ইউপি চেয়ার‌ম্যান দেলশাদ আলী দেওয়ান এখন রেডিও মেকার

দেলশাদ আলী দেওয়ান (৭০) ছিলেন রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার দেলুয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন ঠিক ওই সময়ে দেলুয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হোন দেলশাদ আলী দেওয়ান। এ কারণে অনেকেই তাকে শেখ সাহেবের চেয়ারম্যান বলে ডাকেন।

ক্ষমতার পালা বদল ও সময় পরিবর্তন হওয়ার সাথে সাথে এই দেলশাদ আলীর রাজনৈতিক জীবনেও ভাটা পড়ে। বর্তমানে তিনি রেডিও এবং টেলিভিশন মেরামতের কাজ করছেন। আর এই কাজের মাধ্যমেই পরিবার পরিজন নিয়ে তিনি সংসার চালিয়ে যাচ্ছেন।

ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ার ছেড়ে দেলশাদ আলী দেওয়ানের এখন ঠিকানা দুর্গাপুরের হাট কানপাড়া বাজার। ওই বাজারেই একটি খুপরি ঘরই এখন তার জীবিকা নির্বাহের শেষ ঠিকানা।

দেলশাদ আলী দেওয়ান জানান, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আর্দশকে ধারন করে তিনি ছাত্র জীবন থেকেই ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি সম্মুখ যুদ্ধে অংশ না নিলেও এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের সাথেই ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে নিহত জানিক মাষ্টারের সহযোগী ছিলেন তিনি। অথচ মুক্তিযুদ্ধে অংশ না নিয়েও এখন অনেকেই মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন বলেও তিনি আক্ষেপ করেন।

১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করার পর রাজনীতিতে আরো বেশি সক্রিয় হোন এবং দুর্গাপুরের দেলুয়াবাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৭৩ সালে জাতীয় সংসদের প্রথম নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেন। এরপর উত্তরাঞ্চলের মধ্যে বগুড়া ও রাজশাহী জেলার মাত্র দুইটি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার দেলুয়াবাড়ি ইউনিয়নে ওই সময় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে দল মনোনীত প্রার্থী ছিলেন তিনি। নির্বাচনে পাশ করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হোন তিনি।

এর মধ্যে বঙ্গবন্ধুর সাথে নাটোর গণভবনে একাধিকবার সাক্ষাতের সুযোগ হয়েছে। এছাড়া রাজশাহীতে বঙ্গবন্ধু সরকারের মন্ত্রী পরিষদ সদস্য এএইচএম কামারুজ্জামান হেনার সাথে দলীয় সভায় একাধিকবার অংশ নিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যার পর তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রী খন্দকার মোশতাক ক্ষমতায় আসীন হোন। এরপর ইউনিয়ন পরিষদ ভেঙ্গে গেলে তিনিও আত্মগোপনে যান। পরবর্তিতে দেশের অবস্থা স্বাভাবিক হলে এলাকায় ফিরে আসেন।

এরপর তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ ১২টি মামলা হয়। মামলার ঘানি টানতে গিয়ে তাকে সহায় সম্বল হারাতে হয়। এ কারণে সংসারের হাল ধরতে গিয়ে তাকে বেছে নিতে হয় রেডিও টেলিভিশন মেরামতের কাজ। এখনও তিনি এই পেশার মাধ্যমেই জীবিকা নির্বাহ করছেন। দুর্গাপুরের হাট কানপাড়া বাজারে একটি খুপরি ঘরই এখন তার শেষ ঠিকানা।

১৯৯৬ থেকে ২০০১ ও ২০০৮ থেকে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলেও এই তার কেউ খোঁজ নেননি বলে জানান দেলশাদ আলী। চাটুকার ও হাইব্রীডদের চাপে তিনি এখন অনেকটাই কোনঠাসা। নির্বাচন আসলেই কেবল তার কদর বাড়ে। নির্বাচন পার হলে তার খোঁজ কেউ রাখেন না।

দেলশাদ আলী দেওয়ানের সাথে কথা বলে জানা যায়, ব্যাক্তি জীবনে তিনি ৪ ছেলে ও ৬ মেয়ের জনক। তিনি যখন অষ্টম শ্রেনীতে পড়াশুনা করতেন তখনই বিয়ে করেন। ১৯৬৯ সালে তিনি তৎকালীন বখতিয়ারপুর হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাশ করেন।

সত্তোর্ধ দেলশাদ আলী দেওয়ানের বর্তমান সরকারের কাছে আর কোন চাওয়া পাওয়া নেই। তার একটাই চাওয়া, বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করলেই তিনি তৃপ্ত হবেন বলে জানান।

নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১১:৫৯ পিএম, ০৩ ডিসেম্বর ২০১৭, রোববার
ডিএইচ

Share