ করার দাবিও জানিয়েছেন। যদিও সেসব মন্তব্যের প্রতিউত্তরে আত্তিনের পেজের এডমিন লিফলেটটির জন্য দুঃখ প্রকাশ করে এর দায়ভার গ্রাফিকস ডিপার্টমেন্টের উপর চাপিয়ে দেন।
এডমিনের ওই পোস্টে বলা হয়, শিশাসহ যে মেন্যুটি সেটি ছিল রমজান মাসের আগের। কিন্তু যে কোনোভাবে সেটি রমজানের নতুন অফারের লিফলেটের সঙ্গে মিলিয়ে গেছে। আমাদের সেহরির আসল মেন্যু ফেসবুক পেজে নতুন করে পোস্ট করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ‘শিশা’ একটি ফারসি শব্দ যার বাংলা অর্থ হলো হুক্কা বা হুক্কার মাধ্যমে সেবনযোগ্য তামাক। এরই মধ্যে বাংলাদেশে মাদকের নতুন আইনের খসড়ায় শিশাকে মাদকদ্রব্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
মাদকবিরোধী অভিযানে অংশ নেয়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এক কর্মকর্তা জানান, রাজধানীর গুলশান, বনানী, বেইলি রোড ও ধানমন্ডির মতো অভিজাত এলাকায় শিশাবার এখন অল্পবয়স্ক ছেলেমেয়েদের সময় কাটানোর প্রিয় জায়গা। শিশা সেবনে ছেলেমেয়েদের শারীরিক ক্ষতি হচ্ছে। সামাজিক ক্ষতির দিকটিও কম নয়।
বার্তা কক্ষ