গত ১৮ ডিসেম্বর ভোররাতে টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমার ময়দানে উগ্র সাদপন্থীদের, নৃশংস ও বর্বর হামলার তীব্র নিন্দা ও তাদের সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবিতে উলামা পরিষদ চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (২১ডিসেম্বর) শেষ বিকেলে ফরিদগঞ্জ থানা ফটকে এ গনজামায়েত ও স্মারকলিপি প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন ফরিদগঞ্জের উলামা মাশায়েখেরা। বক্তব্য শেষে ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ শাহ্ আলমের কাছে
স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
মানববন্ধনে উলামা পরিষদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন, ফরিদগঞ্জ তুলাতলি জামে মসজিদের খতিব মুফতী আনোয়ার হোসেন আমিনি, মাওলানা শাহাদাত হোসেন তপদার, তালিমুল নিছা মহিলা মাদ্রাসা মুহতামিম মাও: আকরাম হোসেন, লাউতলি মহিলা মাদ্রাসার মুহতামিম মুফতি আনোয়ার প্রমুখ।
এসময় মানববন্ধনে বলেন, গত ১৮ ডিসেম্বর গভীর রাতে আমলরত একটি মাদ্রাসায় সা’দপন্থীদের হামলায় চারজন তাবলীগে অংশগ্রহণকারী নিহত হন এবং বহু মানুষ আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। “সা’দপন্থীদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি, মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও শান্তি বজায় রাখতে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।”
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করেন, ২০১৮ খ্রিঃ এর ১ ডিসেম্বর সারা বিশ্বের কাছে সমাদৃত ঐতিহ্যবাহী টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমার ময়দানে প্রকাশ্য দিবালোকে ভারতের তাবলীগ জামাতের মুরুব্বী সাদ কান্ধলবী সমর্থিত সাদপন্থী নামে পরিচিত সন্ত্রাসী বাহিনী ময়দানের গেইট ভেঙ্গে এক নারকীয় তান্ডব চালিয়ে শত শত মুসল্লী ও ওলামায়ে কেরামদের রক্তাক্ত জখম করে। তখন আপাময় জনসাধারনের পক্ষ থেকে ঢাকা সহ দেশের ৬৪ জেলায় বিক্ষোভ মিছিল মিটিং সহ নানা কর্মসূচির মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবি জানানো হয়। কিন্তু তৎকালীন সরকারের ভিতরে থাকা প্রভাবশালী কিছু নেতা ও দূর্নীতিগ্রন্থ আমলাদের মদদে তারা ছাড় পেয়ে যায় এবং পূনর্বাসিত হয়। উক্ত ঘটনার পর থেকে তারা আরো বেশি বেপরোয়া ও উগ্র হয়ে উঠে। এমনকি দেশের বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসী কার্যক্রম অব্যাহত রাখে। তারই ধারাবাহিকতায় গত কয়েকদিন ধরে সাদপন্থিদের শীর্ষ নেতারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ্য হুকমি ধমকি দিয়ে ২০ ডিসেম্বর টঙ্গী ময়দান জোর-জবর দখল করার ঘোষনা দেয়। বিগত ৪ নভেম্বর ২০২৪ খ্রিঃ এ মাননীয় স্বরাষ্ট উপদেষ্টার কার্যালয়ে উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিন্ধান্ত গৃহীত হয়। উক্ত সিন্ধান্ত মোতাবেক সাদপন্থিদেরকে আগামী ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ খ্রিঃ এ মাঠ বুঝিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তারপূর্ব পর্যন্ত ইজতেমা প্রস্তুতি মূলক কাজ এবং মাঠের জিম্মাধারী শুরায়ী নেযামের (শুরাপন্থিদের) তত্ত্বাবধানে চলবে এ মর্মে সিন্ধান্ত গৃহিত হয়। সরকারী এ সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে এবং ছাত্রদের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজীস আলমের সাথে দেওয়া শান্তিচুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে পূর্বকল্পিতভাবে রাত ৩.৪০ এ ঘুমন্ত ও পাহারায় দায়িত্বরত মুসল্লী, ওলামায়ে কেরাম ও টঙ্গী টিনসেড মাদ্রাসার ছোট ছোট অবুঝ ছাত্রদের উপর নৃশংস ও নেক্কারজনক হামলা চালিয়ে ৪ জনকে হত্যা ও শতাধিক মুসল্লীদের ঘোরতর আহত করে যাহা প্রিন্ট ও ইলেক্টনিক মিডিয়ায় সম্প্রচারিত হয়। আমরা উক্ত ন্যাক্কারজনক হামলার তিব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
আহতদের মধ্যে অত্র ফরিদগঞ্জ থানার ২ জন মুসল্লী ও রয়েছে। সাদপন্থিদের এহেন ঘৃন্য কাজে পুরো বিশ্ববাসি ও মুসলিম জাতি হতবাক হয়ে যায় এবং এই ঘৃন্য ও নৃশংস বর্বর হামলার নিন্দা জানায়। সাদপস্থি নামক উগ্র সন্ত্রাসীদের নিষিদ্ধ করার জন্য দেশের শীর্ষস্থানীয় ওলামায়ে কেরাম, ছাত্র সমন্বয়ক, বুদ্ধিজিবি ও আপাময় জনসাধারণের পক্ষ থেকে জোরালো দাবি উঠে। একজন ভিনদেশী (ভারতীয়) লোকের পালিত সন্ত্রাসী বাহিনী স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে রক্তপাত ও বিশৃঙ্খলা তৈরী করে দেশকে অস্থিতিশীল করার বারবার ষড়যন্ত্র করবে তা হতে দেয়া যায়না।
আমরা আরো উদ্বিগ্ন যে, উগ্র সন্ত্রাসী সাদপন্থিদের অত্র উপজেলায় কিছু সদস্য যারা প্রকাশ্যে ও গোপনে শলাপরামর্শ করত উগ্র ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মদদ ও সহযোগী অনুচর হিসেবে কাজ করে আসছে। এমনকি তারা ২০১৮ খ্রিঃ এ টঙ্গির ময়দানে হামলার সাথেও প্রত্যক্ষ ও পরক্ষভাবে জড়িত ছিলো এবং গত ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রিঃ এ ময়দানের হামলা করীদের মধ্যে অত্র থানার ১৫ থেকে ২০জন সাথি হামলা কারীদের সাথে স্ব-শরীরে উপস্থিত ছিলো।
অত্র উপজেলা সহ সারা দেশে তাদের সকল ধরনের প্রচার প্রসার ও দাওয়াতী কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা না হলে অদূর ভবিষ্যতে দেশে তাদের একটি বিশাল উগ সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে উঠবে ও দেশ ব্যাপী হাঙ্গামা ও পাড়ায় পাড়ায়, মসজিদ মহল্লায় অনাকাঙ্খিত ঘটনা ও এরকম আরো নিন্দনীয় হামলা সংঘটিত হওয়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে।
আমরা ফরিদগঞ্জের ওলামায়ে কেরাম ও সর্বস্তরের শান্তিপ্রিয় মুসল্লীগন আপনার মাধ্যমে সরকারের সর্বোচ্চ মহল পর্যন্ত ভারতীয় এ সাদপন্থি উগ্র- সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদী গোষ্ঠির সকল দাওয়াতী কার্যক্রম আমাদের উপজেলা সহ পুরোদেশে নিষিদ্ধের জোরালো দাবি জানাচ্ছি।
প্রতিবেদক: শিমুল হাছান, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪